নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে।
Published : 03 Mar 2024, 09:07 PM
নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় এক কৃষকের তিন ফসলি জমিতে জোর করে বালুর আড়ত গড়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম রানার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই কৃষক।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার টাওড়া গ্রামের বাসিন্দা মিলন মিয়ার অভিযোগ, পলাশের ডাঙ্গা ইউনিয়নে ডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে তার ১০৭ শতাংশ কৃষিজমিতে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বালু ফেলে রেখেছেন জসীম রানা।
অভিযোগের পর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও এখনও পর্যন্ত প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ কৃষক মিলন মিয়ার।
রোববার সরজমিনে দেখা গেছে, ডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ওই কৃষকের জমির চারদিকে ভ্যাকু মেশিনে মাটি তুলে পাড় বেঁধে বালু ফেলার (বালুর আড়ত) জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বালু এনে এই আড়তে রাখার জন্য পাইপও লাগানো হয়েছে।
মিলনের অভিযোগ, জসীম ও তার ভাইয়েরা তার ১০৭ শতাংশ তিন ফসলি কৃষিজমি জোরপূর্বক জবরদখল করে বালু ফেলার আড়ত গড়ে তুলেছেন। একাধিকবার বাধা দিতে গেলে তারা দলবল নিয়ে মারতে আসেন।
“বালু ফেলার পর এই কৃষিজমিসহ আশপাশের উর্বর জমিগুলো বালুর চরে পরিণত হবে। জমিতে আর কোনো ফসল ফলানো যাবে না, পুরো এলাকা বালুর চরে পরিণত হবে।”
তিনি বলেন, “প্রয়োজনে জীবন দেব, কিন্তু তিন ফসলি জমিতে বালু ভরাট করতে দেব না। কারণ এই জমিটুকু ছাড়া কৃষিকর্ম করার আর কোনো জমি আমার নেই।”
জসীম রানার পেছনে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবের উল হাই রয়েছেন বলে দাবি করেন মিলন মিয়া।
মিলন মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্ভিক্ষের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছেন। কৃষিজমির ক্ষতি করে কোনো ধরনের উন্নয়ন করা যাবে না এবং এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা রাখা যাবে না বলে বারবার সর্তকবার্তাও উচ্চারণ করেছেন।
“অথচ এখানে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা জসিম ও তার তিন ভাই মিলে স্থানীয় সন্ত্রাসী দলবল নিয়ে আমাদের কৃষিজমি জোরপূর্বক জবরদখল করে বালু ফেলার আড়ত তৈরি করছে। আমরা এর বিচার চাই।”
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা জসীম রানা বলেন, “পাঁচদোনা-ডাঙ্গা চার লেইন প্রকল্পের সড়ক নির্মাণে এখান থেকে বালু নেওয়া হবে। এটি সরকারের একটি উন্নয়নমূলক কাজ। কাজটি ঢাকার একটি কোম্পানি পেয়েছে।
“আমি তাদের প্রতিনিধি হয়ে এখান থেকে কৃষকদের জমি ভাড়া নিয়ে বালুর আড়ত গড়ে তুলেছি। মিলন মিয়ার কাছ থেকেও তার জমি ভাড়া নিতে গিয়েছি। কিন্তু মিলন মিয়া জমি ভাড়া দিচ্ছেন না।”
আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, “সম্ভবত মিলন মিয়ার ৫৭ শতাংশ জমিও আমাদের বালুর আড়তের ভিতরে পড়েছে। এ ছাড়া সব জমিই কৃষকদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছে।”
তবে এ ব্যাপারে ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবের উল হাই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পলাশের ইউএনও মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, “আমি কয়েকদিন হয়েছে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে যদি কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দিয়ে থাকেন, খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”