বারবার ডেকেও কেন শিক্ষার্থী পাচ্ছে না শাবিপ্রবি

১০৮টি আসন খালি রেখেই গুচ্ছের চূড়ান্ত ভর্তি শুরুর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2023, 01:21 PM
Updated : 22 Jan 2023, 01:21 PM

তালিকা ধরে একে একে সাত ধাপে ডেকেও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী পাচ্ছে না; প্রতিষ্ঠার ৩১ বছরে কখনও এ সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি সিলেটের এই বিদ্যায়তনকে।  

শেষ পর্যন্ত ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ দিয়েও কাজ না হওয়ায় ১০৮টি আসন খালি রেখেই গুচ্ছের চূড়ান্ত ভর্তি শুরুর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যদিও এজন্য ‘গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি এবং সমন্বয়হীনতাকে’ দায়ী করছেন শিক্ষকরা। 

স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার জানান, চূড়ান্ত ভর্তি কার্যক্রম সোমবার থেকে শুরু হয়ে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। 

ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল মার্কশিট নিয়ে আসতে হবে; সেটি না থাকলে মূল সনদ আনতে হবে। 

ভর্তি কমিটির টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মো. মাসুম বলেন, “গুচ্ছের প্রাথমিক পর্যায়ে সপ্তম ধাপেও সিট পূর্ণ না হওয়ায় গণবিজ্ঞপ্তি আকারে বড় তালিকা তৈরি করে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী ডেকেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অষ্টম ধাপে ডাকার পরেও ১০৮টি সিট খালি রয়েছে।” 

বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে মোট এক হাজার ৫১টি আসন রয়েছে; এর মধ্যে ১০২টি সিট খালি। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে ৬১৫টি আসনের মধ্যে মানবিকে দুটি এবং বাণিজ্য অনুষদে চারটি আসন খালি রয়েছে। 

উচ্চ শিক্ষার প্রসারে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৯২ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় সিলেটে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। পথচলার তিন দশকে এসে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সাতটি অনুষদের ২৭টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান রক্ষা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের প্রথম দিকের তালিকাতেই থাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

কিন্তু এবারই তার ব্যতিক্রম হলো; সাত ধাপে তালিকা প্রকাশ আর একবার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও কোটা পূরণ করতে পারেনি উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি।  

এ বছর কেন এমন হলো- জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মহিবুল আলম কারণ হিসেবে গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি এবং এর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন। 

রোববার সন্ধ্যায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাবির ইতিহাসে এই প্রথম আট ধাপে ডেকেও ১০৮টি সিট খালি রয়েছে। এর আগে কখনও এরকম হয়নি। সর্বশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে দিয়েও এই সিটগুলো পূর্ণ হয়নি।“ 

অধ্যাপক মহিবুল আলম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাটা যদি আগে হয় তাহলে ভালো ছাত্ররা আগ্রহ পাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। কারণ হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চুয়েট, রুয়েটসহ প্রথম সারির অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষাগুলো আগে হয়ে যায়। এজন্য ভালো ছাত্রদের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে অনীহা দেখা গেছে। তাদের অনীহা বেড়ে যাচ্ছে। কারণ সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।” 

“বড় কারণ হচ্ছে, আমাদের সমন্বয়ের অভাব। কারণ, এখন দেখা যাচ্ছে, একজন ছাত্র গুচ্ছের পরীক্ষার পর পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন করলে সে যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো সাবজেক্ট পেলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে। আবার অন্য একজনের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে না। এটার মূল কারণ সমন্বয়হীনতা।” 

এ ছাড়া এখন অভিভাবকরাও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে বলে মনে করেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্সের এই শিক্ষক।

তিনি বলেন, “কারণ একজন ছাত্র গুচ্ছের পর পাঁচটি ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করার পরও সমন্বয়হীনতার কারণেও সিট পাচ্ছে না। সিট না পাওয়ার কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন, আশাহীন হয়ে পড়েছেন।” 

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। 

তিনি বলেন, “আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সবার যেমন উপলব্ধি ও বিশ্বাস ছিল সেটা এখন দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্বতা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।“ 

“আমি বলব, গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শাহজালালেরও উচিত ভর্তি পরীক্ষা বিভিন্ন বিভাগে নেওয়া। তাহলে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় তার আগের অবস্থানটা ধরে রাখতে পারবে”, যোগ করেন অধ্যাপক মহিবুল। 

এবার বেড়েছে ভর্তি ফি 

স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ভর্তি ফি ১৫ হাজার টাকা। আগে জিএসটির মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে; চূড়ান্ত ভর্তির দিন শিক্ষার্থীদেরকে ১০ হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। 

কোনো শিক্ষার্থী অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থাকলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি রশিদ সঙ্গে আনতে হবে। যদি আগে জমা দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে আর জমা দিতে হবে না।

এদিকে ভর্তি ফি বাড়ানোয় ক্ষোভ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর রহমান বলেন, গুচ্ছের ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি ফি ছিল ৮ হাজার ৬০০ টাকা। এর আগে ১৯-২০ সেশনে ছিল ৮ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ সেশনে ছিল ৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীদের ফি ছিল ৬ হাজার ৮৫০ টাকা।

“এখন তা বাড়িয়ে ১৫ হাজার করা হয়েছে। কিন্তু এখন এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ। এবার সাড়ে ৬ হাজার টাকা বাড়নোটা অমানবিক ও অযৌক্তিক। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।” 

“এ ছাড়া দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন যাদের ভর্তিও অনিশ্চিত হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে”, যোগ করেন তানভীর।