নওগাঁ পৌরসভার মেয়র মো. নজমুল হক সনির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন ১১ কাউন্সিলর।
জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা জানান, গত রোববার সন্ধ্যায় মেয়রের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদনপত্র তিনি পেয়েছেন; সোমবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বরাবর পত্রটি পাঠিয়েছেন।
গত ৩১ অক্টোবর মাসিক সভায় নওগাঁ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শরিফুল ইসলাম শরিফের প্রস্তাবে মেয়রে বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
তবে এ বিষয়ে মেয়র নজমুল হক সনির দাবি, তিনি বিএনপি থেকে নির্বাচিত মেয়র হওয়ায় কাউন্সিলররা তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আসাদুজ্জামান সাগরের কাছ থেকে পাওয়া আবেদনের অনুলিপি থেকে জানা যায়, অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদনে পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের নয়জন কাউন্সিলর ও দুজন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর স্বাক্ষর করেছেন।
অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদনে বলা হয়, নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নয়টি সাধারণ কাউন্সিলর ও তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সঙ্গে বিভিন্ন সময় অশালীন আচরণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি করে আসছেন।
“তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে দৈনিক হাজিরাভিত্তিক শ্রমিক দেখিয়ে পারিশ্রমিকের অর্থ উত্তোলনসহ নওগাঁ পৌর ভবনের বিভিন্ন সময় গোপনে কোটেশনের মাধ্যমে টেন্ডার করে কাজ না করেই মাসিক সভার আলোচনার বাহিরে তার ইচ্ছেমত রেজুলেশনে বিভিন্ন ব্যয় দেখিয়ে অর্থ উত্তোলন করেন।”
এসব বিষয়ে বারবার নিষেধ করার পরও তিনি ‘কান দেননি’।
“এছাড়া, নওগাঁ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ল্যান্ড ফিল্ড) স্থাপনা, নতুন পৌর ভবন অতি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ করছেন। এসব বিষয়ে মাসিক সভায় কাউন্সিলররা মেয়রের কাছে অভিযোগ দাখিল করলে তিনি তা আমলে নেননি।
উল্টো কাউন্সিলরদের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারী আচারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়।
মেয়রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, “দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে শ্রমিকের বিষয়ে শ্রমিক জাকের আলী মেয়র মো. নজমুল হক সনির অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুললে ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। ওই শ্রমিক পরে মেয়রকে আসামি করে নওগাঁ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
“এছাড়াও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান সাগর মেয়রের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগসহ নওগাঁ পৌরসভার মূল ফটকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন করার বিষয়ে গত ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর মেয়র বরাবর একটি চিঠি দেন। ওই বিষয়টি এজেন্ডা হিসেবে ৩১ অক্টোবরের মাসিক সভায় বিবিধ আলোচনা সূচিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য বলা হলে মেয়র নজমুল হক সনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করে বিভিন্ন অশালীন ভাষা প্রয়োগ করেন এবং কাউন্সিলরদের সঙ্গেও একই ব্যবহার করেন।”
এ ছাড়া তিনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় আসামি হন এবং কারাগারে আটকও ছিলেন বলে আবেদনে দাবি করা হয়।
নওগাঁ পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার তানজিদ সম্রাট বলেন, “আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নওগাঁ পৌরসভার বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার আছি।
“অনেকবার মাসিক সভায় এবং মৌখিকভাবে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে মেয়র মো. নজমুল হক সনির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের সবসময়ই পাশ কাটিয়ে গেছেন।”
পৌরসভার মেয়র নাজমুল হক সনি বলেন, “আমি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে পর পর তিনবার নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। বিগত প্রায় সাড়ে ১২ বছর আমি সৎ ও নিষ্ঠার সাথে পৌরসভাকে পরিচালনা করে আসছি।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান পৌর পরিষদের অধিকাংশ কাউন্সিলর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অন্যায় দাবি করে আসছিল। যা পৌরসভার মেয়র হিসেবে পূরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে বিভিন্ন সময় তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন।
“এছাড়া, বর্তমানে সারাদেশে বিএনপি এক দফার আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এ সময় আমি বিএনপি থেকে নির্বাচিত মেয়র হওয়ায় নিয়মিত অফিস করতে পারছি না। এই সুযোগে পৌর কাউন্সিলরা আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। আমি মনে করি, এটা আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচারও অপপ্রচার।”
জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা বলেন, “সোমবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বরাবরে অনাস্থার আবেদনপত্রটি পাঠানো হয়েছে। এখানে আমার কিছু করার নাই। মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব এখন মন্ত্রণালয়ের।”