যখন হাওর টইটম্বুর হওয়ার কথা, তখন সেখানে পানির জন্য অপেক্ষা। বর্ষার দেরিতে ওলটপালট হাওরের সব কিছু।
Published : 15 Jun 2023, 12:59 AM
হাওরের মরমি কবি উকিল মুন্সী গেয়েছিলেন, ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে,/ পুবালি বাতাসে-/ নাওয়ের বাদাম দেইখ্যা চাইয়া থাকি/ আমারনি কেউ আসে রে…’।
দেশের মোট আয়তনের ছয় ভাগের একভাগজুড়ে বিস্তৃত জলাভূমির হাওরাঞ্চলে এই ‘ভাসা পানি’ আসতে শুরু করে বৈশাখের শুরু থেকেই। কিন্তু এবার বৈশাখ গিয়ে জৈষ্ঠ্যও শেষ হয়েছে। আষাঢ়ের শুরুতেও কাঙ্ক্ষিত পানির দেখা মিলছে না হাওরে।
টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে এই সময়ে হাওর টইটম্বুর হয়ে যেখানে ‘সায়রে’ রূপ নেওয়ার কথা; সেখানে এখন মরা ঘাসের প্রান্তর। অথচ গত বছরই এই সময়েই সিলেট-সুনামগঞ্জ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল।
আবহাওয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও পানি গবেষকরা বলছেন, ‘পুবালি বাতাস’ থাকলেও এবার নানা কারণেই সুরমা অববাহিকায় বর্ষা কিছুটা দেরিতে হচ্ছে। তবে, মধ্য জুনের পর হয়ত পানি বাড়তে পারে।
হাওরের মানুষের জীবন-জীবিকা মূলত মাছ এবং একমাত্র ফসল বোরো ধানকেন্দ্রিক। সময়মত পানির উঠা-নামার সঙ্গে এ দুটি অর্থকরী পণ্য ওতপ্রতোভাবে জড়িত।
পানি আগে এলে যেমন বোরো ফসল তলিয়ে সারাবছরের জন্য কৃষকের ঘরে আহাজারির দাগ রেখে যায়; তেমনি দেরিতে এলেও মিঠাপানির মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে না কিংবা ডিম ছাড়লেও তাজা পানির অভাবে তা নষ্ট হয়ে যায়।
গোটা হাওরের জীব-বৈচিত্র্য নির্ভর করে যে বর্ষার পানির উপর, সেই পানিরই দেখা না মেলায় উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে হাওরের ‘ইকো-সিস্টেম’, অভিমত গবেষক ও পরিবেশবাদীদের।
হালে বর্ষার হাওরের রূপ আর সৌন্দর্যকে ঘিরে বড় হয়েছে পর্যটনের বাজারও। তবে পানি না আসায় এবার সেই ব্যবসাও মন্দা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ শামসুদ্দোহা বলেন, গত বছরের ১৩ জুন সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার, ছাতক পয়েন্টে ১১৬ সেন্টিমিটার এবং তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপরে উঠেছিল। কিন্তু এবার পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে।
“কিন্তু এবার এই সময়ে বৃষ্টিপাতই নেই। নদ-নদী, খাল-বিলে পানি না থাকায় নানা সমস্যা হচ্ছে।”
উজানেও পানি নেই
হাওরে পানির বড় অংশই আসে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে। কিন্তু এবার সেখানেও ভারি বর্ষণ নেই।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, “সাধারণত জুনের শুরুতেই বর্ষা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এবার একটু বিলম্বই ঘটেছে নানা কারণে। যেভাবে জুনের মাঝ সময়ে ভারি বর্ষণ হওয়ার কথা সেভাবে তেমনটা দেখা যাচ্ছে না।”
হাওরাঞ্চলে বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে মে, জুন, জুলাইয়ে যথাক্রমে গড়ে সাড়ে ৩০০ মিলিমিটার, ৫০০ মিলিমিটার ও ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
অধ্যাপক সাইফুল বলেন, “এবার তাপপ্রবাহ গেছে এপ্রিল-মে মাসের দীর্ঘ সময়জুড়ে। এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
“সার্বিকভাবে হাওর অঞ্চলের পানিচক্রে একটা ভিন্ন চিত্র দেখা দিয়েছে। এটা হাওরাঞ্চলসহ সার্বিক এলাকায় কৃষি ও জীববৈচিত্র্যে প্রভাব ফেলবে।”
আষাঢ়ের শুরুটা বৃষ্টিহীন হলেও দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক বৃষ্টির আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “সামনে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। জুনের বাকি সময় থেকে জুলাই-অগাস্টেও আশাব্যঞ্জক বৃষ্টি হতে পারে। কিছু সময়ের জন্য স্থানীয়রা হয়ত শঙ্কা করছেন, আশা করি তা কেটে যাবে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিস্তার লাভ করবে। তবে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানিও বাড়বে।
ধান নিয়ে চিন্তা
দেশের চাহিদার পাঁচ ভাগের এক ভাগ ধান আসে হাওরাঞ্চলে থেকে। এর অধিকাংশটাই বোরো ধান।
কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখানে প্রায় নয় লাখ টন ধান উৎপাদন হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় তিন লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকে। হাওরে উৎপাদিত ধানের মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি।
সাধারণত নভেম্বরে হাওরের পানি নামার পর পরই শুরু হয়ে যায় কৃষির কাজ। মধ্য নভেম্বরে বীজতলা তৈরি শুরুর পর ধান রোপন করে মধ্য এপ্রিলে ফসল কাটায় নামে কৃষকরা।
পানি আসা ও যাওয়ার সময়ের সঙ্গে এই কৃষিকাজ খুব নিবিড়ভাবে যুক্ত। পানি দেরিতে এলে নামবেও দেরিতে। ফসল রোপণ করতে হবে দেরিতে, পাকবেও দেরিতে।
বৃষ্টি না পাওয়ায় আমনের বীজতলা নিয়েও কৃষকরা বিপাকে পড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, “এবার বর্ষার কোনো লক্ষণ নেই। ঝড়-বৃষ্টিও নেই। হাওরে পানি নেই। তাই বর্ষা বিলম্বে আসতে পারে। বর্ষা বিলম্বে এলে হাওরের আগামী বোরো ফসল ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।”
তবে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শওকত ওসমান মজুমদার মনে করেন, “বর্ষা বিলম্বে এলেও আগামী মৌসুমে বোরো ধানের ফলনে তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ আমরা কৃষকদের স্বল্প মেয়াদী ধান রোপণে উৎসাহী করি। এতে বড় কোনো সমস্যা হবে না।”
এখন যে কিছু বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে আমনের বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
মিঠাপানির মাছের বিপদ
নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার- এই ছয় জেলা নিয়ে গঠিত হাওরাঞ্চল দেশের মিঠাপানির মৎস্য সম্পদের বিশাল ভাণ্ডার। বৈশাখের শুরুতেই বোরো ধান গোলায় তোলার পর হাওরাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের হাতে কোনো কাজ থাকে না। এই সময়ে তারা মূলত মাছ শিকার করেই কাটায়।
মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, শুধু সুনামগঞ্জ জেলাতেই ৯৫টি হাওর, ১৩৩টি খাল, ২৬টি নদী ও প্রায় এক হাজারেরও অধিক ছোট-বড় জলমহাল এবংহ সরকারি-বেসরকারি কয়েক হাজার পুকুর রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল করিম বলেন, “বৈশাখের পর জৈষ্ঠ্য মাসও চলে গেছে। কিন্তু বৃষ্টি-বাদল না থাকায় পানি নেই। তাই এখানে মাছের বংশ বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। যে কারণে আগামীতে হাওরে মিঠাপানির সুস্বাদু মাছের উৎপাদনে বিরাট প্রভাব পড়বে।”
তিনি জানান, সুনামগঞ্জ জেলায় প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর মাছ উৎপাদন হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৪৩ হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন মাছ উদ্বৃত্ত থাকে; যেটা জেলার বাইরে যায়। সুনামগঞ্জে উৎপাদিত এই মাছের দাম প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।
শাল্লা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ জামান খান বলেন, “হাওরের প্রায় ৮০ ভাগ মাছ বর্ষায় ডিম ছাড়ে। বিশেষ করে বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে উজাইয়ের সময় (কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের সময় মাছ নিচ থেকে উপরে আসে) মাছ ডিম ছাড়ে।
“এবার বৃষ্টিপাত না থাকায় হাওর পানিশূন্য, মাছেদের ডিম ছাড়ার পরিবেশ নেই। মাছ ডিম ছাড়লেও ডিম বাঁচেনি। তাই আগামীতে মৎস্য উৎপাদনে বিরাট প্রভাব পড়বে।”
হেমন্তের ‘পাও’ বর্ষাতে!
বর্ষা ও হেমন্তে দুর্গম ও প্রত্যন্ত হাওরের দুই রূপ। বর্ষায় যেখানে অথৈই সাদা জলরাশি, হেমন্তে সেখানেই সবুজের সমারোহ। তাই দুই ঋতুতে যোগাযোগের ব্যবস্থাও পাল্টে যায়। হাওরের যোগাযোগ নিয়ে প্রবাদ হচ্ছে, ‘বর্ষায় নাও, হেমন্তে পাও’।
কিন্তু এবার বর্ষা দেরিতে আসায় হাওরের বড় বড় নদীতেও পানি নেই। মানুষকে হেঁটেই চলাচল করতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও সামান্য পানি এলেও তা না নৌ-যান চলাচলের উপযুক্ত, না হাঁটার। ফলে যোগাযোগের জন্যও সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চরনারচর, দিরাই-সরমঙ্গল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা জানান, অন্যান্য বছর তারা এই সময়ে বাড়ি থেকে নৌকায় করেই উপজেলা সদরে যেতেন। গ্রামে গ্রামে ট্রলার ও নৌকার বহর থাকত। কিন্তু এবার নদীগুলোতে পানি দেখা নেই, নৌকাও চলে না। হেঁটেই তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে।
যাতায়াতের সুবিধার জন্য বিয়ের মতো সামাজিক উৎসব হাওরে শতকরা ৯০ ভাগ বর্ষাকালেই হয়ে থাকে। এবার এখনও পর্যন্ত হাওরে বিয়ের ধুমধামও কম বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা।
সুনামগঞ্জের হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, “এই সময়ে পানি না থাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যাতায়াতে। কারণ, হাওরবাসীর জন্য পর্যাপ্ত রাস্তা নেই। তারা বর্ষা হলেই নৌকায় সহজে ও সানন্দে যাতায়াত করতে পারেন। এখন পানি না থাকায় যোগাযোগে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের।
“হাওরের নদ-নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছেন না। কারণ যাতায়াত সমস্যার কারণে বেপারিরা ধান কিনতে আসছেন না। এতে হাওরবাসীর দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হচ্ছে।”
দিরাই উপজেলার দিরাই-সরমঙ্গল ইউনিয়নের বোর-দিরাই হাওরপাড়ের চিতলিয়া গ্রামের বাসিন্দা রনজিত দাস। প্রতিদিন গ্রাম থেকে উপজেলার সদরের এসে ব্যবসা করেন এই পোল্ট্রি ব্যবসায়ী। মাঝখানে বেতই নদী পাড়ি দিতে হয়।
রনজিত বলেন, “প্রতি বছর এই সময় বাড়ি থেকে ট্রলারে করেই উপজেলা সদরে দোকানে যাই। গত বছর বিরাট বন্যাই হইল। কিন্তু এইবার কোথাও পানি নাই। বেতই নদী পার হয়ে রাস্তা দিয়েই যেতে হচ্ছে।”
প্রায় একই কথা বলেন একই ইউনিয়নের জারলিয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ দাস। তিনি কৃষিকাজের পাশাপাশি জলমহাল ইজারা নেন।
প্রদীপ বলেন, প্রতি বছর এই সময় বাড়ি থেকে সরাসরি ট্রলারে করেই উপজেলা সদরের বাজারে আসতে পারতেন। কিন্তু এখন ট্রলারে এসে পথে আরেকটি গ্রামে নামেন। তারপর সেখান থেকে হেঁটে পৌঁছান উপজেলা সদরে।
জামালগঞ্জ উপজেলার গুরমার হাওরের কৃষক আল আমিন বলেন, “পানি না থাকায় আমরা হাওরের মানুষজন সহজে চলাফেরা করতে পারছি না। পানি হলে সহজে নৌকায় যাতায়াত করতে পারতাম।”
পর্যটনে মন্দা
পানি না থাকার কারণে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ টাঙ্গুয়ার হাওরে ভাসছে না পর্যটকবাহী নৌকা। তাই যারা পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করেছেন তারা বিপাকে আছেন।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, তাহিরপুর নৌ পর্যটক সমবায় সমিতির অধীনে প্রায় ৮১টি নৌকা-বজরা আছে। অনেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করেও পর্যটকদের উপযোগী নৌকা বানিয়েছেন। পানি না থাকার কারণে তাদের বিনিয়োগ আটকে আছে।
তাহিরপুর নৌ পর্যটক সমবায় সমিতির সভাপতি শাহীনুর বলেন, “আমাদের এলাকার বাদেও বাইরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরাও পর্যটকদের জন্য বিশাল নৌকা বানিয়েছেন। কারোর নৌকা এখন হাওরে ভাসছে না।”
‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’
হাওরের এই সমস্যাকে শুধু হাওরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দেখতে রাজি নন পরিবেশবাদীরা। তারা মনে করছেন, মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির উপর খবরদারি করতে চাইছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। যে সময়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা তখন খরায় পুড়ছে জনপদ। শীতের সময়ও পাল্টে যাচ্ছে। আবার উন্নয়নের নামে হাওরকেও ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। হাওরের জীব-বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে যত্রতত্র তৈরি করা হচ্ছে সড়ক ও সেতু। এসবের কারণে হাওর আজ বিপন্ন।
হাওরে গত দুই দশক ধরে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার হয়ে কাজ করছেন ইয়াহইয়া সাজ্জাদ।
তিনি বলেন, “এবার বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হাওরে পানি নেই। তাই সবচেয়ে বড় সংকটে হাওরের জীববৈচিত্র্য। প্রকৃতি যেন মানবসভ্যতাকে চোখ রাঙানি দেখাচ্ছে, যখন-তখন প্রতিশোধ নিচ্ছে। খোলা চোখে এই ক্ষতি দেখা না গেলেও বৃষ্টিহীন এই সংকট একটা বড় ক্ষতির দাগ রেখে যাবে।” যাচ্ছে।”
পরিবেশ-প্রতিবেশ অক্ষুণ্নু রেখে হাওরে উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করার আহ্বান জানান সাজ্জাদ।
হাওরের উদ্ভিদ বৈচিত্র নিয়ে গবেষণাকারী কল্লোল তালুকদার চপল বলেন, “বৃষ্টিপাতের অভাব এবং বর্ষা এসে গেলেও হাওরে পানি না থাকায় জলজ পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পথে। দেশের বৃহত্তম মিঠাপানির জলাধারের ইকো-সিস্টেম এখন টালমাটাল অবস্থায়, এলোমেলো হয়ে গেছে।
“এই সময়ে হাওরে ভরা পানি থাকার কথা ছিল। কিন্তু হাওরে, খালে, নদীতে পানি নেই। যার ফলে জলজ প্রাণীর বংশ বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এটি আগামীতে বড় সংকট তৈরি করবে। জীব-বৈচিত্র্যের আধার হাওরে অনেক জলজ-জীব হারিয়েও যেতে পারে।”
মন্দের ভালো বাঁধ আর গরুর জন্য
বর্ষাকালে ভাটির দেশে পানি না থাকা প্রাকৃতিক বিপর্যায়ের মতই। তবে এই পানি না আসার দুটো ভালো দিকও আছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
হাওরের বড় অংশ জুড়েই থাকে ফসলরক্ষা বাঁধ। তাড়াহুড়ো করে প্রতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড ফসলরক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজ করে থাকে। এতে বাঁধ থাকে কাঁচা, সামান্য পানির ধাক্কাতেই সেগুলো ধসে পড়ে।
তবে এবার প্রচণ্ড রোদ থাকায় সেইসব বাঁধের অধিকাংশ স্থানেই বড় বড় ঘাস গজিয়েছে এবং বাঁধ অনেকটাই শক্ত হয়ে গেছে বলে মনে করেন সুনামগঞ্জের হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার।
তিনি বলেন, “হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলো সুরক্ষিত হয়ে গেছে। ঘাসে-বনে ছেয়ে গেছে। এটা আগামীতে বড় সুরক্ষা দিবে এবং বাঁধ নির্মাণে সরকারে অর্থ অপচয় কমাবে।
এছাড়া মাঠঘাট ডুবে না যাওয়ায় গবাদিপশুও ভালো খাবার পাচ্ছে, মাঠে যেতে পারছে বলে জানান তিনি।