রাবি ছাত্রীর লাশ উদ্ধার, স্বামী গ্রেপ্তার

বাসার নিচতলার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা কেউ রিক্তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেননি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2022, 02:31 PM
Updated : 30 July 2022, 02:31 PM

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের পর তার বাবার করা হত্যা মামলায় স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে লাশ উদ্ধারের পর শনিবার দুপুর ২টার দিকে ওই ছাত্রীর বাবা লিয়াকত জোয়ার্দার বাদী হয়ে হত্যা মামলাটি করেন বলে জানান মতিহার থানার ওসি আনোয়ার আলী তুহিন।

পরে বিকাল পৌঁনে ৪টার দিকে মামলার একমাত্র আসামি হিসেবে আগে থেকেই আটক থাকা আবদুল্লাহ ইশতিয়াক ওরফে রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রিক্তা আক্তারের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার জোতপাড়া গ্রামে। তার স্বামী রাব্বি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে।

দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। রিক্তা আইন বিভাগের এবং রাব্বি ফলিত গণিত বিভাগের।

আড়াই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তারা রাজশাহী নগরের ধরমপুর পূর্বপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেই বাসা থেকে রিক্তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

বাড়ির মালিক আবদুর রশিদ বলেন, “চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় আমি থাকি। নিচতলায় ছয়টি পরিবার থাকে যারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।”

“ইশতিয়াক ও রিক্তা গত ২৯ জুন এই বাসায় উঠেন। শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে শোরগোল শুনে নিচে নামি কিন্তু আমি কিছু দেখার আগেই রিক্তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।”

ওই বাসার নিচতলার কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, তারা কেউ রিক্তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেননি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। এ সময় ওই কক্ষ থেকে শোরগোল শুনে তারা সেখানে গিয়ে রিক্তাকে বিছানায় শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পান।

সেখানে রিক্তার স্বামী আবদুল্লাহ ইশতিয়াক ও আলামিন নামে তার এক বন্ধুকে দেখতে পান তারা। আলামিন তাদের জানান, রিক্তা গলায় ফাঁস দিয়েছেন। তিনি রিক্তার গলা থেকে ওড়না খুলেছেন।

এরপর রিক্তাকে রিকশায় করে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনার পর রিক্তার বাবা লিয়াকত জোয়ার্দার, চাচা দুলাল হোসেন, বোনজামাই হাফিজুর রহমান ও রাব্বির বাবা ইউনুস আলী রাজশাহীতে এসেছেন।

রিক্তার বাবা লিয়াকত জোয়ার্দার বলেন, “রিক্তা ও রাব্বির মধ্যে আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তাদের বিয়ে হয়।”‍

“কিন্তু বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন রিক্তাকে গৃহবধূ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এ কারণে মেয়ে ওই বাড়িতে যেত না।”

তিনি আরও জানান, মেয়ের খরচ বহন তিনিই করতেন। তিনি রিক্তাকে একটি মুঠোফোন কিনে দিলেও সেটি স্বামীর কাছে থাকত। নিজের মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তার স্বামীর মাধ্যমে কথা বলতে হতো।

তার মেয়ে আত্মহত্যা করেননি বরং তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই বাবা।

তবে রাব্বির বাবা ইউনুস আলী জানান, ছেলে ও পুত্রবধূ দুজনেই লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকত। এ কারণে পুত্রবধূ ঝিনাইদহে কম যেত। তবে দুই-তিনবার গিয়েছে। ছেলেও যেত।

তিনি আরও জানান, গত বৃহস্পতিবারও তিনি রাজশাহীতে এসেছিলেন। তাদের কাছে থেকেছেন। তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য ছিলো না। তারা দুজনেই তাকে আপ্যায়ন করেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি হাসিবুল আলম প্রধান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাটি শুনে আমি রাতেই হাসপাতালে গিয়েছিলাম। এ বিষয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। আমি চাই, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক জানান, তিনি ঘটনা শুনে সকালে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এটি আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু, তা ময়নাতদন্তের আগে নিশ্চিত বলা সম্ভব নয়।

তবে পুলিশ স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তদন্তও অব্যাহত রেখেছে বলে জানান প্রক্টর।

মতিহার থানার ওসি আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, “ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী আবদুল্লাহ ইশতিয়াককে থানায় আনা হয়। এরপর মামলা হলে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”

নিহত শিক্ষার্থীর ময়নাতদন্ত হলেও এখনও প্রতিবেদন হাতে পাননি বলে জানান ওসি।