পুলিশ জানায়, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯ মার্চ সৌদিপ্রবাসীর ছেলে ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে অপহরণ করা হয়।
Published : 31 Mar 2024, 08:44 PM
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা থেকে অপহৃত হওয়া প্রবাসীর ছয় বছর বয়সি শিশুকে ২২ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে; এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার দুপুরে টেকনাফ থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মোহাম্মদ রাসেল।
সংবাদ সম্মেলনে টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি এবং শিশুটির মা নুরজাহান বেগম উপস্থিত ছিলেন।
উদ্ধার হওয়া শিশু ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের সৌদিপ্রবাসী মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ছেলে। সে পূর্ব পানখালী এলাকার আবু হুরাইরা (রা.) মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র।
গ্রেপ্তাররা হলেন- উপজেলার মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নাগু ডাকাত (৫৫), তার স্ত্রী আয়েশা বেগম (৩২), ভাই মোহাম্মদ হাশেম (২৭), ছেলে রনি (১২) ও আনোয়ার সাদেক (২১), ছেলের বউ হোসনে আরা (২০), একই এলাকার লায়লা বেগম (৫৫), উম্মে সালমা (২৪) খাতিজাতুল কোবরা (৩৫), কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিরপাড়ায় বসবাসকারী পুরাতন রোহিঙ্গা নাসির আলম (২৮), মহেশখালী উপজেলার সালামত উল্লাহ প্রকাশ সোনাইয়া (৪৫), একই ইউনিয়নের জহির আহমেদ (৬৫), হাসমুল করিম তোহা (২০), সামিরাঘোনা এলাকার মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ (১৯), তার বাবা ফরিদুল আলম খান (৫২), মো. আমির হোসেন (২৪) এবং তৌহিদুল ইসলাম তোহা (৩০)।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল জানান, আনোয়ার সাদেকই মূলত এই অপহরণ চক্রের প্রধান হিসেবে কাজ করেছে। পরিবার সদস্য, আত্মীয়দের নিয়ে গঠিত অপহরণ চক্রের প্রধান সাদেকের পরিকল্পনায় উন্মে সালমা সৌদিপ্রবাসী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নিয়েছিলেন।
“সেখানে কিছু দিন কাজ করার পর শিশু ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহর সঙ্গে পরিচয় এবং সখ্যতা তৈরি করেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৯ মার্চ তাকে অপহরণ করা হয়।
“ওই দিন দুপুরে ক্লাস শেষে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ছোয়াদকে দুর্ঘটনায় মায়ের মাথা ফেটে গেছে এবং হাসপাতালে মাকে দেখতে যাওয়ার কথা বলে শিশুটিকে অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করেন উম্মে সালমা।”
ওইদিন সন্ধ্যায় শিশুটির মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান।
তিনি বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রাখে। ১০ মার্চ সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অটোরিকশাসহ চালক নাসির উদ্দিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
“অটোরিকশা চালকের স্বীকারোক্তি মতে, ১২ মার্চ উপজেলার মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের উন্মে সালমাসহ আরও ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
এই পাঁচজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়েই অপহরণকারী পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল।
এ বিষয়ে টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, এরপর থেকে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রাখে। অভিযানে একেকজনকে গ্রেপ্তারের পর আরও তথ্য আসতে শুরু করে। এর মধ্যে শিশুটির মা নুরজাহান বেগমকে ফোন করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
“এমনকি মুক্তিপণ না দিলে শিশুটিকে হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়। মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপহৃত শিশুকে বিভিন্ন সময় নির্মমভাবে মারধর করে কান্নাকাটির শব্দ শোনানো হয়।”
ফলে পুলিশ অভিযানের পাশাপাশি নানা কৌশলে এগিয়ে যেতে থাকে। অপহরণ চক্রের সদস্যরা শিশুটি নিয়ে একের পর এক স্থান পরিবর্তন শুরু করে বলে জানান ওসি।
তিনি বলেন, টেকনাফ থেকে অপহরণের পর শিশুটিকে ঈদগাঁও এলাকায় রাখা হয়। ওখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার গহীন পাহাড়ে। যেখানে পুলিশ অভিযান টের পেয়ে শিশুটি নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লার লালমাই এলাকার একটি ভাড়া বাসায়।
“এর মধ্যে মুক্তিপণের চার লাখ টাকা দেওয়ার কৌশলে শনিবার দুপুরে কুমিল্লার লালমাই এলাকা থেকে শিশু ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করা হয়।”
এ সময় মুক্তিপণের চার লাখ টাকা ফেরত আনা হয় এবং অপহরণে ব্যবহৃত অটোরিকশা ও চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ওসি ওসমান গণি বলেন, আনোয়ার সাদেক, শাহীন, তোহা, নাগু ডাকাত, মধু, হোসনে আরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা অপহরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য।
এই অপহরণের ঘটনায় জড়িত অপহরণ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শিশুর মা নুরজাহান বেগম সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, অপহরণ যেকোনো ভাবেই বন্ধ হওয়া জরুরি। এ সময় তিনি পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।