জাহাঙ্গীরের অনিয়ম খুঁজতে গাজীপুর নগর ভবনে তদন্ত কমিটি

গত বছরের ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়, ছয়দিন পর তাকে গাজীপুরের মেয়র পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।

বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে গাজীপুর নগর ভবনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

গাজীপুরের বরখাস্ত মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে সেখানকার নগর ভবনে বিভিন্ন নথি যাচাই ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি।

শনিবার দিনভর বিভিন্ন নথিপত্রের কপি সংগ্রহের পাশাপাশি গাজীপুরে বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনও করেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

পরে সন্ধ্যায় নগর ভবনে তদন্ত কমিটির প্রধান মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী সাংবাদিকদের জানান, কমিটির সদস্যরা নথিপত্র পর্যালোচনা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন। কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ উঠলে গত বছরের ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীরকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলের সদস্যপদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।

২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে ‘ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতি বছর হাট-বাজার ইজারার অর্থ যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ’ নানাবিধ অভিযোগ তোলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এসব অভিযোগ তদন্তে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন অনুবিভাগ) মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। অন্য দুজন হলেন, সদস্য যুগ্ম সচিব অনুপম বড়ুয়া ও উপ-সচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।

এই কমিটি গত জানুয়ারি থেকে প্রায় সাত মাস ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ের কমিটির সদস্যরা গাজীপুরে বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন, ভুক্তভোগীদের আলাপ ও তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে সেগুলো পর্যালোচনা করেছেন। মেয়র জাহাঙ্গীরের শুনানিও গ্রহণ করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির প্রধান মোস্তাকীম বিল্লাহ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি।

“ইতোমধ্যে একবার জাহাঙ্গীর আলমেরও বক্তব্যও শোনা হয়েছে। তিনি লিখিতভাবে জবাব দিয়েছেন। আমরা সেটিও যাচাই করছি। প্রয়োজন হলে আবারও তার বক্তব্য নেওয়া হবে।”

বদলি হওয়ার কারণে তদন্ত কমিটির সদস্য অনুপম বড়ুয়া শনিবার নগর ভবনে উপস্থিত ছিলেন না। অন্য সদস্যরা সিটি করপোরেশনের সচিব মো. আব্দুল হান্নান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আকবর হোসেন, প্রকল্প পরিচালক মজিবুর রহমান কাজল, হিসাব রক্ষক গোলাম কিবরিয়া ও কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন।

জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ দুদকও তদন্ত করছে। বিষয়টি নিয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতসহ ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেনের একটি অভিযোগ অনুসন্ধানের কার্যক্রম চলছে দুদকে।”

জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের পর থেকে গাজীপুর সিটির প্যানেল মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন আসাদুর রহমান কিরণ।