কুমিল্লায় ১৭ ইউপিতে ইভিএমে ভোট, ‘ধীরগতির বিড়ম্বনা’

ইভিএম ভোট দিতে কোথাও কোথাও একজনের ১০ থেকে ১৫ মিনিটও সময় লেগেছে।

আব্দুর রহমানকুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2022, 03:40 PM
Updated : 29 Dec 2022, 03:40 PM

ভোটগ্রহণ শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা আগে থেকে বাইরে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছিল; কিন্তু ভোটারদের ভোট কক্ষে যেতে হয় শম্বুক গতিতে।

অনেকেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিতে বেশি সময় নষ্ট করছেন। কোথাও কোথাও একজনের ভোট দিতে ১০ থেকে ১৫ মিনিটও সময় লাগে।

এ সব কারণে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের উৎসাহে ভাটা ফেলে ধীরগতির বিড়ম্বনা। শুরু হয় ভোগান্তি আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট।

বৃহস্পতিবার [২৯ ডিসেম্বর] কুমিল্লার পাঁচ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়েছে। ইভিএমে ভোট গ্রহণের ধীরগতির সমস্যাই দিনভর ভূগিয়েছে ভোটারদের।

দিনভর সরেজমিনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার আদ্রা উত্তর ইউনিয়নের দক্ষিণ শাকতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও একটি বুথে প্রথম ভোট পড়েছে সকাল ৮টা ৪২ মিনিটে। আর ওই কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন ছিল। 

ওই কেন্দ্রের একটি বুথের সরকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী বলেন, মানুষ ইভিএমে ভোট দিতে এখনও পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। এজন্য কিছুটা ধীরগতিতে ভোটগ্রহণ চলছে। তবে নির্ধারিত সময় শেষ হলেও যারা লাইনে থাকবেন; তাদের ভোট নেওয়া হবে।

বেলা ১১টার দিকে ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা আমেনা বেগম নামে এক বৃদ্ধা নারী বলেন, “তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কিন্তু এখনও ভোট দিতে পারলাম না। তাই ভোট না দিয়েই চলে যাচ্ছি। অনেক ধীরে ধীরে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। কখনও কখনও একজনের ভোট দিতে ৫ থেকে ১৫ মিনিটও সময় লাগছে।”

পাশের শাকতলী হলি কেয়ার একাডেমিতে দেখা গেছে, ঘিঞ্জি পরিবেশে ভোটারদের দীর্ঘ সারি। সেখানেও ধীরগতির সমস্যায় ছিলেন ভোটাররা।

এদিকে, ধীরগতির সমস্যায় ভোটারদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ভোট দিতে কাউন্সেলিং করছেন একজন প্রিসাইডিং অফিসার।

বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে নাঙ্গলকোটের রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের মাহিনী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।

এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া ভোটকক্ষের বাইরে লাইনে এসে ডেমু মেশিন হাতে নিয়ে ভোটারদের কাউন্সেলিং করেন।

এ প্রসঙ্গে জাকারিয়া বলেন, “ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই নারী ভোটাররা ইভিএমে ভোট দিতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছিলেন। এছাড়া অনেকেই ভোট দেওয়ার নিয়মও জানেন না। তাই ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের কাউন্সেলিং করছি।”

নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। ইভিএমে কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক টেকনিক্যাল টিম তা সমাধান করে দিয়েছে। অভ্যস্ত না হয়ে ওঠায় কিছুটা ধীরগতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত সব ভোটারই ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্ব মাঠে বিপুল পরিমাণ পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্য কাজ করেছেন।

ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে নৌকার প্রার্থীর এজেন্ট আটক

নাঙ্গলকোটের একটি ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে নৌকার প্রার্থীর এক এজেন্ট আটক করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তাকে আটক করা হয়।

আটক মনোয়ার হোসেন মুন্না (৩০) নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল জলিলের নির্বাচনি এজেন্ট ছিলেন।

ওই ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমান জানান, ভোটে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে মুন্নাকে আটক করা হয়েছে।

ওই কেন্দ্রে থাকা জামাল হোসেন নামে এক মেম্বার প্রার্থী বলেন, “কেন্দ্রের ভোটকক্ষে তারা নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিতে জোর জবরদস্তি করতে থাকেন। আমার ভোটেও বাধা দিয়েছে। মানুষকে ঠিকভাবে ভোট দিতে দিচ্ছিল না। ম্যাজিস্ট্রেট এসে তাদের একজনকে আটক করে।”

প্রতিদ্বন্দ্বীর এজেন্টকে বের করার অভিযোগ নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে

ভোটগ্রহণ চলাকালে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টায় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

চশমা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের এজেন্ট মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী। খবরদার এখানে থাকবেন না – এ কথা বলে কেন্দ্র থেকে আমাকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুনুর রশীদ।”

সফিকুল ইসলাম আরও বলেন, “আমি জানি না তিনি কেন আমাকে বের করে দিলেন। পরে কেন্দ্রের বাইরে এসে মামুনুর আমাকে টেনেহিঁচড়ে নেওয়ার সময় মাফ চেয়ে এ যাত্রাই রক্ষা পাই।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুনুর রশীদ কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

তবে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “ওই এজেন্ট আমার কাছে কোনো অভিযোগ করেননি।”

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট উত্তর, রায়কোট দক্ষিণ, আদ্রা উত্তর, আদ্রা দক্ষিণ, জোড্ডা পূর্ব, জোড্ডা পশ্চিম, বটতলী ও দোলখাঁ ইউনিয়ন; লাকসাম উপজেলার বাকই দক্ষিণ, মুদাফফরগঞ্জ উত্তর, মুদাফফরগঞ্জ দক্ষিণ; লালমাই উপজেলার বাকই উত্তর, পেরুল উত্তর; বরুড়া উপজেলার ভাউকসার ও শাকপুর ইউনিয়ন; দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ও দৌলতপুর ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হয়েছে।

একইদিন জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ঝলম উত্তর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্যপদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠত হয়েছে।