‘বন্ধুকে শ্বাসরোধে হত্যার ১০ দিন পর’ বিলে মিলল বস্তাবন্দি লাশ, গ্রেপ্তার ৩

র‌্যাব জানায়, মুক্তিপন আদায়ের জন্য ওই তরুণকে অপহরণ করে তার বন্ধুরা।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2023, 02:34 PM
Updated : 18 May 2023, 02:34 PM

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় অপহরণের ১০ দিন পর বিল থেকে এক কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আশুলিয়ার মোজারমিল এলাকার একটি বিল থেকে বস্তাবন্দি লাশটি উদ্ধার করা হয় বলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রহমান জানান।

নিহত ফারাবি আহমেদ হৃদয় (২২) আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার ফজলুল হক মিয়ার ছেলে। এ ছাড়া তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

গ্রেপ্তাররা হলেন- ময়েজ উদ্দিন ওরফে পরান (২২), সুমন মিয়া ওরফে বাপ্পি (২৩) এবং আকাশ।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে পরান মানিকগঞ্জের সদর থানার পশ্চিম দাসপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে। আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করেন তিনি। বুধবার রাতে জামগড়া থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।

সুমন মিয়া ওরফে বাপ্পি (২৩) বগুড়া জেলার সোনাতলা থানার মহেশপাড়া গ্রামের মো. তাহেরুল ইসলামের ছেলে। আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে তিনি রড মিস্ত্রীর কাজ করেন। তাকে বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন দুপুরে রাজধানীর মিরপুর থেকে আকাশ নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। আকাশ পেশায় পোশাক শ্রমিক। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরেকজন পলাতক বলে জানায় র‌্যাব।

লাশ উদ্ধারের পর বিলপাড়েই র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রহমান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

সেখানে তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার পরান ঘটনার হোতা।নিহত হৃদয় একই এলাকার বাসিন্দা এবং পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। হৃদয়ের বাবা স্থানীয় প্রভাবশালী ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তি।”

র‌্যাবের দাবি, পরান ও তার সহযোগী সুমন, আকাশ এবং পলাতক শাহীন আর্থিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে হৃদয়কে অপহরণ করে তার পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করছিলেন।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৮ মে বিকালে পরান আড্ডা দেওয়ার কথা বলে হৃদয়কে কৌশলে আকাশের বাসায় নিয়ে যান। পরে তারা চারজন হৃদয়কে জোর করে রশি দিয়ে বেঁধে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তার বাবাকে ফোন করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। দীর্ঘ সময় পরও মুক্তিপনের টাকা না পেয়ে তারা হৃদয়ের গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে ও নাকে-মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

র‌্যাব জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মরদেহ একটি বড় প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে রিকশাভ্যানে করে মোজারমেল এলাকায় একটি বিলে ফেলে দেয় হৃদয়ের কথিত বন্ধুরা। লাশটি যেন ভেসে উঠতে না পারে সে জন্য বস্তার সঙ্গে ইট বেঁধে দেন হত্যাকারীরা। পরে তারা আত্মগোপনে চলে যান। 

এদিকে, হৃদয়ের নিখোঁজের তিনদিন পর (১১ মে) তার বাবা আশুলিয়া থানায় একটি জিডি করেন।

জিডির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের দেওয়া তথ্যে ১০ দিন পর ওই বিল থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রহমান আরও বলেন, “গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অপহৃত কলেজ ছাত্রকে উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য আশুলিয়া থানা এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়।

“হত্যায় জড়িত পরান, বাপ্পি ও আকাশকে গ্রেপ্তার করে তাদের দেওয়া তথ্যে লাশ বিল থেকে উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন।

তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও ওই র‌্যাব কর্মকর্তা জানান।