বিসিকের তথ্যের বরাতে জেলা প্রশাসক জানান, চাহিদার তুলনায় লবণের উৎপাদন বেশি আছে।
Published : 25 Jun 2023, 09:36 AM
একদিকে চামড়ার দরপতন অপরদিকে লবণের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সংকটে পড়েছেন যশোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়া কেনা-বেঁচা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
অপরদিকে জেলার লবণ ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির জন্য দুষছেন কক্সবাজারের সিন্ডিকেটকে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাট। এখানে ছোট-বড় মিলে তিন শতাধিক চামড়ার আড়ৎ রয়েছে।
সারা বছরই এ হাটে চামড়া বেচাকেনা হলেও কোরবানির ঈদের মৌসুমি বাজার ধরতে অপেক্ষায় থাকেন ব্যবসায়ীরা। তবে এবার ঈদের আগেই ব্যবসায়ীদের মাঝে হতাশা নেমেছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে চামড়া সংরক্ষণের প্রধান অনুষঙ্গ লবণের দাম।
রাজারহাটে চামড়া নিয়ে আসা মন্টু বিশ্বাস বলেন, “আমি প্রতি হাটে ৫০ থেকে ৭০ পিস করে চামড়া নিয়ে আসি। আজ ১০ পিস মাল নিয়ে এসেছি, আমার স্রেফ দুই হাজার টাকা লস।
যে মাল ৫০০ টাকা দাম আজ তার দাম ৩০০ টাকা। যে মালের দাম ৮০০ টাকা আজকে বেচাকেনা হচ্ছে ৬০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। আবার লবণের মূল্য এখন সব থেকে বেশি। ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা বস্তা লবণ।
“আমাদের এক একটা চামড়ার পিছনে আমাদের দেড়শ-দুইশ টাকা খরচ হয়। সে হিসেবে এখন চামড়ার থেকে লবণের দাম বেশি।”
অপর ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ বলেন, “চামড়া ভালো রাখতে গেলে লবণ লাগবেই। চামড়ার অরজিনাল জীবনই হচ্ছে লবণ। এই লবণ নিয়েই আমরা সংকটে আছি।
“গত বছর আমরা লবণ কিনেছি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বস্তা। আর এ বছর ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা বস্তা। চামড়া নিয়ে আমরা সাত-আট বছর ধরে সংকটে আছি। এই চামড়ার দিকে যদি সরকার একটু তাকায়, আর এই লবণের দিকে, তাহলে ব্যবসা একটু ভালো হবে।”
হাটে ছাগলের চামড়া নিয়ে এসে হতাশ নির্মল দাস বললেন, “আজকে এই কানে মুড়া দিয়ে যাচ্ছি এই হাটে আর আসব না। ১৩০-৪০ টাকায় যা বেচি আজকে তা বেচেছি ৭৫ টাকায়। ১৩-১৪ (২০১৩-১৪) সালের থেকে কুমতি কুমতি আজকে এই পর্যন্ত এসেছে।”
রাজারহাটের চামড়ার আড়ৎদার হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, “চামড়ার বাজার দিন দিন কমে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৭০ কেজির এক বস্তা লবণ যদি এক হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয় তাহলে এই ব্যবসায় আমাদের খুব সমস্যায় পড়তে হবে।”
বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, “দিনমজুরদের মূল্য বৃদ্ধি এবং লবণের দাম- সব মিলিয়ে একটা খারাপ অবস্থার মধ্যে আমরা দিন পার করছি। এবারে যে পরিমাণ গরম তার মধ্যে যদি কাচা চামড়া সংরক্ষণ করতে হয়, সেক্ষেত্রে সময়মত চামড়ায় পর্যাপ্ত লবণ দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান সময়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের চামড়া ক্রয়ের ক্ষমতা নেই। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই তাদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করার।”
তবে যশোরের লবণের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বৃদ্ধিতে তাদের কোনো ভূমিকা নেই।
রাজারহাট এলাকার পাইকারি লবণ বিক্রেতা ইমরান হোসেন পাপ্পু বলেন, “আমরা কক্সবাজার থেকে লবণ আনি। প্রতি বছরই আনি। লবণের দাম বস্তাপ্রতি ৭০০ টাকা থাকলে কোরবানির সময় পাইকারিতে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা হয়ে যায়।”
“কক্সবাজারে যারা লবণের সিন্ডিকেটে আছে তারা লবণের দাম বাড়িয়ে দেয়। লবণের মহাজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই বলছে লবণ নেই, লবণ সংকট। আমি যেটা মনে করি কোরবানির আগে লবণের দাম আর কমবে না।”
তিনি জানান, সাধারণত প্রতি হাটে ৫০ বস্তা করে তার লবণ বিক্রি হয়। কিন্তু কোরবানি ঈদের পরের প্রথম হাট থেকে শুরু করে পরের ২/৩টি হাটে প্রায় এক হাজার বস্তা করে লবণ বিক্রি হয়।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা বাজার মনিটর করব। বিসিকের তরফ থেকে আমরা যেটা জানি- এই মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় লবণের উৎপাদন বেশি আছে। বাজারে কোনো ক্রাইসিস হবে না। লবণের সরবরাহ পর্যাপ্ত আছে।
“বিসিকের কর্মকর্তা, ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ, উপজেলায় নির্বাহী অফিসার ও পুলিশ সবাই মিলে এটা মনিটর করব। আশা করি সমস্যা হবে না।”
তিনি বলেন, পশুর হাটে যাতে লবণ কেনা-বেচার ব্যবস্থা থাকে সেটি আমরা চেষ্টা করব। আমাদের ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) এবং হাটের ইজারাদার যারা আছেন তাদের মাধ্যমে আমরা এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। সবাইকে অনুরোধ করব যারা পশু কিনবেন একইসঙ্গে তারা যেন লবণও ক্রয় করেন।”