পথচারীরা বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে টর্চের আলো ফেলে শেকল দিয়ে হাত পা বাঁধা অবস্থায় তাকে দেখতে পায়।
Published : 10 Oct 2022, 12:10 PM
বরিশাল জেলা ছাত্রদলের ১ নম্বর সহসাধারণ সম্পাদক ফোরকান হোসেন ইরানকে শিকল দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উজিরপুর উপজেলার এক জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে; যাকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়েছিলো বলে তার পরিবারের অভিযোগ।
উজিরপুর মডেল থানার ওসি কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের নারায়ণপুর এলাকার একটি মসজিদ সংলগ্ন জঙ্গল থেকে রোববার রাত ৮টার দিকে স্থানীয়রা ফোরকানকে উদ্ধার করেন।
উজিরপুর উপজেলার ধামুরা এলাকার আলম চাঁন সরদারের ছেলে ফোরকান বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ-এর বিবিএর ছাত্র। তিনি বরিশাল নগরীর গোড়াচাঁদ দাস সড়কে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন।
শনিবার রাত ১০টার দিকে নগরীর ঈশ্বর বসু সড়কের প্রবেশ মুখ থেকে এ ছাত্রদল নেতাকে সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন তার চাচাতো ভাই রাব্বি।
ওসি কামরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ৯৯৯ এর মাধ্যমে ফোরকানকে জঙ্গল উদ্ধার করা হয়েছে বলে তারা জানতে পারেন। পরে তাদের একটি দল ফোরকানের পরিবারকে খবর দেয়। এরপর রাত ১২টার দিকে তাকে তার মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী নারায়ণপুর গ্রামের মো. মন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রোববার রাত ৮টার দিকে পথচারীরা বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে টর্চের আলো ফেলে শিকল দিয়ে হাত পা বাঁধা এবং গেঞ্জি গলায় পেঁচানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে ফোরকানকে উদ্ধার করে। পরে তারা থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে ফোরকানের আত্মীয় স্বজনকে খবর দেয়।
তিনি বলেন, “ফোরকান আমাকে জানায় যে, অজ্ঞান অবস্থায় তাকে এখানে ফেলে রাখা হয়। গলায় পেঁচানো গেঞ্জি দিয়ে তার মুখ বাঁধা ছিলো। জ্ঞান ফিরলে নড়াচড়া করলে গেঞ্জি মুখ থেকে সরে গেলে সে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করেছে।”
ফোরকানের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি জানিয়ে মন্টু আরও বলেন, এলাকাবাসী সন্ধ্যার পর দুইটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস প্রবেশ করতে দেখেছেন। তাদের ধারণা, মাইক্রোবাসে করে ফোরকানকে এনে ফেলে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ফোরকানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
কোতেয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সগীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছাত্রদল নেতা ফোরকানকে গত শনিবার রাত ১০টায় একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার অভিযোগ দেয় তার চাচাতো ভাই রাব্বি।
“ঘটনার সময় ফোরকানের সঙ্গেই ছিলেন রাব্বি। পরে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সাজানো ঘটনার রহস্য ফাঁস হওয়ায় বিষয়টি টের পেয়ে এখন উদ্ধারের নাটক করেছে। আমাদের হেফাজতে থাকা রাব্বিকে তার পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।”
ফোরকানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তের দায়িত্বে থাকা কোতয়ালি মডেল থানার এসআই আরাফাত হাসান বলেন,“তাদের দাবি অনুযায়ী, রাত ১০টায় ফোরকানকে তুলে নেওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমাদের কাছে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। সেদিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে একটি ফুটেজে দেখা গেছে একটি অটোরিকশা থেকে নেমে রাব্বি একদিকে ও ফোরকান আরেক দিকে চলে যায়।”
এসআই আরও বলেন, ঘটনার পর রাব্বি তাদের পরিবারকে কিছু না জানিয়ে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুলকে জানিয়েছে। তার পরামর্শেই রাব্বি থানায় অভিযোগ দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “আমাকে ফোরকানের ফোন দিয়ে রাব্বি বিষয়টি জানানোর পর তার পরিবার ও পুলিশকে জানাতে বলেছি। এর বেশি কিছু জানি না।”