জাতীয় পার্টি, বিএনএম, তৃণমূল বিএনপি, গণফোরামের দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নামা আওয়ামী লীগের নেতাও আছেন, আছেন সংসদ সদস্যরাও।
Published : 07 Jan 2024, 05:26 PM
ভোটকেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদান, এজেন্টদেরকে জোরপূর্বক কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়াসহ নানা অভিযোগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা।
তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি, বিএনএম, তৃণমূল বিএনপি, গণফোরামের দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নামা আওয়ামী লীগের নেতাও আছেন, আছেন সংসদ সদস্যরাও।
এর মধ্যে সিলেটের একটি আসনেই সংসদ সদস্য চার প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।
জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন সিলেট-২, লালমনিরহাট-২, কক্সবাজার-৪, কুড়িগ্রাম-৪ ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে।
সিলেট-২, সিলেট-৩, কুমিল্লা-১১ , কক্সবাজার-১ , কক্সবাজার-৩, টাঙ্গাইল-২, কুড়িগ্রাম-৪ ও যশোর-১ আসনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সতন্ত্র প্রার্থী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানোর খবর:
সিলেট-২ আসনে মোকাব্বিরসহ চার প্রার্থী
ভোটকেন্দ্র দখলসহ নানা অভিযোগ তুলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান চৌধুরীসহ চার প্রার্থী।
রোববার দুপুরে বিশ্বনাথ বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের চার প্রার্থী।
নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া বাকি তিন প্রার্থী হলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান ও তৃণমূল বিএনপির আব্দুর রব মল্লিক।
সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সংসদ সদস্য গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান বলেন, “যেভাবে জোর করে আমার ও অন্য দুইজন প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হচ্ছে, এর পরে নির্বাচনে থাকা যায় না। আমি নির্বাচন বর্জন করছি।”
লাঙ্গল প্রতীকের ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন, “বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকার কর্মীরা আমার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে, জাল ভোট দিচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ কিংবা প্রিজাইডিং অফিসার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বরং লিখিত অভিযোগ দিতে বলছেন।
“এমনকি একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সাময়িক বন্ধ রাখার পর নৌকার প্রার্থী এসে ভোটগ্রহণ শুরু করে দেন। এ অবস্থায় নির্বাচনে থাকা সম্ভব না, তাই আমি প্রত্যাহার করছি।”
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিশ্বনাথ পৌরমেয়র মুহিবুর রহমান বলেন, “জাতীয় পার্টির এমপিকে রীতিমতো জিম্মি করে নৌকার প্রার্থী টেবিল কাস্টিং করেছেন। আমি আরও কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করবো, আমিও বর্জনের দিকেই যাচ্ছি। “
এ আসনে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।
সিলেট-৩ ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী
সিলেট-৩ আসনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিবকে মারধর ও জাল ভোটসহ বিভিন্ন অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী।
রোববার বিকালে বালাগঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “আমার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বালাগঞ্জ উপজেলার সদস্য সচিব ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল মালিককে সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও নৌকার এজেন্ট আব্দুর রকিব জুয়েল মারধর করেছেন। এ সময় আমার এজেন্টদেরও মারা হয়েছে। আমার লোকেরা তাকে জাল ভোট দেওয়ার সময় তাকে ধরে ফেলেছিল; তাই তাদেরকে মারধর করা হয়েছে।”
সিলেট-৪ এ তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী
ভোটকেন্দ্র দখলসহ নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট-৪ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন।
এক ভিডিও বার্তায় তিনি ব্যাপক অনিয়ম, জাল ভোট, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ ও প্রশাসনের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
কোম্পানীগঞ-গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী নাজিম উদ্দিন কামরান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনএম প্রার্থীর
কেন্দ্রে প্রার্থীকে ঢুকতে না দেওয়া, এজেন্টদের হুমকি ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে বিএনএম প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল মতিন ভোট বর্জন করেছেন।
রোববার বেলা সোয়া ২টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠান পাড়ার নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রার্থী নিজেই।
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দেওয়া হলেও ভোটের দিন চিত্র পুরো উল্টো ছিল। বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আরো কয়েকটি কেন্দ্রে দায়িত্বরত এজেন্টদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এমনকি পৌরসভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে তাকে কেন্দ্রেও ঢুকতে দেয়নি নৌকার সমর্থকরা।
এ অবস্থায় ‘নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই’ উল্লেখ করে মোহাম্মদ আব্দুল মতিন বলেন, নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ে আগেই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নির্বাচনি সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় ভোট বর্জন করলাম।”
কুমিল্লা-১১ আসনের ফুলকপি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর
কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট দেওয়া, এজেন্টদেরকে জোরপূর্বক কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা ও ফুলকপি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান।
রোববার দুপুর ১২টায় তিনি এ ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। পরে ভোট বর্জন এবং পুনঃনির্বাচন চেয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, “সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে নৌকার প্রার্থী মুজিবুল হকের লোকজন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে আমার ফুলকপি প্রতীকের এজেন্টদেরকে কেন্দ্র করে থেকে বের করে দেয়। এরপর প্রকাশ্যে নৌকাতে সিল মারে।
“আমি এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একাধিকবার অভিযোগ করেও তার কোনো প্রতিকার পাইনি। প্রশাসন পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছে। আমি এ নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে এ আসনে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।”
প্রিজাইডিং অফিসাররা ‘সরাসরি নৌকার পক্ষপাতিত্ব’ করছেন দাবি করে মিজানুর রহমানের নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান ভুঁইয়া হাসান বলেন, “বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল প্রদান করা হলেও প্রিজাইডিং অফিসাররা কোন প্রকার বাধা প্রয়োগ করেনি।”
এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ানের বক্তব্য জানতে তার সরকারি মোবাইলে একাধিক কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
লালমনিরহাট-২ আসনে জাপা প্রার্থী
ভোটে ব্যাপক অনিয়ম, জাল ভোট ও পেশি শক্তির প্রয়োগ হচ্ছে দাবি করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ আসনের জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রাথী দেলোয়ার হোসেন।
দুপুর ১২টার দিকে আদিতমারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে সাংবাদিকদের তিনি লাঙ্গল প্রতীকের এই প্রাথী বলেন, “ভোটে ব্যাপক অনিয়ম, জাল ভোট ও পেশি শক্তির প্রয়োগ হচ্ছে। বিষয়গুলো প্রশাসনের দৃষ্টিতে আনা হলেও তারা কার্যকরী কোনো উদ্দ্যোগ না নেওয়ায় ভোট বর্জন করতে বাধ্য হচ্ছি। এভাবে তো আর ভোটে থাকা যায় না।”
কক্সবাজার ১ : ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী
কক্সবাজার ১ চকরিয়া-পেকুয়া আসনের ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে বিকাল ৩টায় ফেইসবুকের লাইভে এসে এই ঘোষণা দেন তিনি।
বিকাল ৩টার একটু আগে প্রথমে ফেইসবুকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে পোস্ট দেন চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এই প্রার্থী।
এর পর পরই লাইভে এসে জাফর আলম বলেন, “একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি, এজেন্টদের মারধরের প্রতিবাদে ভোট বর্জন করলাম।”
এর কিছুক্ষণ পর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ফেসবুকে লাইভে এসে ওই আসনের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির হাতি ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে সন্ত্রাসী কায়দায় ভোট ডাকাতিতে ব্যর্থ হয়ে মিথ্যা অভিযোগে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী এই ভোট বর্জন করেছেন।
কক্সবাজার জেলার রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানান, কক্সবাজার-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ওই আসনসহ জেলার সকল আসনে নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম বলেছেন, “আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য কোনো ভাবেই পক্ষপাত করে না। নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।”
এ আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ী), জাতীয় পার্টির হোসনে আরা (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমের ছেলে ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী তুহিন (ঈগল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুদ্দিন আরমান (কলারছড়ি)।
কক্সবাজার-৪ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকের নুরুল আমিন সিকদার ভূট্টো ভোট বর্জন করেছেন।
রোববার বেলা ১টায় লাঙ্গল প্রতীকের নুরুল আমিন সিকদার ভূট্টো বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়। কিন্তু যেসব কেন্দ্রে আমি ভোট পাব সেসব কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
“বিশেষ করে, উখিয়ার জালিয়াপালং, রত্মপালং ও রাজাপালং ইউনিয়ন থেকে আমার সব এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়। বিষয়টি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো পরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হয়নি। একই সঙ্গে ব্যাপক অনিয়ম, জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল করা হয়েছে। তাই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তবে কোন প্রার্থীর পক্ষে এমন ঘটনা ঘটেছে তা তিনি নিশ্চিত করেননি।
উখিয়া-টেকনাফ উপজেলা নিয়ে কক্সবাজার-৪ আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মো. নুরুল বশর (ঈগল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক মুজিব (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরী (মিনার), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব)।
কক্সবাজার ৩ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী
নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল ও ব্যালেটে জোরপূর্বক সিল মারার অভিযোগ তুলে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মিজান সাঈদ ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার বেলা ২টার দিকে মিজান সাঈদ গণমাধ্যমকে বলেন, কক্সবাজার-৩ আসনে ১৬৭টি কেন্দ্রের মধ্যে নৌকার প্রার্থীর নেতৃত্বে ১৩০ দখল করে ব্যালেট পেপারে জোরপূর্বক সিল মারা হচ্ছে। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।
“আবেদনে ভোট স্থগিত করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। এই সঙ্গে ভোট বর্জন করলাম।”
তবে এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, ঈগল প্রতীকের পক্ষে লিখিত একটি আবেদন কিছুক্ষণ আগে পাওয়া গেছে। ব্যস্ততার কারণে এখনও আবেদনটি পড়েননি। কোনো প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন কি-না জানা নেই।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম বলেন, “কোথাও কেন্দ্র দখলের তথ্য দুপুর ২টা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।”
এ আসনে জাতীয় পার্টি এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থীও নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলেছেন।
এ আসনের প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজান সাঈদ (ঈগল), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) শামীম আহসান ভুলু (কুড়েঁঘর), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন)।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের একটি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে সিল দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর ভোট বর্জন করেছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী। পরে ওই বিদ্যালয়ের নারী ও পুরুষ কেন্দ্র দুটির ভোটগ্রহণ বাতিল করা হয়।
রোববার সকাল ১০টার দিকে আড়াইহাজার উপজেলার রামচন্দ্রদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান।
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সামনে ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করার কারণে ওই বিদ্যালয়ের নারী ও পুরুষ কেন্দ্র দুটির ভোটগ্রহণ বাতিল করা হয়েছে।”
পরে বেলা ১১টার দিকে রামচন্দ্রদী বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন নারায়ণগঞ্জ-২ আড়াইহাজার আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর সিকদার লোটন৷
অভিযোগে লোটন বলেন, সকাল ১০টার দিকে তারা জানতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর ও ঈগল প্রতীকের শরীফুল প্রার্থীর সমর্থকরা একজোট হয়ে নৌকার পক্ষে ব্যালটে সিল মারছেন। এ সময় জাতীয় পার্টির সমর্থকরা সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। তখন পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়; এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা ও ছররা গুলি করে।
এ ঘটনায় দুই সমর্থক আহত হয়েছেন বলে লোটন দাবি করলেও তাদের নাম-পরিচয় প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
নৌকার পক্ষে ব্যালটে সিল দিলেও প্রশাসন ‘নির্বিকার’ অভিযোগ করে লোটন আরও বলেন, “আমরা প্রতিবাদ জানালে পুলিশ আমাদের ওপর গুলি ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে৷ এখন ভোটের কোন সুষ্ঠু পরিবেশ নেই; আমি এ ভোট বর্জন করলাম৷”
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, “রামচন্দ্রদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাপার প্রার্থীদের একটি পক্ষ গিয়ে ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য লাঠিচার্জ করে ও ধাওয়া দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেটও ছোড়া হয়৷ তবে এতে কেউ আহত হয়নি।”
এ ঘটনায় পুলিশ ১৩ জনকে আটক করেছে; যার মধ্যে জাপার প্রার্থী আলমগীর সিকদার লোটনের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর সিকদার ঝোটনও রয়েছেন বলে জানান এসপি৷
নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৫৫টি কেন্দ্র দখলের অভিযোগে এনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জন করেছেন যশোর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন।
রোববার বেলা ১১টায় বেনাপোল মাদ্রাসা কেন্দ্রের পাশে নিজের একটি নির্বাচনি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেন ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী লিটন।
লিটন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বেনাপোলের সাবেক পৌর মেয়র।
সংবাদ সম্মেলনে যশোর-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ও সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলের পাশাপাশি ভোটে প্রভাব বিস্তার, ট্রাকের এজেন্টকে মারপিট, বের করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তোলেন।
তিনি বলেন, “আমার ৯ এজেন্টকে মারপিট করা হয়েছে। অধিকাংশ কেন্দ্রের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটার ও কর্মীদের হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। ৫৫টি কেন্দ্র দখল করে নেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ওরা প্রমাণিত করছে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। হয়ত ১০ শতাংশ ভোট পড়বে। কিন্তু তারা ৫০ শতাংশ ভোট দেখানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ”
জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যেই তারা এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। তো সেই নির্বাচন নিয়ে বেশিদূর যাওয়ার কোনো ইচ্ছা, ধৈর্য, কোনোটাই আমার নেই।
“তাই এই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, ভোটার বিহীন নির্বাচন, অসম্মান আঘাতের নির্বাচন, আর সম্মানিত ভোটারদের বেইজ্জত করা, ভোট দিতে বাধা দেওয়ার এই নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়াচ্ছি।”
টাঙ্গাইল-২ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী
জাল ভোট, এজেন্টদের মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভুঞাপুর) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার দুপুরে গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল বাজারে নিজের নির্বাচন অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তিনি।
এ সময় ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান তালুকদার, ঝাওয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তালুকদারসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, নৌকার কর্মী সমর্থকরা ঈগল প্রতীকের কর্মীদের ব্যাপক মারধর করে। ঈগলের এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি। সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়ে বহু কর্মীকে আহত করে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনকে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলেনি। জেলার পুলিশ সুপারকে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এই আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন সংসদ সদস্য তানভীর হাসান।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী
কুড়িগ্রাম-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ কে এম সাইফুর রহমান বাবলু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছেন।
রোববার দুপুরের দিকে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এ ঘোষণা দেন প্রার্থীরা।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ কে এম সাইফুর রহমান বলেন, “আমি কুড়িগ্রাম ৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়ে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে করেছিলাম। এই নির্বাচন যে প্রহসনমূলক হবে আগে জানতাম না।
সকাল থেকে যখন ভোট শুরু হয় তারপর শুরু হয় জালভোট। আমার ফোনে বিভিন্ন জায়গা থেকে ভোটে অনিয়মের খবর আসা শুরু করে। লাইন হয়ে বিভিন্ন সেন্টারে জালভোট দেয়। আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি তারা দেখতেছেন দেখতেছেন বলতেছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত নেয়নি। এ কারণে আমি ভোট বয়কট করলাম।
এ দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী আওয়ামী লীগের প্রতি অভিযোগ এনে বলেন, “আমি মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয় ঈগল প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করেছিলাম। আমি শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম আমি ভোটে জয়ী হবো।
“এ কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঢাকা থেকে আনা ছাত্রলীগের পোলাপান দিয়ে আমার নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে যায়। তারপরও সকাল থেকে সুষ্ঠু ভোট চলছিল
“কিন্তু দুপুরের পর জালভোট দেওয়া শুরু করেন তারা। তিন উপজেলায় সব কটি সেন্টারে তারা ছিল মারে নৌকায়। একারণে আমি ভোট বর্জন করলাম।”
এই আসনে নৌকার প্রার্থী বিপ্লব হাসানসহ আরও আট জন প্রার্থী আছেন।
কক্সবাজার ৩: ঈগল প্রার্থীর ভোট বর্জন, পুনর্নির্বাচন দাবি
নারায়ণগঞ্জে লাঙ্গলের প্রার্থীর ভোট বর্জন, ২ কেন্দ্রে ভোট বাতিল
ভোট বর্জন: কেন্দ্র দখলের অভিযোগ যশোর-১ স্বতন্ত্র প্রার্থী লিটনের