মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে নাশকতার আগুনে পুড়ে মারা যান নাদিরা ও তার ছেলে।
Published : 19 Dec 2023, 05:30 PM
বার্ষিক পরীক্ষা শেষে স্কুল বন্ধ হওয়ায় দুই ছেলেকে নিয়ে নেত্রকোণার সদর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন নাদিরা আক্তার পপি। হরতাল-অবরোধের মধ্যে বাসের চেয়ে ট্রেনকেই নিরাপদ মনে হয়েছিল পরিবারের কাছে। কিন্তু সেই যাত্রাই কাল হল নাদিরার জীবনে।
মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে নেত্রকোণা থেকে ছেড়ে যাওয়া আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে পুড়ে নিহত হন পপিসহ তার তিন বছরের ছেলে ইয়াসিন রহমান পিয়াস। এ সময় পপির ছোট ভাই তার বড় ছেলেকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে যাওয়ায় তারা বেঁচে যান।
নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার বৈরাটি গ্রামের মো. ফজলুল হকের মেয়ে। ১১ বছর আগে সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া গ্রামের বরুনা গ্রামের মিজানুরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মিজানুর ঢাকায় ব্যবসা করেন। তিনি পরিবার নিয়ে কারওয়ান বাজার এলাকায় থাকতেন।
মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবা ফজলুর রহমার মেয়ের শ্বশুরবাড়ি ছুটে আসেন। সেই বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। কান্নায় ভেঙে পড়ছেন পপির বাবা-মা ও স্বজনরা।
নাদিরার বাবা ফজলুল হক আক্ষেপ করে বলছিলেন, “মেয়ে নিরাপদের জন্যে ট্রেনে কইর্যা গেছে। আর এই টেইনে গিয়েই মারা গেছে। এই ঘটনার বিচার চাই। আপনারা সঠিকভাবে বিচার করবেন।”
পরিবার জানায়, সোমবার রাতে দুই সন্তানকে নিয়ে নাদিরা তার ভাই হাবিবুর রহমানের সঙ্গে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে চড়ে ঢাকার বাসায় ফিরছিলেন।
ট্রেনে আগুনের ঘটনার সময় হাবিবুর রহমান ভাগনে ফাহিমকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে জীবন বাঁচাতে পারলেও ট্রেনে আটক পড়ে আগুনে দগ্ধ হয়ে শিশু সন্তানসহ মারা যান নাদিরা।
সন্তানকে বুকে জড়িয়ে পুড়ে অঙ্গার পপি, মর্গেও একসঙ্গে
ট্রেনে যারা আগুন দিয়েছে তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন পপির স্বজন ও এলাকাবাসীরা ।
নাদিরার দেবর আব্দুল কাদির মিলন বলেন, “স্কুল বন্ধের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল নাদিরাসহ তার দুই সন্তান। রাতে ওদেরকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে আসি। ঢাকার বাসায় যাচ্ছিল।
“পরে শুনি ট্রেনে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে। এখনও লাশ আসেনি। জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়নি। সবাইকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
নাদিরার বোন লিপি আক্তার বলেন, “আমার বোনের সঙ্গে শেষমেষ দুইটা কথাও বলতে পারছি না। আমরার বুকে যেমন আগুন দিছে হেরার বুকেও তেমন যেন আগুন লাগে। আমরা সরকারের কাছে বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ হত্যার বিচার চাই।”
এর আগে বিএনপির ডাকা হরতালের মধ্যে নেত্রকোণা থেকে এসে ঢাকায় ঢোকার পথে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে তেজগাঁও স্টেশনে এ ঘটনায় পুড়ে গেছে ট্রেনটির তিনটি বগি। এতে চারজন পুড়ে মারা যান। তার মধ্যে তিনজনই নেত্রকোণার বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:
ঢাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে নাশকতার আগুন, মা-শিশুসহ নিহত ৪
বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে নাশকতা, ট্রেনে আগুন: ডিএমপি কমিশনার