আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঘর হস্তান্তর নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কিছুই করার ক্ষমতা নেই বলে জানান ইউএনও।
Published : 08 Oct 2023, 01:04 PM
চার বছর ধরে মামলার জটিলতায় আটকে রয়েছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৩টি ঘর। ঘরগুলো ব্যবহার না হওয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় সেগুলো নষ্ট হচ্ছে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছে, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রশাসন তাদেরকে ঘর বুঝিয়ে দিতে পারছে না।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু বলেছেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাদের কিছুই করার নেই।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার বছর আগে মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষ্যে উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের ১ নম্বর খতিয়ানের ৫৯২০ দাগে ২০টি এবং ষোলটাকা ইউনিয়নের কাষ্টদহ গ্রামের ভূমিহীন ছিন্নমূল পরিবারের জন্য তিনটি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।
কাষ্টদহ গ্রামের তিনটি ঘরের নির্মাণ কাজ ৪০ শতাংশ শেষ হওয়ার পর স্থানীয় প্রভাবশালী আবুল কাশেম আদালতে জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করেন। তারপর প্রশাসন ঘর নির্মাণ বন্ধ করে দেয়।
অপরদিকে মোহাম্মদপুর গ্রামের ২০টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হলে প্রশাসন সেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। ঠিক তখনই বাধার মুখে পড়ে প্রশাসন।
গ্রামের প্রভাবশালী সাবেক সেনা সদস্য আবুল হোসেন ১ নম্বর খতিয়ানের ৫৯২০ দাগের ওই জমি নিজের দাবি করে মামলা করলে আদালত স্থগিতাদেশ দেয়। এতে নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও ২০টি ঘর গৃহহীনদের কাছে হস্তান্তর বন্ধ হয়ে যায়।
উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের পশ্চিমে মরা নদীর পাড়ে একটি মাঠের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে নতুন নির্মিত ২০টি চারচালা ঘর অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
সব ঘরের জানালা, দরজা খোলা। ঘরের ভেতর নতুন রঙ করা দেওয়াল দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এগুলো এখন মাদকসেবীদের আখড়া হয়ে উঠেছে।
বিভিন্ন ঘরের পানি নিষ্কাশন এবং আবর্জনা পরিষ্কারে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের সব পাইপ উধাও হয়ে গেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প এখন গবাদিপশুর আবাসস্থলও হয়ে উঠেছে।
এই প্রকল্পে প্রতিটি ঘর তৈরি করতে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে। অথচ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা ঘরগুলো সংরক্ষণের জন্য কোনো লোক নেই।
মোহাম্মদপুর গ্রামের মহেরুন নেছা বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। জমিজমা নেই। ঘরগুলো পেলে ছেলি-পেলি নিয়ে একটু শান্তিতে বাস করতে পারতাম।”
আলফাতুন খাতুন জানান, সরকার তাদের জন্য ঘর বানিয়ে দিয়েছে ঠিকই। এখন প্রশাসন তাদের বুঝিয়ে না দেওয়ায় তারা ঘরে উঠতে পারছেন না।
“ঘরের ভাড়া দিতে গিয়ে এখন মুখে ভাত উঠছে না। অথচ এসব ঘর পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। অনেক কিছু চুরি হয়ে যাচ্ছে।”
একই গ্রামের তকলিমা বেওয়া বলেন, “ঘর নাকি সরকারি জায়গায় না করে মানুষের জায়গায় করেছে। তাই জমির মালিকরা মামলা করেছে। এ কারণে চোখে ঘর দেখলেও সেখানে যেতি পারছে না।”
এদিকে মামলার বাদী আবুল হোসেন বলেন, “আমার বাপ-দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি এটা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসল ফলিয়েছি। লকডাউনের সময় হঠাৎ করে জোরপূর্বক আমার জায়গা দখল করে ঘর তৈরি করার চেষ্টা করে।
“পরবর্তীতে আমরা ওই ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ লাগাতে দেইনি। পরে মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করি। আদালত দলিলপত্র দেখে ২০টি ঘরের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।”
অন্যদিকে কাষ্টদাহ গ্রামের তিনটি ঘরের জমির মালিকানা দাবি করা আবুল কাসেম বলেন, “জমির একাংশের মালিক আমি। ওই জমিতে ভূমি অফিস অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করায় আদালতে মামলা করি। আদালত তিনটি ঘরের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
“সরকার অর্পিত সম্পত্তিতে ঘর না করে মানুষের সম্পত্তিতে ঘর করলে মানুষ কি ছেড়ে দেবে?”
এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু বলেন, “আমরা জমির সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদালতে জমা দিয়েছি। জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় দুইজন আদালতে মামলা করেছে। তাই গৃহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া আটকে গেছে।”
খুব শিগগিরই আদালতের রায় হওয়ার কথা রয়েছে; বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ২৩টি ঘর হস্তান্তর নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কিছু করার ক্ষমতা নেই বলে জানান ইউএনও।