১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে রাজশাহীতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন তিনি।
Published : 31 Aug 2023, 07:16 PM
নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুসকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিদায় জানিয়েছে হাজারো মানুষ।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম, গুরুদাসপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় এবং বিলশায় তৃতীয় জানাজা শেষে বিলশা কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
প্রয়াত সংসদ সদস্যের ছেলে শোভন আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস জানান, বাবা-মায়ের কবরের পাশে শেষ শয্যা হয়েছে একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর যোদ্ধার।
এর আগে বড়াইগ্রামে আব্দুল কুদ্দুসকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। তাকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সালাম দেন জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঁঞা। এ সময় পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়ম খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা কুদ্দুসের প্রতিটি জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। কেউ হেঁটে, কেউ ভ্যান-রিকশায় করে, কেউ বা যন্ত্রচালিত বাহনে করে আসেন। উপস্থিত মানুষদের আব্দুল কুদ্দুসকে নিয়ে কান্নাভেজা স্মৃতিচারণ করতেও দেখা যায়।
নয়াবাজার এলাকায় মিলন আহমেদ বলেন, “গত ২০ তারিখে এমপি সাহেব এই মাঠে শোকসভায় বক্তব্য দিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন। ১০ দিন পরেই আবার এসেছেন, তবে, লাশ হয়ে। এলাকার মানুষের কল্যাণে তিনি অনেক কাজ করেছেন। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন।“
জানাজার আগে আওয়ামী লীগের নেতারা আব্দুল কুদ্দুসের রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু, তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামালও এ সময় বক্তব্য রাখেন।
প্রয়াত সংসদ সদস্যের ছেলে শোভন আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস বলেন, “আমাদের বাড়ির দরজা আপনাদের জন্য সবসময় খোলা থাকত। আজ আব্বা নেই। কিন্তু আপনাদের জন্য আমাদের বাড়ির দরজা সবসময়ই খোলা থাকবে।”
৮২ বছর বয়সী আব্দুল কুদ্দুস বুধবার সকালে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বিকালে ন্যাম ভবনে জানাজা শেষে তার মরদেহবাহী গাড়িটি গুরুদাসপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। সন্ধ্যার দিকে সেটি বাড়িতে পৌঁছামাত্রই শত শত মানুষ তাকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় জমায়।
আবদুল কুদ্দুস ১৯৯১ সালে নাটোর-৪ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে আরও চারবার নির্বাচিত হন তিনি। সপ্তম সংসদ নির্বাচনের পর তিনি মৎস্য ও পশু সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাওন শাহরিয়ার জানান, গত ২৭ অগাস্ট উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোকসভায় অংশ নিতে বের হলে আবদুল কুদ্দুস অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঢাকায় নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি করার পর অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকায় তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিউয়ে নেওয়া হয়।
ছাত্রলীগের নেতা মো. রাসেল জানান, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় আবদুল কুদ্দুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছিল।
পাকিস্তান আমলে ছাত্রলীগের মধ্য দিয়ে রাজনীতিকে যোগ দেন প্রয়াত এই নেতা। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত তিনি বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় আবদুল কুদ্দুস রাজশাহীতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডারের দায়িত্বও পালন করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ২০২২ সাল থেকে তিনি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
আবদুল কুদ্দুস এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।