ইনু এবার আওয়ামী লীগের সব অংশের সমর্থন পাননি; বরং নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন।
Published : 08 Jan 2024, 08:37 PM
নিজের পরাজয়ের জন্য ‘প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তাকে’ দুষলেন জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু।
ভোটে হারের পরদিন নিজের কর্মী ও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, “কেন প্রশাসনের এই উদ্দেশ্যমূলক নিষ্ক্রিয়তা, সেটা পরে ভেবে দেখব আমি।”
ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুষ্টিয়া-২ আসনটি ১৪ দলের শরিক জাসদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। জাসদের দলীয় প্রতীক মশাল হলেও ইনু আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন।
রোববার ঘোষিত ফলাফলে এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা কামারুল আরেফিন ট্রাক প্রতীকে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইনু পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট। তিনি ২৩ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন।
এ আসন থেকে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাসদ সভাপতি। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
অপরদিকে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এর আগে তিনি একসময় সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
গত তিনটি নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা ইনুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হননি। বরং আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশই তার সঙ্গে ভোটের কাজ করেছিলেন।
কিন্তু ১৪ দলের নেতা ইনু এবার আওয়ামী লীগের সব অংশের সমর্থন পাননি। বরং আওয়ামী লীগের নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের পৈত্রিক বাড়িও মিরপুর উপজেলায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাকে নিজের এলাকায় মনোনয়ন না দিয়ে কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনে নৌকার মাঝি করে। তিনি সেখান থেকে টানা তৃতীয়বারের মত জিতেছেন।
কুষ্টিয়া-২ আসনের রাজনীতিতে ইনু-হানিফ দ্বৈরত বহুল চর্চিত বিষয়। এখানে জাসদ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত বার বার সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে এসেছে।
এবারের নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে অনেকেরই ভরাডুবি হয়েছে। হেরে গেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তাদের পাশাপাশি ইনুর পরাজয় নিয়েও নানা আলোচনা হচ্ছে।
তবে বরিশাল-২ থেকে জিতেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং বগুড়া-৪ থেকে জিতেছেন জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন।
এ অবস্থার মধ্যে ভোটের একদিন বাদে সোমবার দুপুরে ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপনগর গ্রামের বাড়িতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ইনু। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন।
জাসদ সভাপতি বলেন, সারাদেশেই একটি ‘বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে’ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষায় নির্বাচন হলেও শেষ পর্যন্ত একভাবে ‘জনগণের অংশগ্রহণসহ সাড়া’ পাওয়া গেছে।
“সেদিক থেকে মনে হয়, নির্বাচনি কাজটা নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য জায়গায় কীভাবে নির্বাচন হয়েছে সেটা আমাকে দেখতে হবে।”
নিজের পরাজয়ের বিষয়ে ইনু বলেন, “এই আসনে যেভাবে নির্বাচন হল, সেখানে আমি মনে করি পরিকল্পিতভাবে ভোট কারচুপি হয়েছে। এখানে প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তায় আমি ক্ষতিগ্রস্ত হইছি এবং পরাজিত হইছি।
“এলাকায় সবাই জানেন, কালো টাকার ছড়াছড়ি, মাস্তানি, পেশিশক্তির প্রভাব থাকলেও প্রশাসনের নীরবতার কারণেই আমি পরাজিত হয়েছি। আমার নির্বাচনি এলাকায় আমি আবারও বলব, প্রশাসনের পরিকল্পিত নিষ্ক্রিয়তা পরাজয় নিশ্চিত করতে ভূমিকা রেখেছে।”
জাসদ এখন সময় নিয়ে আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিকল্পনা ঠিক করতে বসবে জানিয়ে দলের সভাপতি নতুন সরকারকে স্বাগত জানান।
তিনি বলেন, “কেবল নির্বাচন শেষ হল। এ মুহূর্তে রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কিছু ভাবিনি। দল বসবে, তারপর পরবর্তী রাজনৈতিক পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করব।
“তবে ১৪ দলীয় জোটের যে নির্বাচনি বিজয় এবং তার ভিত্তিতে জোটনেত্রী শেখ হাসিনা নতুনভাবে সরকার গঠন করবেন, সেটা রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার জন্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। আমি সেটাকে স্বাগত জানাচ্ছি,” বলেন জাসদ সভাপতি।
এদিকে কুষ্টিয়া-২ আসনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন দুপুরে মিরপুর উপজেলার আমলা সদরপুর গ্রামে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের পর মিরপুর থেকে কোনো আওয়ামী লীগ নেতা সংসদ সদস্য হতে পারেননি। আমিই একমাত্র ব্যাক্তি যে প্রথম আওয়ামী লীগের ঝাণ্ডা নিয়ে সংসদ সদস্য হতে পেরেছি।
“আমার উপজেলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ছিল। এলকার উন্নয়নে জনগণের দেওয়া ভালোবাসা আমি মাথায় তুলে নিয়ে তাদের সেবা করতে চাই।”