আদিবাসীদের মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র ব্যর্থ: সুলতানা কামাল

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতালদের এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2024, 06:37 PM
Updated : 29 Jan 2024, 06:37 PM

সবাইকে সমানভাবে রক্ষার দায়িত্ব থাকলেও রাষ্ট্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের মানবাধিকার রক্ষা করতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল।

এ মানবাধিকার কর্মী বলেছেন, “রাষ্ট্রের দায়িত্ব জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মানবাধিকার রক্ষা করা। আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আদিবাসীদের মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে।”

সোমবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকায় সাঁওতালদের এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সুলতানা কামাল বলেন, “আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন, হত্যা, ভূমি দখল চলতেই থাকবে? এটা তো হতে পারে না। তারা কি আন্দোলন করতে করতেই জীবন পার করবে? রাষ্ট্র যখন অন্যায় ও অপরাধের বিচার করে না, সেই কলঙ্ক কিন্তু জাতির গায়েও লাগে।

“আমরা এ দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে তা মেনে নিতে পারি না। আমরা এই কলঙ্ক বহন করতে রাজি নই। রাষ্ট্র যদি এখানে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে, বিচার না করে, সেই কলঙ্কের দায়ভার রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। আমরা বারবার এই হত্যার বিচার দাবি করব।”

সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, “ক্ষমতা পেতে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে বলে দাবি করলেও তারা সেই চেতনার বাইরে গিয়ে সাঁওতাল হত্যাকারীদের সঙ্গে আপসের নীতি অনুসরণ করছে। এই সাঁওতালরা দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় বাঙালিদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো।”

সুলতানা কামাল বলেন, “আমরা উন্নয়ন চাই। যদি উন্নয়নের সুফল সব জনগোষ্ঠী সমানভাবে না পায়, যদি আদিবাসীদেরকে উচ্ছেদ হতে হয়- তাহলে সেটি কিসের উন্নয়ন? দেশে প্রতিনিয়ত আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বিচারহীনতার কারণে এসব নির্যাতনের শিকার আদিবাসীরা কষ্ট পাচ্ছেন।”

সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বাবু, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রফিক আহম্মেদ সিরাজী, নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের সদস্যসচিব প্রবীর চক্রবর্তী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিচিত্রা তির্কী, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের গাইবান্ধা সদর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর তনু, আদিবাসী নেতা সুফল হেমব্রম, প্রিসিলা মুর্মু, সন্ধ্যা মালো, গৌড়চন্দ্র পাহাড়ী।

গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার, আসামিদের গ্রেপ্তার, ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের ক্ষতিপূরণ, সাঁওতালদের তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধ ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠনের দাবিতে এই সমাবেশ হয়।  

সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, জনউদ্যোগ, আদিবাসী-বাঙালী সংহতি পরিষদ, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, “সুসংগঠিত সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের আন্দোলন সংগ্রাম ব্যাহত করতে কিছু মহল নানা ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ ছাড়া আন্দোলনে থাকা সদস্যদের সেচের যন্ত্রপাতি ট্রান্সফরমার, মিটার, শ্যালো মেশিন ও যন্ত্রাংশ সংঘবদ্ধভাবে চুরি করছে।”

২০১৬ সালের সাঁওতাল হত্যাকাণ্ডের আসামিরা আবারও হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ তিন সাঁওতাল শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ মারা যান।

এসব ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে ওই বছরের ১৬ নভেম্বর ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করেন। ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমব্রম বাদী হয়ে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করা হয়।