গাজীপুর সিটি নির্বাচন: গণসংযোগে নেমে রনি তুষ্ট, জায়েদা খাতুন অভিভূত

গত ৯ মে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের পর শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হয়ে গেল জমজমাট প্রচারণা।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2023, 06:30 PM
Updated : 12 May 2023, 06:30 PM

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থী-সমর্থকরা গণসংযোগে নেমে পড়েন।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১২ মে) সকাল থেকে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা বেশ জমে ওঠে। দুপুরে নারী প্রার্থীরা ছাড়া অনেকেই মসজিদে জুমার নামাজের আগে-পরে দোয়া ও ভোট চেয়েছেন।

গত ৯ মে প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পান।

বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহেনুর রনি বলেন, “গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে, তাদের সঙ্গে উঠান বৈঠক করে তাদের সম্মতি-অনুমতি নিয়ে পরিবার ও নিজের স্বজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমি মেয়র প্রার্থী হয়েছি। সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হয়েছি, তাদের ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি।” এতে তিনি তুষ্ট।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে রনি বলেন, “প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে তা নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের উপর। নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে না পারে তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে এবং তা এখন থেকেই। সারাবিশ্ব এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আমি নির্বাচন কমিশনকে বলবো, আপনারা এতো তাড়াতাড়ি বিতর্কিত হবেন না। এ নির্বাচনে মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। আর এই আস্থাটাকে ধরে রাখতে হলে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।”

গাজীপুরকে ‘জাতীয়তাবাদী শক্তির ঊর্বর ঘাঁটি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “২০১৩ সালে অধ্যাপক এমএ মান্নান স্যার এক লাখ ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পাস করেছেন। ২০১৮ সালে আমার বড় চাচা হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ নির্বাচনে সকাল ১১টার পর থেকে আমাদের কোনো এজেন্টকে ভোট কক্ষে থাকতে দেওয়া হয়নি। তখন যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হতো তা হলে আমার চাচা মিনিমাম দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে পাস করতেন। এবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি বলেন, সকল দলের লোকের সমর্থনই আমার সঙ্গে আছে।

এখন পর্যন্ত পরিবেশ সুষ্ঠু আছে দাবি করে তিনি বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিজয়ী হব।”

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহেনুর ইসলাম রনি আরও বলেন, “আজকের নির্বাচনের প্রচারণার তৃতীয় দিন চলছে। এখন নির্বাচন মাত্র শুরুই, নির্বাচনের মাঠ যত উত্তপ্ত হবে ততদিন নির্বাচনের মাঠ কোনো দিকে গড়ায়, নির্বাচন যেহেতু আমরা বারবার একটা কথা বলি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আর কিছু দিন গেলে তা বোঝা যাবে।”

রনি সকালে টঙ্গীর ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাজার এলাকায় প্রচারণা শুরু করেন। দুপুরে তিনি বোর্ড বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে ওই এলাকায়ই গণসংযোগ করেছেন। সন্ধ্যায় টঙ্গীর সুর তরঙ্গ রোডে নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন।

এদিকে, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্রপ্রার্থী জায়েদা খাতুন নগরীর সালনা এলাকা থেকে শুক্রবার সকালে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন। সালনা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

নামাজের আগে তিনি মসজিদে আসাদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।

নামাজ শেষ হলে জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখান থেকে জয়দেবপুর বাজার, হাড়িনাল, শহরের রথখোলা, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় এবং ভোগড়া বাইপাস সড়ক, চান্দনা এলাকায় গণসংযোগ করেন।

এ সময় তার নির্বাচনের সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

জাহাঙ্গীর বলেন, “৯ তারিখে প্রতীক পেয়েই আমি আমার মায়ের নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে সবার কাছে যাচ্ছি, সবার সাথে দেখা করার জন্য চেষ্টা করছি। আপনারা জানেন, মা কেন প্রার্থী হয়েছে। মা গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে কালো ছায়া থেকে বাঁচানোর জন্য প্রার্থী হয়েছেন। অন্ধকার দিয়ে অনেকেই খারাপ কিছু করার জন্য চেষ্টা করছে।”

প্রশাসন সহযোগিতা করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশনও নিরপেক্ষ ভূমিকায় কাজ করছে। আমরা শেষ পর্যন্ত দেখতে চাই, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন যাতে নিরপেক্ষ থাকে। নির্বাচন কমিশনার তথা সরকারকে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আমাদের ভোটাররা গণতান্ত্রিকভাবে তাদের মতামত প্রয়োগ করতে পারে।“

শুক্রবার সব মসজিদ, মাদ্রাসায়, মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মা’র পক্ষ নিয়ে ভোটাররা তাদের নিজ নিজ এলাকায় প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। সেই হিসেবে আমি মনে করি, ব্যক্তি এবং মা এবং আমাদের ভোটার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে মাকে এবং টেবিল ঘড়ি মার্কাকে ভোট দেওয়ার জন্য।”

আচরণবিধি ভঙ্গের নোটিশ পাওয়া প্রসঙ্গে জায়দাপুত্র বলেন, “আপনারা জানেন, আমাদের প্রতিপক্ষ যারা নির্বাচন করছেন, তাদের হাজার হাজার পোস্টারে অন্যান্য নেতা-কর্মীদের ছবি আছে। তাদের রঙ্গিন পোস্টার আছে, ব্যানার আছে এবং দেখবেন রাস্তাঘাটে বিল বোর্ডের মতো করে এখনো ব্যানার-পোস্টার দিয়ে রেখেছে। সেটি নির্বাচন কমিশন হয়তো দেখতে পারেন নাই। আমি অনুরোধ করবো, আমি একজন সাবেক মেয়র, দায়িত্বে আছি বা নাই। আমি মায়ের সন্তান, মায়ের সন্তানের পাশে ছবি থাকলে কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ আছে কিনা তা আমার জানা ছিল না। তারপরও নির্বাচন কমিশন যে আইন করবে, আমরা অবশ্যই সেই আইন মেনে চলবো। আমাদের ছবিগুলো হয়তো আগে অনেকে দিয়েছেন। ভক্তরা আছেন, অনেক কর্মী আছেন, অনেক শুভাকাঙি্‌কষ আছেন, তারাই সেই কাজটি করেছেন। আমি তো কোনো নিষিদ্ধ মানুষ নই।

জায়দা অভিভূত

স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন শুক্রবার সকালে ছয়দানা এলাকায় তাদের বাসা থেকে গণসংযোগে বের হওয়ার প্রক্কালে সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরে আমি বৃহস্পতিবার গণসংযোগে নেমেছি। এতে আমি ভোটারসহ বিভিন্ন বয়সী লোকদের যে সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমি ‘অভিভূত’। নগরীর যেখানেই যাচ্ছি, লোকজন আমার কাছে ছুটে আসছেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে কথা দিচ্ছেন, তারা টেবিল ঘড়ি মার্কায় ভোট দেবেন। ইতোপূর্বে মেয়র থাকাকালে আমার ছেলের কাজ-কর্মে অবদান রাখার কারণেই সবাই আমাকে ভোট দেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমি আশা করছি, সবাই ২৫ মে তারিখের নির্বাচনে ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের এ আগ্রহের প্রতিফলন ঘটাবেন। আমি ছেলে অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে চাই। তাই সবার কাছে দোয়া চাই-ভোট চাই।” পরে মাকে সঙ্গে নিয়ে সালনা এলাকায় গণসংযোগের উদ্দেশে ব্যক্তিগত গাড়িতে বেরিয়ে যান জাহাঙ্গীর।

এদিকে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান টঙ্গীর বাদাম উত্তরপাড়া জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজের আগে তিনি মসজিদের আসাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এরপর তিনি বাদাম এলাকায় একটি পথসভায় বক্তব্য দিয়ে বাকরাইল, সিংবাড়ি, দেওড়া ও পরে ৫৫ নং ওয়ার্ডের মিল গেইট এলাকায় গণসংযোগ করেন।

নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান শুক্রবার সকালে টঙ্গীর নিজের বাসভবন থেকে প্রচরণার কাজ শুরু করেন।

এ সময় আজমত উল্লা খান বলেন, “জনগণের কাছে একটাই অনুরোধ। এই নগর আমাদের সকলের। এই নগর সুন্দর থাকলে আমরা সুন্দর থাকবো, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম সুন্দর থাকবে।” আর এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য তিনি ভোটারদের কছে ভোট চেয়েছেন।

তিনি বলেন, “গাজীপুর একটি শিল্প অধ্যুষিত এলাকা। বাবা-মা কারখানায় কাজ করে তারা সন্তানদের ঠিকঠাক দেখভাল করতে পারে না। এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ডে-কেয়ার সেন্টার তৈরি করা হবে। এছাড়া শ্রমিকদের চলাচলের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। আপনার আগামী ২৫ তারিখ সবাই নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন, এটা প্রত্যাশা করি।”

এদিকে, গাজীপুর কেন্দ্রীয় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। এরপর তিনি জয়েদবপুর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ শেষে টঙ্গী এলাকায় যান।

তিনি বলেন, “গাজীপুর সিটি করপোরেশন যাত্রাতে পরিকল্পনার অভাব ছিল। মোট আয়তনের অর্ধেকের বেশি এখনও পল্লী এলাকা। যেখানে কোনো নাগরিক সুবিধা নেই, এমনকি শিল্পকারখানাও নেই। এসব অঞ্চলকে করপোরেশনভুক্ত করতে এলাকার মানুষের মতামত নেওয়া হয়নি। ফলে পল্লী এলাকার মানুষকে করপোরেশনের আওতায় ফেলে তাদের ওপর ট্যাক্সের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব এলাকায় সমান হারে ট্যাক্স নির্ধারণ কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। হাতপাখা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করা হলে হোল্ডিং ট্যাক্স যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসব।”