মুক্তিযোদ্ধার কোমরে রশি, নরসিংদীতে নিন্দার ঝড়

শিবপুর থানার ওসির ভাষ্য, আবু ছালেক রিকাবদার যে মুক্তিযোদ্ধা তা জানা ছিল না; কোমরে বাঁধার বিষয়টিও তার জানা নেই।

বেনজির আহমেদ বেনুনরসিংদী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2023, 05:16 PM
Updated : 15 Feb 2023, 05:16 PM

নরসিংদীতে বিনা পরোয়ানায় এক মুক্তিযোদ্ধা বিএনপি নেতাকে কোমরে রশি বেঁধে আদালতে নেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।

জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ দলমত নির্বিশেষে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

গত শুক্রবার রাতে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক রিকাবদারকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে শিবপুর মডেল থানা পুলিশ। পরদিন বিকালে তাকে আগের একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোমরে রশি বেঁধে থানা থেকে নরসিংদীর আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

এ ঘটনার একটি ভিডিও স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হলেও শিবপুর মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, আবু ছালেক রিকাবদারকে কোমরে বেঁধে আদালতে নেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। যারা তাকে থানা থেকে আদালতে নিয়ে গেছে তারা ভালো বলতে পারবে।

এ ঘটনাকে জঘন্য ও নেক্কারজনক কাজ বলে উল্লেখ করেছেন নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আবু সালেক রিকাবদার যে দলই করুক না কেন তিনি তার বাল্যবন্ধু। তাকে ধরে থানায় নিয়ে আসার পর তিনি থানায় ওসিকে ফোন করে বলেন, তাকে যেন কোনো প্রকার অসম্মান বা হয়রানি না করা হয় এবং কোনো মামলা না থাকলে যেন রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর পরদিন কোমরে রশি বেঁধে থানা থেকে আদালতে পাঠানোর ছবি দেখে তিনি বিস্মিত হয়ে আবার ওসিকে ফোন করে এ ব্যাপারে জানতে চান।

“তখন ওসি বলেন, আটক আবু সালেক রিকাবদার যে একজন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি তার জানা ছিল না। তার নামে পরোয়ানা না থাকলেও গত বছরের নভেম্বরে পুলিশের একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।”

“আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে এ ঘটনায় ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। এ ঘটনায় আমি লজ্জিত ও ব্যথিত।”

ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতারাও।

বিএনপির সাবেক মহাসচিব ‘আবদুল মান্নান ভুইঁয়া পরিষদ’র সদস্য সচিব সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা বলেন, হাটবাজারে সাধারণ মানুষ বলে সরকার বিরোধী সংগঠনের নেতাদের উপর নির্যাতন করলে নাকি পুলিশের প্রোফাইল পাকাপোক্ত হয়; প্রমোশন পেতে সুবিধা হয় এবং পকেটও গরম হয়৷ কিন্তু পুলিশের খেয়াল রাখা উচিৎ ছিল আবু সালেক রিকাবদার শুধু একজন বিএনপি নেতা নন, তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানও বটে। তাকে এভাবে অপমান করায় দলমত নির্বিশেষে জেলার সর্বস্তের জনতা কিন্তু এবার গরম হয়ে গেছে।

জেলা বিএনপির আহবায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন বলেন, গত শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সারা দেশে বিএনপি ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। এই কর্মসূচি শিবপুরে যাতে সফল না হয় সেজন্যই আতঙ্ক সৃষ্টি করতে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে শিবপুরের নিজ বাসার সামনে থেকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করেছে।

“নরসিংদীর পুলিশ সরকারের নয়, বিশেষ এক ব্যক্তির পারপাস সার্ভ করার জন্য এর পরদিন দিবাগত রাতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবুল হারিস রিকাবদার ও আমাকেসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলা রুজু করে।”

এই বিশেষ ব্যক্তির বাহিনীকে পুলিশ সহায়তা দিয়ে নরসিংদীতে গত কয়েক দিন ধরে একটি ভয়ানক পরিবেশ তৈরি করার অপচেষ্টা করছে, বলে খোকন।

শিবপুর থানার যুদ্ধাকালীন কমান্ডার আব্দুল মান্নান খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহসীন নাজির, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশীদ খান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার, যুদ্ধকালীন ডেপুটি কমান্ডার তাজুল ইসলাম খান ঝিনুক, নরসিংদী প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নিবারণ রায়, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান ভুঞা ও এডভোকেট আব্দুল বাছেদ এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জেলার এই বিশিষ্টজনরা সরকারের কাছে দাবি জানান, জাতির বীর সন্তানদের যেন পুলিশ এভাবে আর অপমান করতে সাহস না পায়। সেজন্য পুলিশকে যেন সরকার দ্রুত সতর্ক করে দেয়।