রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিশেল ব্যাশেলে, কথা বললেন নারী-শিশুদের সঙ্গে

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2022, 11:29 AM
Updated : 16 August 2022, 11:29 AM

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল।

চার ঘণ্টার সফরে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাসহ নানা বিষয়ে অবহিত হন। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টায় প্রতিনিধিদলটি উখিয়ার মধুরছড়াস্থ চার নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইউএনএইচসিআরের রেজিস্ট্রেশন সেন্টারে পৌঁছান বলে জানান অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা নয়ন।

সেখানে মিশেল ব্যাশেলেসহ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ১০ মিনিটের মতো অবস্থান করে রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা ওই ক্যাম্পের ইউএনএইচসিআরের ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টারের কার্যক্রম পরিদর্শনে যান।

এরপর সকাল ১০টায় চার নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-ব্লকের ওমেন সেন্টারে পরিদর্শনে যান। এ সময় সেখানে ২০ জন নারীর সঙ্গে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং ক্যাম্পের পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।

আলোচনায় অংশ নেওয়াদের মধ্যে আমেনা খাতুন নামের এক নারী বলেন, হাই কমিশনারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং ক্যাম্পের পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চায়। নারীরা প্রতিনিধিদলটিকে অবহিত করেন, বর্তমানে ক্যাম্পে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা আগের চেয়ে কমেছে। নারীদের অপহরণ করে ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন কমেছে। তবে কিছু দুর্বৃত্তের কারণে নারীরা এখনও আতঙ্কিত থাকেন। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

একই ধরনের তথ্য জানিয়ে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপে অংশ নেওয়া অপর নারী গোল বাহার বলেন, মিয়ানমারের অন্য জাতিগোষ্ঠীর মতো নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি পেলে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যাবেন।

এদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় চার নম্বর বর্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্র্যাকের কমিউনিটি সেন্টার পরিদর্শনে যান প্রতিনিধিদলটি। সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে নয়জন ধর্মীয় নেতা এবং নয়জন যুবকের সঙ্গে আলাপ করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

আলোচনায় অংশ নেওয়া মৌলভী নাজির আহমদ জানান, প্রতিনিধিদলটিকে মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নয়ন, রোহিঙ্গা অধিকার নিশ্চিত হলে স্বদেশে ফেরত যাওয়ার আগ্রহের কথা অবহিত করেছেন। বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান।

আরেক ধর্মীয় নেতা হাফেজ রশিদ আহমদ বলেন, প্রত্যাবাসনের চলমান প্রক্রিয়ায় নাগরিক অধিকার নিয়ে স্বদেশে ফেরার ব্যাপারে রোহিঙ্গারা এখনও আশ্বস্ত হতে পারেননি। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধান ছাড়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরবে না।

যুবক মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, প্রতিনিধিদলটিকে ক্যাম্পকেন্দ্রিক সংঘবদ্ধ অপরাধীর তৎপরতা, হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মাদক ব্যবসাসহ সার্বিক পরিস্থিতির কথা জানানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়।

পরে সকাল সোয়া ১১টায় মিশেল ব্যাশেলের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ২০ নম্বর বর্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিদর্শনে যান। সেখানে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

সবশেষে বেলা সাড়ে ১২টায় চার নম্বর বর্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টার পরিদর্শনে যান প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সেখানে রোহিঙ্গা শিশু ও শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রম সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করেন।

এরপর দুপুর ১টায় প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারের উদ্দেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ত্যাগ করেন। প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজার পৌঁছে দুপুর ২টায় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে বিকালে বিমান যোগে ঢাকায় ফিরবে প্রতিনিধিদল।

ছয় সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলে ছাড়াও ওএইচসিএইচআরের হেড অব এশিয়া প্যাসিফিক সেকশনের রোরী মংগুভেন, ওএইচসিএইচআরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি, ওএইচসিএইচআরের মিডিয়া এক্সপার্ট অ্যান্থনি এভারেট হেডলি, ইউএনআরসিওর ঢাকার জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান ও জাতীয় মানবাধিকার কর্মকর্তা জাহিদ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন:

Also Read: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান আসছেন রোববার

Also Read: ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান