খেয়া পারাপারও বন্ধ দেখে ফিরে যাচ্ছিলেন এক যাত্রী। তিনি বললেন, “কি কইতে কি কইয়া আবার বিপদে পড়মু।”
Published : 04 Nov 2022, 12:38 PM
মহাসড়কে অবৈধ যান বন্ধসহ কয়েকটি দাবিতে বরিশালে দুইদিনের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। সারাদেশের সঙ্গে এ জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন ও অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাবে নগরীর সব সড়ক ছিল ফাঁকা। নতুন বাজার এলাকায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয় টেম্পু (আলফা) চালক খোকনের সঙ্গে।
ধর্মঘটের কারণে আয় বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “দুইদিনে অন্তত দুই হাজার টাকা আয় হতো আমার। বাংলাদেশের জনগণ এখন কি এতো বোকা আছে? তারা বোঝে না, কি কারণে সব কিছু বন্ধ রাখা হয়েছে?।”
ধর্মঘটের কারণে বরিশালে লঞ্চ, বাস, মাইক্রোবাস ও তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে দুই একটি রিকশা ও মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোন যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। বন্ধ রয়েছে খেয়া পারাপারও। মোড়ে মোড়ে পুলিশ পাহারায় রয়েছে।
সকালে বরিশালের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সব কাউন্টার বন্ধ; বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। টার্মিনাল এলাকায় অন্য সময় মাহেন্দ্র-অটোরিকশা চালকদের হাঁকডাক থাকলেও শুক্রবার পরিবেশ ছিলো শান্ত।
বাস টার্মিনালের শ্রমিক নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাঁচ দফা দাবিতে শুক্র ও শনিবার বরিশাল থেকে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বাস মালিক গ্রুপ। নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দেশের সকল রুটে বাস চলে। ধর্মঘটের কারণে এখন সব বন্ধ।
বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, “উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মহাসড়কে অবৈধ কোন যানবাহন চলতে পারবে না। কিন্তু ওই নির্দেশ অমান্য করে অবৈধ যান চলছেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে আবেদন করেও কোন সাড়া মেলেনি। তাই নথুল্লাহবাদ থেকে বাস ও মাইক্রোবাস বন্ধ রয়েছে।”
একই দাবিতে বরিশাল নগরীর রুপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে ১৮টি রুটের ১১২টি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে শ্রমিকরা জানান। বাস বন্ধ থাকায় টার্মিনালের সামনে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে বরিশাল নৌ-বন্দর থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিএর বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানিয়েছেন।
কবির বলেন, “একটি লঞ্চে হামলার প্রতিবাদে ভোর থেকে বরিশাল-ভোলাসহ ১১টি রুটের ৩০টি লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে।”
যদিও লঞ্চ বন্ধের বিষয়ে মালিক বা শ্রমিক সমিতির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
একইভাবে বন্ধ রয়েছে বরিশাল-ভোলা, সদর উপজেলার তালতলী বাজার-পাতারহাট রুটের স্পিডবোট। নগরীর কীর্তনখোলা নদীর বেলতলা, চরকাউয়া ও চাঁদমারী ঘাট থেকে খেয়া পারাপারও বন্ধ।
ফিরোজ নামে এক যাত্রী স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চাঁদমারী ঘাটে এসে খেয়া পারাপার বন্ধের খবর জানতে পারেন। ফিরে যাওয়ার সময় বলেন, “দেশের সবই আস্তে আস্তে বন্ধ হইয়া যাইতেছে। এহন দেহি খেয়াও বন্ধ। কি কইতে কি কইয়া আবার বিপদে পড়মু।”
কীর্তনখোলা নদীর ব্যস্ততম চরকাউয়া খেয়াঘাটে গিয়ে কোনো খেয়া দেখা যায়নি। ছোট্ট একটি মাছ ধরার নৌকায় পাঁচ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে দেখা গেলো তিনজনকে।
তাদের মধ্যে লিমা নামের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “চাকরির পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। কিন্তু পরীক্ষা হয়নি। এখন কি করবো?। তাই বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও ফিরে যাচ্ছি।”
এদিকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশেকে কেন্দ্রে করে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে দলটির ‘বিপুল সংখ্যক’ নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বৃহস্পতিবার রাত থেকে অবস্থান করছেন। দুপুরে নেতাকর্মীদের খাবারের জন্য রান্নার আয়োজন চলছে। মাঠের চারপাশে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা মিছিল করছেন।
এবারের সমাবেশের প্রস্ততি কেমন জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, “বাধা দেওয়ার যত চেষ্টাই করুক না কেন, আমাদের গণসমাবেশ সফল হবে।”