বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গত ২৮ মার্চ গাইবান্ধার আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তার কর্মচারী পরিচয় দানকারী আতিকুর রহমান।
Published : 07 Apr 2023, 01:13 AM
অপহরণ, নির্যাতন ও অস্ত্রের মুখে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদিশা ওই মামলার বাদী আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন।
বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গত ২৮ মার্চ গাইবান্ধার আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তার কর্মচারী পরিচয় দানকারী আতিকুর রহমান।
বিদিশা বলেন, “আতিকুর রহমান আমার পিএস-এপিএস এরকম কিছুই ছিলেন না। সে আমার গাড়িচালকের ভাগ্নের পরিচয়ে আমার ঢাকার রেস্টুরেন্টে কাজ নেয়। সেখানে থালাবাটি পরিষ্কার করত। মূলত সে আমার রেস্টুরেন্টের কর্মচারী ছিল। এক পর্যায়ে তাকে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারের দায়িত্ব দেই। পরে তাকে ড্রাইভিং শিখিয়ে গাড়ি চালানোরও দায়িত্ব দেই। সে দীর্ঘদিন আমার গাড়ি চালিয়েছে।”
এক সময় আতিকুর গাইবান্ধায় একটি ইটভাটা নির্মাণ করার জন্য প্রস্তাব দিলে বিদিশা ওই প্রস্তাবে রাজি হন এবং তাকে ৬ কোটি টাকা দেন বলে জানান সংবাদ সম্মেলনে।
তিনি বলেন, “এ টাকার মধ্যে আমার এফডিআর, ঋণ ও অন্যের কাছে ধার নেওয়া টাকা রয়েছে। এই টাকায় আমার মালিকানায় ইটভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়। এটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আরেকটি বড় ভুল।”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ওকে আমি ওমরা হজ করতেও নিয়ে যাই। সে কাবা শরীফ ছুঁয়ে আমাকে কথা দেয় – ‘ম্যাডাম আপনার সাথে জীবনে বেঈমানি করব না। আপনার টাকা তছরুপ করব না’।”
বিদিশা আরও অভিযোগ করেন, আতিকুরের সঙ্গে তার লিখিত চুক্তি ছিল প্রতিমাসে তাকে [বিদিশাকে] লভ্যাংশের টাকা দেবেন। এরপর ইটভাটা চালু হলে আতিকুর প্রথম এক বছর লভ্যাংশের কিছু টাকা দিয়েছেন।
“এ পর্যন্ত সে আমাকে লভ্যাংশের ৩ কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু হিসাব করে দেখা যায় আমি তার কাছে আসল ও লভ্যাংশ মিলে আরও ১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা পাওনা আছি।”
বিদিশা অভিযোগ করেন, এরপর আতিকুর আস্তে আস্তে দূরত্ব তৈরি করেন বিদিশার সঙ্গে। মোবাইল ফোন নম্বর পরিবর্তন করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
“তার পরিবারও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু সে তালবাহনা করতে থাকে। তখন আমি দুঃশ্চিন্তায় পড়ি। তখন আমি বাধ্য হয়ে গাইবান্ধায় আসি এবং আমার ইটভাটায় যাই।
“তারপর বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য সেখানে তাকে ডেকে নেই। কিন্তু তখন আতিকুর আমাকে বলে – ‘চুক্তিপত্র ঢাকায় হয়েছে, তাই ইট ভাটায় আলাপ না করে চলেন ঢাকায় আপনার বাসায় যাই’। তাই সে আমার সাথে ঢাকায় যায়। পরে টাকা লেনদেনের বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য সে তার ভাই বাবাকে ঢাকায় ডেকে নেয়।”
বিদিশা বলেন, “আতিকুর রহমান তাকে অপহরণ, ১০ দিন ঢাকার বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন ও অস্ত্রের মুখে স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলে নাটক সাজিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও সংবাদ সম্মেলন করে। টাকা না দিতে সে এই মিথ্যা নাটক সাজাচ্ছে।”
বিদিশার অভিযোগ আতিকুর রহমান অস্বীকার করেছেন।
বিদিশার বিরুদ্ধে আতিকুরের মামলা
অপহরণ ও ১০ দিন ঢাকার বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন এবং অস্ত্রের মুখে স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার অভিযোগে বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গত ২৮ মার্চ গাইবান্ধার আদালতে মামলা হয়েছে।
বিদিশার কর্মচারী আতিকুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বিদিশা সিদ্দিকসহ চারজনকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছেন গাইবান্ধা ডিবি (গোয়েন্দা শাখা) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের ওসি মোখলেছুর রহমান বলেন, “আদালত থেকে তদন্তের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে শুনেছি। তবে আদালত থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত পাইনি।”
গত মঙ্গলবার বিকালে গাইবান্ধা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে আতিকুর রহমান এসব বিষয় তুলে ধরেন।
আতিকুর গাইবান্ধা সদর উপজেলার মালিবাড়ি ইউনিয়নের কিশামত মালিবাড়ি ধর্মপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
তিনি নিজেকে বিদিশা সিদ্দিকের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে গত মঙ্গলবার এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
আতিকুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, “আর্থিক সংকটের কারণে আমার মালিকানাধীন একটি ইটভাটা ভাড়া দেই। ২০১০ সালে বিদিশা সিদ্দিকের মালিকানাধীন ঢাকাস্থ একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিই। ২০১৬ সালের শেষের দিকে বিদিশা সিদ্দিক আমার ইটভাটায় টাকা লগ্নি করেন।”
বিদিশা ইটভাটা চালু করতে প্রথম পর্যায়ে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ধার দিতে রাজি হন; কিন্তু মোট ৪ কোটি ২১ লাখ দেন উল্লেখ করে আতিকুর বলেন, ৬০ মাস মেয়াদী এই চুক্তি অনুযায়ী সুদাসলে প্রতিমাসে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধ প্রদানের শর্ত হয়; আতিকুর রহমান ওই সময় ৫ কোটি ২২ লাখ টাকার চেক বিদিশা সিদ্দিককে প্রদান করেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঋণের ৪ কোটি ৭৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা আতিকুর রহমান বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে বিদিশা সিদ্দিকের নির্দেশে বিদিশা ফাউন্ডেশনে জমা প্রদান করেন বলেও তিনি দাবি করেন।