তবে প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের বিষয়ে পুলিশ বলছে তেমন কিছু না।
Published : 03 Mar 2024, 09:55 PM
শরীয়তপুরের জাজিরায় গুলিতে কিশোর খুনের মামলার প্রধান আসামিকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। হত্যার জেরে প্রতিপক্ষের বাড়ি-ঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
রোববার সকালে নিহতের স্ত্রী লিমা মাহমুদ বাদী হয়ে ৩৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫/২০ জনকে আসামি করে জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বলে পুলিশ জানায়।
গত ২ দিনেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
শুক্রবার রাতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় ২০২০ সালের রিয়াজ নামে এক কিশোরকে গুলি করে হত্যার প্রধান আসামি রাসেল বেপারী ওরফে মন্টু বেপারীকে (৫৩) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে উপজেলার মুলনা বিয়ে বাড়ি থেকে শুক্রবার রাতে ফেরার পথে সেনেরচর চরদুপুরিয়া মাদবরকান্দি গ্রামে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মন্টু সেনেরচর ইউনিয়নের ভোলাই মুন্সীকান্দি গ্রামের আরশেদ আলী বেপারীর ছেলে।
এদিকে ঘটনার রাতেই প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িতে তাণ্ডব চালানো হয়।
যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছিল, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শনিবার রাতে প্রতিপক্ষের আব্দুল করিম মাস্টার এবং জাহাঙ্গীর মুন্সীদের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। আলমারি ও অন্য আসবাবপত্রের ড্রয়ার ভেঙে নিয়ে যাওয়া হয়েছে টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান সম্পদ।
এছাড়া একটি ঘরের ভেতরে থাকা আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পোড়া চিহ্নও পাওয়া যায়।
প্রত্যেকটি ঘরে ব্যাপক আকারে তাণ্ডব চালানোর চিত্র স্পষ্ট হয়ে আছে।
যদিও রাতভর ওই এলাকায় টহল দেওয়া হয়েছে বলে দাবি জাজিরা থানা পুলিশের। অথচ পুলিশের টহল দেওয়া ছোট্ট এলাকাটির কয়েক মিনিটের দূরত্বের মধ্যেই রয়েছে তাণ্ডব চালানো বাড়িগুলো।
জাহাঙ্গীর মুন্সীর স্ত্রীর অভিযোগ, রাত ১২টার সময় মন্টু বেপারীর ভাগনে ফারুক সরদারের নেতৃত্বে অন্তত শতাধিক লোকজন তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে তার ঘাড়ে রামদা ধরে এবং হাত পেছনে বেঁধে রেখে ঘরের মধ্যে ভোর পর্যন্ত ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
এ সময় গলায় থাকা সোনার চেইন, কানের দুল এমনকি নাকফুল পর্যন্ত জোর করে খুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে ওই নারীর অভিযোগ।
আব্দুল করিম মাস্টার বলেন, “আমি এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জানি না। তার বিরুদ্ধে আমার মামলা চলমান রয়েছে। অথচ আমাদের বাড়িতে ব্যাপক লুটপাট করে আবার আগুন জ্বালিয়ে ঘর পুড়িয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করেছে তারা।”
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে মন্টু বেপারীর ভাগনে ফারুক সরদারের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে ওই রাতে সেখানে টহল দেওয়া জাজিরা থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা সারারাত সেখানে টহল দিয়েছি এবং যেখানেই কেউ সমস্যা করার চেষ্টা করেছে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করলে আমরা গিয়ে আগুন নিভিয়ে দিই। তবে জাহাঙ্গীর মুন্সীর বাড়িতে কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা তা আমরা জানি না।”
জাজিরা থানার ওসি মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান কিছুই হয়নি দাবি করে বলেন, “সাধারণত হত্যাকাণ্ডের পরে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হয়ে থাকে। তবে আমাদের টহল জোরদার থাকায় তেমন কিছুই ঘটেনি। একজন অনলাইন সাংবাদিক শুধু একটি লেপ পোড়ানোর ভিডিও দেখাচ্ছেন। কিন্তু সরেজমিনে কিছুই পাই নাই। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
মন্টু বেপারীকে কোপানোর সময় গুরুতর আহত বাবু বেপারীর অবস্থার এখন ভালো বলে জানান ওসি।
আরও পড়ন-
শরীয়তপুরে খুনের মামলার প্রধান আসামিকে কুপিয়ে হত্যা
শরীয়তপুরে আহত ব্যক্তির মৃত্যুর গুজবে বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ