অবৈধভাবে ১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৬ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এই দম্পতির বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়।
Published : 01 Jan 2024, 03:27 PM
অবৈধভাবে বিপুল সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও তার স্ত্রী বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক।
ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও তার স্ত্রী মুসরীন আক্তারের বিরুদ্ধে সোমবার মামলাগুলো করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রেজাউল করিম।
কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন জানান, মামলায় সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১১ কোটি ৫৪ লাখ ২৭ হাজার ১৯৫ টাকার এবং তার স্ত্রী মুসরীন আক্তারের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২ কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার ১ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান (৪৫) দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উৎস হতে তার আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১১ কোটি ৫৪ লাখ ২৭ হাজার ১৯৫ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
মামলার অনুসন্ধানকালে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০২২ সালের করবর্ষকালীন সময়ে সিদ্দিকুরের নিজের নামে ১০ কোটি ২৯ লাখ ৬৬ হাজার ৯০২ টাকার স্থাবর এবং ১২ কোটি ৫৯ লাখ ৪ হাজার ৬০৯ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ সব মিলিয়ে ২২ কোটি ৮৮ লাখ ৭১ হাজার ৫১১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায় ।
সিদ্দিকুর রহমান ১৯৯৬-৯৭ থেকে ২০২২ অর্থবছর পর্যন্ত ঠিকাদারি ও কারবার, গৃহ সম্পত্তি, কৃষি আয় ও কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত বেতনাদি থেকে মোট ২৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪৩ টাকা আয় দেখিয়েছেন। এর বিপরীতে ১০ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৭৫১ ব্যয় এবং ১৪ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৯২ টাকা সঞ্চয় দেখিয়েছেন।
২০০৬-০৭ করবর্ষ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষ পর্যন্ত ঠিকাদারি কাজে ১১ কোটি ৪ লাখ ৩৮৯ হাজার ২৮৫ টাকার বিল পান। তিনি এক্ষেত্রে ৫ কোটি ৬ লাখ ১৮ হাজার ৩০২ টাকা অতিরিক্ত আয় দেখিয়েছেন। তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে গ্রহণকৃত ঋণের বিপরীতে পরিশোধিত ৫ কোটি ৬২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৩৫ টাকা সুদের তথ্য উল্লেখ করেননি।
এজাহারে আরো বলা হয়, সিদ্দিকুর রহমান ২০১৮ সালে ১০ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন দেখিয়ে ১০ লাখ শেয়ারে শ্রাবণী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, ২০১০ সালে ১০ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন নিয়ে আলাউদ্দিন কোম্পানি লিমিটেড এবং ২০১৮ সালে ৫ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন দেখিয়ে আলাউদ্দিন অটো ব্রিকস নামে ইটের ব্যবসা শুরু করেন।
তিনি নিজে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন এবং তার স্ত্রী মুসরীন আক্তার ওই কোম্পানির চেয়ারম্যান।
এই তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত ২৫ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধনের শেয়ারের বিষয়ে এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত অর্থের বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।
অপরদিকে সিদ্দিকুরের স্ত্রী মুসরীন আক্তারের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তার নামে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার স্থাবর ও ৪১ লাখ ১ হাজার ৪৭০ টাকার অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে ২ কোটি ৩১ লাখ ১ হাজার ৪৭০ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
মুসরীন আক্তার ২০১২-১৩ করবর্ষের আয়কর নথিতে ১০ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যবসার পুঁজি উল্লেখ করেন। কিন্তু অনুসন্ধানকালে ওই টাকার উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও তিনি ২০১২-১৩ করবর্ষ হতে ২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত সময়ে ব্যবসা বা পেশার আয় ও কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত বেতনভাতা থেকে ৩৮ লাখ ২০ হাজার ৪ টাকা আয় প্রদর্শন করেছেন। যার মধ্যে ব্যবসা বা পেশার প্রদর্শিত ৩১ লাখ ২০ হাজার ৪ টাকা আয়ের স্বপক্ষেও কোনো রেকর্ডপত্র কিংবা ব্যবসা বা পেশার অস্তিত্ব অনুসন্ধানকালে পাওয়া যায়নি।
এজাহারে বলা হয়, মুসরীন আক্তার মূলত একজন গৃহিণী। তার নিজস্ব কোনো ব্যবসা বা পেশায় আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি। তার স্বামীর অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদই তার নামে অর্জন দেখানো হয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন জানান, দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।