পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্তের জন্য হাবিবুর রহমানের লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
Published : 18 Feb 2024, 07:38 AM
বগুড়ায় গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে মারা গেছেন আইনজীবী সহকারী সমিতির এক নেতা।
সহকর্মীদের অভিযোগ- পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে, তবে তা অস্বীকার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে আদালতের বাইরে থেকে হাবিবুর রহমান হাবিবকে (৩৫) তুলে নিজেদের কার্যালয়ে নিয়ে যান ডিবির সদস্যরা। পরে রাত পৌনে ৯টায় সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
হাবিব জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বাবলুর ছেলে।
হাবিবের মামা বগুড়া বার সমিতির সিনিয়র সদস্য মঞ্জুরুল হক বলেন, হাবিব তার সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। মঙ্গলবার বিকালে সহকর্মী রাকিবুলকে নিয়ে হাবিব আদালতের ফটক দিয়ে বের হওয়ার পরপরই একদল লোক তাদের গতিরোধ করে। এবং হাবিবের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়।
অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল বলেন, “খবর পাওয়ার পর পরই আমি বিষয়টি নিয়ে অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলি। তারা খোঁজ করে জানতে পারেন হাবিবকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে।
“সন্ধ্যা ৬টায় আমি ডিবি অফিসে যাওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের অফিস কম্পাউন্ডের ভেতরে যাই। কিন্তু কর্তব্যরত সদস্যরা আমাকে ডিবি অফিসে প্রবেশে বাধা দেয়। আমি ডিবির পরিদর্শকের মোবাইল নম্বরে কল করি। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি।
“পরে রাত ৯টায় শুনতে পাই যে হাবিব মারা গেছে এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তার লাশ রাখা হয়েছে।”
হাবিবুর রহমান শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন দাবি করে তিনি অভিযোগ করে বলেন, “তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।”
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আতিকুজ্জামান জানান, সন্ধ্যা ৭টায় অচেতন অবস্থায় হাবিবুর রহমানকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন সাদা পোশাকধারী একদল পুলিশ। পরে তাকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানো হয়।
ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শফিক আমিন কাজল জানান, পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছিলেন যে, হাবিবুর রহমান অচেতন হওয়ার আগে বুকে ব্যথার কথা বলেছিলেন। সে জন্য তার বুকে চাপ দিয়েছিল পুলিশ সদস্যরা। এ সময় তার শরীরে বমির আলামত পান তারা।
তিনি আরও বলেন, “হাসপাতালে প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টা চেষ্টা করেও হাবিবুর রহমানের জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়নি। পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে হাবিবকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বগুড়া ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোস্তাফিজ হাসান।
তিনি বলেন, ১০ বছর আগে বগুড়ার শাজাহানপুরে জোড়া গ্রামে ১০ বছর বয়সী শিশু বিপুলকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছিল। হাবিবুর রহমান ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন।
“ওই হত্যা মামলায় অন্যতম সাক্ষী ছিলেন নিহত শিশুর সৎ মা খুকি বেগম। কিন্তু সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতের ধার্য তারিখের আগেই গত ২ আগস্ট খুকি বেগমকে হত্যা করা হয়।
“হত্যাকাণ্ডের দু-দিন পর একটি পা বিহীন খুকি বেগমের মরদেহ পাওয়া যায়। তার এক মাস পর মঙ্গলবার মনোয়ারা বেগম নামে প্রতিবেশী এক নারীর বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে খুকি বেগমের খণ্ডিত পা উদ্ধার করা হয়।”
পরিদর্শক মোস্তাফিজ আরও বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মনোয়ারা বেগমকে আটক করা হলে তিনি খুকি হ*ত্যায় হাবিবের জড়িত থাকার তথ্য দিয়ে জানান, তার সামনেই হাবিবসহ কয়েকজন খুকিকে হত্যা করে। সেই তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকালে হাবিবকে আটক করা হয়।
“পরে ডিবি অফিসে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মনোয়ারা বেগমের মুখোমুখি করা হলে হাবিবুর রহমান বুকে ব্যথার কথা বলেন। তখন তাকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।”
এদিকে রাত পৌনে ১১টার দিকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে হাবিবের লাশ একটি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে রাখা হয়েছে। আইনজীবী সমিতির সদস্যরা লাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে হাবিবকে হত্যার জন্য ডিবি সদস্যদের দায়ী করছেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, হাবিবুর রহমান ৪৫ মিনিটের মতো ডিবি অফিসে ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাই ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। এজন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। এর আগে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে লাশের সুরতহাল করা হবে। পরে লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে।
পরে ময়নাতদন্তের জন্য রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে হাবিবুর রহমানের লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়।
[প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ০৪ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক]