প্রাধ্যক্ষ আবু সাঈদ আরফিন খাঁন লিখিতভাবে দুই অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে পুরো ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করার কথা বলেছেন।
Published : 18 Aug 2023, 12:14 AM
ফেইসবুকে এক মন্তব্যের জেরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ছাত্রকে নির্যাতন করে হলছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
বুধবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ মুজতবা আলী হলে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রাধ্যক্ষ আবু সাঈদ আরফিন খাঁন জানান।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সীমান্ত এবং তার কয়েকজন সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীদের একজন সৈকত রায়।
ঘটনার শিকার আরেক শিক্ষার্থী হলেন মেহেদী হাসান। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম অ্যাণ্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএমই) বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ৪২০ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র।
ওই ঘটনায় সৈকত-মেহেদীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন সীমান্তের সমর্থকরা।
প্রাধ্যক্ষ আবু সাঈদ আরফিন খাঁন লিখিতভাবে দুই অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে পুরো ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করার কথা বলেছেন।
মেহেদী হাসান বলেন, “গত মঙ্গলবার শোক দিবসের অনুষ্ঠানের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আলোচনা সভা হয়। সেখানে ছাত্রলীগের ভাইয়েরা অনেকে বক্তব্য দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যক্তি ও শিক্ষকরা বক্তব্য দেন। সেখানে একজন স্যার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের আমেরিকা যাওয়ার দরকার নেই। পশ্চিমরা আমাদের শত্রু। আমরা দেশেই থাকতে পারব।
“যে স্যার এমন বক্তব্য দিয়েছেন, উনার ছেলেই বর্তমানে আমেরিকায় আছেন। পরে আমি বিষয়টি নিয়ে মজার ছলে ফেইসবুকে কাউকে মেনশন না করে পোস্ট দিই। পোস্ট দেওয়ার ২০/২৫ মিনিটের মাথায় আমার গ্রুপের সীমান্ত ভাইয়ের নজরে এলে তার কথা মত আমি পোস্টটা মুছে দিই।”
মেহেদী বলেন, “গত বুধবার রাতে ১১টা ৪০ এর দিকে গ্রুপে আমার সহপাঠী আর জুনিয়ররা এসে বলতেছে- সিনিয়র ভাইয়েরা বলছে, তোর সবকিছু নিয়ে হল ছেড়ে চলে যেতে। প্রশাসনও বলছে, তোরে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে হল থেকে নামিয়ে দিতে।’ আমি বললাম, ‘প্রশাসন বললে তো নোটিন দেবে।
“তখন তারা বলে, ‘তোকে নামাইতে আবার নোটিস দিতে হবে কেন? তুই কে?’ পরে সীমান্ত ভাই বলতেছে- প্রশাসন থেকে তাকে কল দিছে, আমাকে যেন এখনই হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।”
এই শিক্ষার্থী বলেন, “আমি সকালে যাব বললে, তখনই সীমান্ত, রিফাত, রাহাত, তামিম, শিমুল, আসিফ, রাকিবুল, বাঁধন, হাবিবুর রহমান আসিফ, নিজাম, হোসেন সরকার ও মুবিন সিদ্দিক আমার কলার ধরে ঘুসি মারতে শুরু করে।
“এক পর্যায়ে আমি মেঝেতে পড়ে গেলে আমাকে সবাই বলের মত লাথি মারতে শুরু করে। পরে কলার ধরে রুম থেকে বের করে হলের বাইরের রাস্তায় নিয়ে আসে। সেখানেও মারধর করে। বলে- ‘তুই এখান থেকে যদি এক পা ভিতরে যাস, তর অস্তিত্ব থাকবে না। তোর লাশটাও পাবি না ।
“এরপর রাতেই আমাকে হলের গেস্ট রুমে নিয়ে যায় তারা। সেখানে মাহমুদুল স্যারের (সহকারী প্রাধ্যক্ষ) সঙ্গে ফোনে কথা বলে আমি আমার এক ব্যাচমেটের রুমে গিয়ে আশ্রয় নিই। সকালে সহকারী প্রাধ্যক্ষ স্যার আসলে স্যারকে ঘটনাটি বলি। স্যার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা না করে বিষয়টি তিনি দেখবেন জানালে আমি লিখিত অভিযোগ দিইনি।”
সৈকত রায় বলেন, সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ৪২০ নম্বর কক্ষের বৈধ ছাত্র তিনি। তিনি, মেহেদী আরও দুজন একই কক্ষে থাকেন।
প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগে সৈকত বলেন, বুধবার রাত আনুমানিক ১২টার দিকে আজিজুল ইসলাম সীমান্তের ১২-১৫ জন অনুসারী তার কক্ষে এসে একজনের সঙ্গে তর্কে জড়ায় এবং তাকে মারধর করে।
“এক পর্যায়ে মারধরকারীরা ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিতে চায়, আমি বাধা দিলে কয়েকজন আমাকেও মারধর করে। পরে বিষয়টি প্রভোস্ট স্যারকে মোবাইলে জানাতে চতুর্থতলা থেকে তৃতীয় তলায় আসতেই সীমান্তের সঙ্গে দেখা হয়। তখন সীমান্ত ভাই আমাকে পেয়ে জানতে চায়- আমি কোথায় যাই? কাকে কল দিচ্ছি?’
“আমি প্রভোস্ট স্যারকে ফোন দিচ্ছি জানালে সীমান্ত ভাই জোর করে ফোন কেড়ে নেয় এবং আমাকে টেনে ৪২০ নম্বর রুমে নিয়ে গিয়ে মারধর করে, রুম অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করে।”
এ সময় সেখানে ইংরেজি, লোকপ্রশাসন, পলিটিক্যাল স্টাডিজ এবং সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছিল বলে সৈকতের ভাষ্য।
তিনি অভিযোগ করেন, “মারধরের সময় অনেকেই অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছে ।এছাড়া রুম থেকে বিছানাপত্র এবং বই বের করার সময় ওমর ফারুক আমার ড্রয়ারে হাত দিয়ে টাকা নিয়ে যায়।”
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, “রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে আমার ফোনে ফ্লাশ দিয়ে ফেরত দেয় এবং সকল ডাটা এবং ডকুমেন্ট নষ্ট করে ফেলে।
“এ সময় সীমান্ত হুমকি দিয়ে বলে- ‘তোর ভাগ্য ভালো যে তোকে জানে মারিনি। আর এসব যদি প্রশাসনের কানে যায়, তাহলে জানে মেরে ফেলব।”
নিরাপত্তার শঙ্কায় গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন বলে জানান সৈকত।
এদিকে একই ঘটনার মেহেদী ও সৈকতের বিরুদ্ধে ‘র্যাগিংয়ের’ পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন সীমান্তের সমর্থক হিসেবে পরিচিত পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত, মুনির, ইংরেজি বিভাগের একই বর্ষের রাহাত, নিজাম ও সমাজকর্মের মুবিন সিদ্দিকী।
প্রাধ্যক্ষকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে তারা বলেছেন, তাদেরকে ৪২০ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে মেহেদী ও সৈকত ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা’ করে। বিষয়টি সিনিয়রদের জানালে সবাইকে নিয়ে বসে এবং ৪২০ নম্বর কক্ষে তালা মেরে দেওয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা আজিজুল ইসলাম সীমান্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাতে হলে সিনিয়র-জুনিয়র ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দিই এবং হল প্রসাশনকে জানাই। প্রশাসন বলেছে, তারা সবার সাথে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করে দেবে।”
হল প্রাধ্যক্ষ আবু সাইদ আরফিন খাঁন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
তিনি ছাড়া অন্য দুই সদস্য হলেন: সহকারী প্রভোস্ট আব্দুল্লা আল ইসলাম ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলের সহকারী প্রভোস্ট ওয়াছেক মিয়া।
কমিটি দ্রুতই তদন্তের কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ।