মেহেরপুরে দুই ভাইকে হত্যায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড

২০১২ সালের ১৬ জুন গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রাম থেকে রফিকুল ও আবুজেল নামের দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মেহেরপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2023, 09:06 AM
Updated : 2 April 2023, 09:06 AM

এক দশক আগে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।

রোববার দুপুরে মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাস অধিকাংশ আসামির উপস্থিতিতে এই রায় দেন বলে জানিয়েছেন আদালতের সরকারি কৌসুলি কাজী শহীদুল হক।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কিয়ামত আলীর ছেলে হালিম, আছেল হালসানের ছেলে আতিবার, মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে জালাল উদ্দিন, নজীর আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম, দাবির উদ্দিনের ছেলে শরিফ উদ্দিন, নবীর উদ্দিনের ছেলে দবির উদ্দিন, আফুল উদ্দিনের ছেলে আজিজুল, মৃত দবীর উদ্দিনের ছেলে ফরিদ হোসেন এবং মুনছারের ছেলে মনি।

তারা সবাই গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় জালাল উদ্দিন পলাতক ছিলেন।

এই মামলায় খালাস পেয়েছেন পাঁচ আসামি।

মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে আইনজীবী বলেন, কাজীপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৪০) ও আবুজেল ইসলাম (৩৫) বিজিবির সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ২০১২ সালের ৫ জুন কাজিপুর এলাকায় ফেনসিডিলের একটি বড় চালান ধরা পড়ে। তখন আসামিরা দুই ভাইকে সন্দেহ করে।

এ নিয়ে তাদের মধ্যে মারামারিও হয়। পরে সেটি আপসে শেষ হয়।

২০১২ সালের ১৫ জুন রাতে ঘটনাটি মীমাংসার কথা বলে দুই ভাইকে ডেকে নেয় আসামিরা। পরদিন ১৬ জুন সকালে কাজিপুর গ্রামের মণ্ডলপাড়ার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১৪৫ নং/এস-৬ নং সীমানা পিলারের কাছ থেকে বাংলাদেশ সীমানার ভেতরে ৭০-৭৫ গজ দক্ষিণে লালটুর মরিচ ক্ষেত থেকে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় তাদের বোন জরিনা বেগম বাদী হয়ে গাংনী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন গাংনী থানার ওসি আসাদুজ্জামান।

দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় তদন্ত এবং ১৭ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় রোববার দুপুরে আসামিদের বিরদ্ধে আদালত এই রায় প্রদান করেন।

আইনজীবী বলেন, রায়ে মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে আসামিদের ২০ হাজার  টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন বিচারক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে বিচারক আদালতে আসেন। এ সময় ১৪ আসামিকে কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। দুজন পলাতক। খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের আলাদা করা হয়।

রায় উপলক্ষে আদালতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পর দণ্ডপ্রাপ্তদের স্বজনরা আদালতের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সরকার পক্ষের আইনজীবী কাজী শহীদুল হক বলেন, “আদালতের এই রায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে, ন্যায়বিচার হয়েছে। আদালতে যতটুকু সমর্থন দেওয়া দরকার সেটা করতে সমর্থ হয়েছি। বিচারক অত্যন্ত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এই রায় প্রদান করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, এই রায় উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে।”

অন্যদিকে, আসামি পক্ষের আইনজীবী কামরুল হাসান বলেন, “বাদী নিজের চোখে ঘটনা দেখেননি। তিনজন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।”

আসামি পক্ষে আইনজীবী হিসেবে আরও দায়িত্ব পালন করেন- এ কে এম শফিকুল আলম ও আতাউল হাকিম লাল্টু।