এ নিয়ে গত চার দিনে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ মোট ৩২৭ জন পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন।
Published : 07 Feb 2024, 01:31 PM
মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের মধ্যে গোলাগুলি কিছুটা কমলেও নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির আরো ৬৩ জন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুধবার কক্সবাজারের টেকনাফের উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের ওই সীমান্তরক্ষীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। পরে তাদের হেফাজতে নেয় বিজিবি।
এ নিয়ে গত চার দিনে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ মোট ৩২৭ জন পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন।
হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত কিছুটা কমেছে। গত রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় গোলাগুলির শব্দ কমেছে। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটা শব্দ শোনা গেলেও বিস্ফোরণের শব্দ প্রায় নেই। এর মধ্যেই বেলা ১২টার দিকে উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে ৬৩ জন ঢুকেছে।”
এ ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম লালু বলেন, “আজ বেলা ১১টার দিকে কিছুক্ষণ গোলাগুলির পর মিয়ানমার থেকে কিছু বিজিপি সদস্য ছত্রভঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করে। পরে বিজিবি সদস্যরা তাদের নিরস্ত্র করে বাংলাদেশে ঢোকায়।”
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।
বাহিনীগুলো হল- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ। তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা সাফল্য দেখিয়েছে।
আরাকান আর্মি (এএ) এ জোটের অন্যতম অংশ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী এটি। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।
টানা কয়েক দিনের যুদ্ধের এক পর্যায়ে আরাকান আর্মির সদস্যরা শনিবার বিজিপির কয়েকটি ক্যাম্প দখল করে নিলে পরদিন সকালে শুরু হয় অনুপ্রবেশ। প্রথম ১৪ জন বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। পরে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে।
সোমবার কক্সবাজারের পালংখালীর রহমতের বিল এলাকা দিয়ে আসেন আরো শতাধিক বিজিপি সদস্য। সব মিলিয়ে বিজিবির হেফাজতে থাকা অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ৩২৭ জনে পৌঁছায়।
এদিকে মিয়ানমার থেকে সোমবার বান্দরবানের ঘুমধুমে মর্টার শেল এসে পড়লে এক নারীসহ দুজনের প্রাণ যায়। মঙ্গলবারও ঘুমধুম ও পালংখালী সীমান্ত এলাকায় মার্টার শেল ও গোলার আঘাতে অন্তত পাঁচজনের আহত হওয়ার খবর জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। অনেকের বাড়িঘরে গুলি এসে পড়ে।
এসব ঘটনায় ঘুমধুম ও পালংখালী সীমান্ত এলাকায় চলছে আতঙ্ক। সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি এবং সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠছেন।
কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত সংলগ্ন ওইসব এলাকায় এক লাখের বেশি বাসিন্দা এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। তাদের নিরাপদ দূরত্বে স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টারে সরিয়ে নিতে কাজ করছে প্রশাসন।
এ পরিস্থিতির মধ্যে বুধবার সকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা এবং আশপাশের বিজিবি ফাঁড়ি পরিদর্শন করেন এ বাহিনীর প্রধান আশরাফুজ্জামান।
পরে তিনি ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে হাজির হন। মিয়ানমার থেকে আসা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যদের ওই স্কুলেই বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে।
মহাপরিচালক বলেন, বিজিবি হেফাজতে যারা আছেন, তাদের মধ্যে চারজন নারী ও শিশু রয়েছেন; তারা দুজন বিজিপি সদস্যের পরিবার। ৮ জন আহতকে চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নেবে জানিয়ে বিজিবি প্রধান বলেন, “গত দুই দিনের তুলনায় বুধবার ফায়ারিং এর পরিমাণ একটু কম। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ হচ্ছে।… আমরা সেই বিষয়ে পরামর্শ করেছি এবং যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি।”