“আজ বাজারের দোকানপাট খুলেছে। কিন্তু সবার মধ্যে অস্বস্তি, লোকজন বাজারে বের হচ্ছে কম,” বলেন একজন ব্যবসায়ী।
Published : 04 Apr 2024, 01:21 PM
বান্দরবানের থানচিতে দুই ব্যাংকে সশস্ত্র ডাকাতির পরদিন আতঙ্ক বিরাজ করছে এ পাহাড়ি জনপদে।
থানচি উপজেলা সদরে বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বৃহস্পতিবার সকালে খুলে দেওয়া হলেও লোক সমাগম একেবারেই কম।
থানচি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল এরকম ঘটনার পর আমরা সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা খুব আতঙ্কে ছিলাম। সে কারণে ফার্মেসির মত জরুরি দোকান ছাড়া সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছিল।
“আজ বাজারের দোকানপাট খুলেছে। কিন্তু সবার মধ্যে অস্বস্তি, লোকজন বাজারে বের হচ্ছে কম।”
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একদল সশস্ত্র লোক তিনটি গাড়ি নিয়ে এসে থানচি কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক শাখায় হামলা চালিয়ে টাকা লুট করে। কৃষি ব্যাংক থেকে দুই লাখ ৮ হাজার টাকা এবং সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা লুট করে নেয় তারা। ফিরে যাওয়ার সময় তারা গুলি চালিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে।
তার আগে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি এ জেলারই রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকের শাখায় হামলা চালায়। তারা ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করে। টাকা ও পুলিশের অস্ত্র লুট করার পাশাপাশি অপহরণ করে নিয়ে যায় ওই শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে। তার হদিস এখনো মেলেনি।
এসব ঘটনায় পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বা বম পার্টির ‘সংশ্লিষ্টতা’ পাওয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
থানচির বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী বলেন, বুধবার ছিল সাপ্তাহিক বাজার। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে লোকজন মালামাল নিতে এসেছিলেন। বেলা সোয়া ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে তিনটি গাড়িতে করে কয়েকশ লোক আসে। তার মধ্যে দুটি গাড়ি থেকে নেমে তারা দুই ব্যাংকে যায়। একটি গাড়ি ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।
বুধবার সাপ্তাহিক বাজার থাকায় দুই ব্যাংকেই অনেক গ্রাহক ছিলেন। সোনালী ব্যাংকে প্রবেশ করে হামলাকারীরা ম্যানাজারকে খুঁজতে থাকে। না পেয়ে ক্যাশ বাক্সে থাকা টাকা নিয়ে যায়।
সশস্ত্র দলটির সঙ্গে কয়েকজন নারীও ছিলেন জানিয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, “দলটির লোকজন খাকি পোশাক পরে ছিলেন। আমাদের ধারণা, তারা কুকি-চিন পার্টির সদস্য।”
ব্যাংক লুট শেষে সশস্ত্র দলটি থানচি বাজারে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে এবং গাড়িতে চেপে চাঁদাপাড়া এলাকার সড়কের দিকে চলে যায় বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।
পাহাড়ে নববর্ষ ও ঈদের আগে দুই উপজেলায় এমন ঘটনায় ভয় ছড়িয়ে পড়ে পার্বত্য তিন জেলার ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জড়িত সবার মধ্যে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে প্রতিটি ব্যাংকই তাদের শাখাকে সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়।
দিনে-দুপুরে অস্ত্র নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ব্যাংক ডাকাতির পর বান্দরবানের থানচির রাস্তা-ঘাট ফাঁকা হয়ে যায়, ওষুধ আর খাবারের মত জরুরি পণ্যের দোকান ছাড়া বেশিরভাগ দোকানেই তালা ঝুলতে দেখা যায় বুধবার বিকালে।
থানচি বাজারের এক ব্যবসায়ী বৃহস্পতিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণ সময়ে যে ধরনের লোক সমাগম বাজারে হয়, আজকে তার অর্ধেকও নেই। মানুষের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে। পাহাড়ি বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করতে আসেন, তাদের সংখ্যাও খুব কম।”
প্রতি রবি ও বুধবার থানচি বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসে। ওই দুই দিন শতাধিক বোটে করে মালামাল আসে। সাধারণ সময়ে আসে ২৫ থেকে ৩০টি বোট। বৃহস্পতিবার ১০টি বোটও দেখা যাচ্ছে না।
সামনে পাহাড়িদের বর্ষবরণের অন্যতম উৎসব সাংগ্রাই। সেই উৎসব ঘিরে বাজারে বিকিকিনি অনেক বাড়ে। বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে লোকজন বাজারে আসে কেনাকাটা করতে।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, “আগামী রোববার সাপ্তাহিক বাজার। আমরা শঙ্কায় আছি, মানুষজন এবার বাজার করতে আসবে কিনা।”
স্থানীয় এক ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুধবার পাহাড়ি যে সশস্ত্র গোষ্ঠী ব্যাংক লুট করেছিল, তারা গাড়ি নিয়ে চাঁদার পাড়া হয়ে শাহজাহান পাড়ার দিকে গেছেন বলে তারা শুনছেন। বাজার থেকে ওই এলাকার দূরত্ব আড়াই-তিন কিলোমিটার।
“অস্ত্রধারী লোকজন এখনও ওই এলাকায় থাকতে পারে। তাই আমাদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে।”