রাজশাহীতে লিটনকে মোকাবিলায় এবার বুলবুলও নেই

পাঁচটি সিটি করপোরেশনের মধ্যে সিলেট, গাজীপুর ও বরিশালে বিএনপি নেতাদের ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হওয়ার আভাস মিলেছে। তবে রাজশাহীতে এমন কেউ নেই।

বদরুল হাসান লিটনরাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2023, 01:17 PM
Updated : 26 April 2023, 01:17 PM

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলেছে। তবে মেয়র পদে গতবারের বিজয়ী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারেন, এমন কেউ এখন পর্যন্ত ভোটে লড়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো স্থানীয় নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

দলের এই অবস্থানের মধ্যেও নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুজন বিএনপি নেতা ‘স্বতন্ত্র’ পরিচয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে মোকাবিলা করে হেরেছেন।

এবার তফসিল ঘোষণা হওয়া পাঁচটি সিটি করপোরেশনের মধ্যে সিলেট, গাজীপুর ও বরিশালে বিএনপি নেতাদের এ রকম ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হওয়ার আভাস মিলেছে। তবে রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত বিএনপির কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র পদে দল নিরপেক্ষ হয়ে লড়ার আভাস দেননি।

২০০৮ সালে লিটনের জয়ের পাঁচ বছর পর তাকে হারিয়ে মেয়র হওয়া বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না। আগামী সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ার ঘোষণা আসার পরেই আমরা অন্য নির্বাচন নিয়ে ভাবব। 

“আমি বা আমাদের সংগঠনের কোনো প্রার্থীও রাজশাহী সিটি নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন না। কেউ মাঠেও নামেননি।”

তফসিল অনুযায়ী আগামী ২১ জুন ভোট হবে উত্তরের এই নগরীতে। আর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ২৩ মে পর্যন্ত। সে হিসেবে লিটনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় আছে।

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, “দল থেকে আমি মনোনয়ন পেয়েছি। নির্বাচন করার প্রস্তুতি চলছে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারে নামব।”

তবে ১৯৯০ সালে সাবেক সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের পতনের পর তার দলের প্রভাব রাজশাহীতে দেখা যায়নি। দলটির প্রার্থীরা কখনও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে আসতে পারেননি। ফলে স্বপন প্রার্থী হলেও তিনি লিটনের মোকাবেলায় কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এ ছাড়া কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের ঘোষণা দেন রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি আমেরিকা প্রবাসী শাহাবুদ্দিন বাচ্চু। যদিও ঘোষণার পর তাকে আর মাঠে দেখা যায়নি।

এর আগে বাচ্চু রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ফলে দলের অভ্যন্তরীণ বিভেদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আছে তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে। 

লিটন আত্মবিশ্বাসী

২০০৮ সালে ২৩ হাজারেরও বেশি ভোটে আর ২০১৮ সালে ৮৭ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হন লিটন। তিনি এবার তৃতীয়বারের মতো মেয়র হতে আত্মবিশ্বাসী তিনি।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু হওয়ার আগে ভোট চাওয়ার ‍সুযোগ নেই। আর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পরই মাঠে নামতে পারবেন প্রার্থীরা।

টানা চতুর্থবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর লিটন মাঠে আছেন অন্য কৌশলে। দলীয় নানা সভা-সমাবেশ ও ঈদ পুর্নমিলনী করে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করছেন তিনি।

গত মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে নগরের ১ থেকে ১২ নং ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সেখানে তিনি প্রচার শুরু হলে তার পক্ষে নামতে নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করেন।

বুধবার দুপুরে নগরীর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় মেয়র লিটনের আমলে শহরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এর নেতৃত্ব দেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরাও লিটনের বাইরে কাউকে নিয়ে কিছু ভাবছে না।

মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোদ্ধা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সুযোগ্য পুত্র খায়রুজ্জামান লিটনের কোনো বিকল্প নেই। নগরবাসীও এ বিষয়ে একমত।

“জনপ্রত্যাশার কথা চিন্তা করেই দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিটনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। সকল নেতাকর্মী বিভেদ ভুলে তার পক্ষে কাজ শুরু করেছেন। আশা করি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় লিটন আবারও মেয়র নির্বাচিত হবেন।”

লিটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে রাজশাহী নগরীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এখনও তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। রাজশাহীর উন্নয়নে আরও চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে।

“আবার নির্বাচিত সেসব প্রকল্পের বরাদ্দও নিয়ে আসব ইনশাল্লাহ। সেটি হলে রাজশাহী নগরী নতুন রূপ লাভ করবে। আশা করছি, সে সুযোগ রাজশাহীবাসী আমাকে দেবে।”

কাউন্সিলর পদে আগ্রহীরা তৎপর বেশি। বিভিন্ন ওয়ার্ডে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই নানা কৌশলে নিজেদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছিলেন।

মতবিনিময় ও ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার-ব্যানার, ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও ঈদ পুনর্মিলনীর মাধ্যমে নিজের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন তারা।

আগের তিন নির্বাচনের ফলাফল

২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৯৮ হাজার ৩৮০ ভোট মেয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত খায়রুজ্জামান লিটন। বিএনপি সমর্থিত মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোট পান ৭৪ হাজার ৫৫০টি। ভোটের ব্যবধান ২৩ হাজার ৮১০টি।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেবারই প্রথম আওয়ামী লীগ সমর্থিত কোনো প্রার্থী শহরটিতে জয়ের মুখ দেখে।

লিটনের পাঁচ বছরে রাজশাহী শহরের উন্নতি ছিল দৃশ্যমান। তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরে যান ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থী।

সেই নির্বাচনে বুলবুল ভোট পান ১ লাখ ৩১ হাজার ৭৯৬ ভোট। লিটনের বাক্সে পড়ে ৮৩ হাজার ৩৮৯ ভোট। তিনি হারেন ৪৮ হাজার ৪০৭ ভোটে।

২০১৮ সালের ৩০ জুলাইয়ের ভোটে আবার লিটনের জয়। দলীয় প্রতীকে নেই নির্বাচনে নৌকা নিয়ে তিনি পান ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩২ ভোট। ধানের শীষ প্রতীকে বুলবুল পান ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট।

সে বছর নগরে ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮। এবার সেটি বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন। 

এবার ১৫২টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১৭৩ ভোটকক্ষে ভোট হবে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন- ইভিএমে।

রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। 

আরও পড়ুন

জনমত যাচাই করতে বিএনপিকেও নির্বাচনে আসার আহ্বান লিটনের

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর মেয়র লিটন বললেন, ‘নির্বাচন করছি’