২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল খেলাফত মজলিসের মহাসচিব গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১ অক্টোবর ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা আসে। পরে গত বছরের শেষে বিএনপি এই জোট বিলুপ্ত করে দেয়।
Published : 22 Jul 2023, 09:53 PM
হেফাজতের তাণ্ডবের পর গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বিএনপির দাবির সঙ্গে এখনও একমত। তারাও মনে করে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
শনিবার বিকালে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে দলের সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি জানানো হয়েছে।
এই দাবি তুলে ধরেন দলের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের, যিনি ১৯৮২ সালে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ‘সুখকর নয়’ মন্তব্য করে খেলাফত নেতা বলেন, “যখন যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করেছে। নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে সম্ভব সব রকম চেষ্টা করেছে।
“অপরদিকে দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলো জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। সুতরাং সংবিধানের দোহাই দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি উড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোয় হেফাজতে ইসলাম ২০২০ সালে বিভিন্ন জেলায় যে সংঘাতে জড়ায়, সে সময় আহমাদ আবদুল কাদের সংগঠনটির নায়েবে আমির ছিলেন।
২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন তিনি। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর ১ অক্টোবর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় দলটি। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ৯ ডিসেম্বর কাশিমপুর কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি।
এর মধ্যে হেফাজতে ইসলাম পুনর্গঠন হয়, সংগঠন থেকে বাদ পড়েন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই।
পাঁচ শরিক আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছেড়ে দেওয়ার পরের বছর ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে এই জোট ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়, যদিও জামায়াতের কুমিল্লা ইউনিটের রুকন সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে দলের আমির শফিকুর রহমান জানান, বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট আর নেই।
সরকারের পক্ষ থেকে সংবিধানের নির্বাচন ব্যবস্থার যে কথা বলা হয়, সেটিরও জবাব দেন খেলাফত নেতা। তিনি বলেন, “আপনারাই গায়ের জোরে সংবিধান পরিবর্তন করেছেন। তাই জাতির প্রয়োজনে আবারো সংবিধান সংশোধন করে নিরপেক্ষ সরকার অথবা জাতীয় সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে নামেই হোক তা সংবিধানে প্রতিস্থাপন করতে হবে। বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।”
বিএনপির মতোই নির্বাচন কমিশনও ঢেলে সাজানোর পক্ষে খেলাফত মজলিস।
আহমাদ কাদের বলেন, “নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রথম দায়িত্ব হবে, সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজানো এবং জনপ্রশাসনকে নিরপেক্ষ অবস্থানে নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।”
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “নিরপেক্ষ সরকার গঠন না করে জোর করে পাতানো নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় আবারও আসতে চাইলে বিপত্তি দেখা দেবে। আপনারা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে জাতিকে মুক্তি দিন।’’
দলের নায়েবে আমির মজদুদ্দিন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব এবিএম সিরাজুল মামুন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নূরুজ্জামান, সৈয়দ মুহিবুর রহমান, ছাত্র মজলিসের সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরী, শ্রমিক মজলিসের সভাপতি আবদুল করীম, যুব মজলিস নেতা তাওহীদুল ইসলাম তুহিনও এ সময় বক্তব্য দেন।
দলটি যে মাঠে সমাবেশ করেছে সেখানে গত ১৫ জুলাই সিলেট বিভাগীয় সমাবেশের ডাক দিলেও পুলিশের সায় না পেয়ে তা ২১ জুলাই পুনর্নির্ধারণ করে জামায়াতে ইসলামী। তবে সেদিনও তাদেরকে জমায়েত হতে অনুমতি দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।