সুনামগঞ্জ জেলায় এক হাজার ৬২৫ বীর মুক্তিযোদ্ধার ভিডিও বক্তব্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
Published : 18 Jan 2024, 08:33 PM
‘বীরের কণ্ঠে বীরগাথা’ প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জ জেলায় জীবিতদের মধ্যে এক হাজার ৬২৫ বীর মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধের বর্ণনা সংগ্রহ শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সদর উপজেলার ৮২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য রেকর্ড করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলাম খান।
মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে টানা ১২ দিন এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।
এই প্রকল্পে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রহ করা ভিডিও বক্তব্য পরবর্তীতে আর্কাইভে তোলা হবে; যা নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃতি ইতিহাস জানাতে সহায়তা করবে।
এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়ায়, মিথ্যা ইতিহাস রচনা করে তার বিরুদ্ধে বীরদের কণ্ঠে যুদ্ধের ইতিহাস প্রকৃত জবাব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এমন উদ্যোগ নেওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দনের পাশাপাশি তাদের রেকর্ড করা বক্তব্য যথাযথভাবে আর্কাইভে তুলে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রকল্প পরিচালক মনিরুল জানান, সিলেট বিভাগের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘বীরের কণ্ঠে বীরগাথা’ কার্যক্রম সুনামগঞ্জ থেকে শুরু হয়েছে। এক বছর মেয়াদী এক কার্যক্রমে জেলার এক হাজার ৬২৫ জন জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হবে।
প্রথম দিন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ২৩৩ জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ৮২ জনের ভিডিও বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ এ যুদ্ধে যাওয়ার গল্প, যুদ্ধক্ষেত্রের স্মরণীয় ঘটনা, হানাদার-দালাল-রাজাকারদের বর্বরতা, সম্মুখযুদ্ধের বর্ণনা, গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ মুক্তিযুদ্ধের বহুমাত্রিক ইতিহাস তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে প্রভাবিত হয়ে কীভাবে যুদ্ধে নাম লিখিয়েছিলেন সে প্রসঙ্গও তুলে ধরেন অনেকে।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা এসব বক্তব্য ভিডিও রেকর্ড করেন। যুদ্ধদিনের স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেকের চোখে জল এসে যায়। যুদ্ধে যাওয়ায় কীভাবে তাদের পরিবার-পরিজন লাঞ্ছিত হয়েছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকায় কীভাবে নিরীহ মানুষকে খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়েছে তার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
সাক্ষাৎকার দেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা বশির আহমদ অরুণ বলেন, “একাত্তরে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু ১৯৭৫ এর পর থেকে আমাদের যুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়। ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতাবিরোধীরা ভুল ও বিভ্রান্তিকর মিথ্যা ইতিহাস রচনা করে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করেছে।
“বহুদিন পরে ‘বীরের কণ্ঠে বীরগাথা’ কার্যক্রম গ্রহণ করায় নতুন প্রজন্ম প্রকৃত ইতিহাস জানার সুযোগ পাবে। তারা আমাদের আত্মদান, ত্যাগ ও সংগ্রামের গল্প শুনতে পারবে। এই উদ্যোগ আরও আগে নেওয়া হলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের ইতিহাস নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রশ্ন তুলত না।”
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মেও কাছে তুলে ধরাই এ প্রকল্পের প্রধান কাজ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মনিরুল ইসলাম খান।
অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক আফরাজুর রহমান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নান, প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলাম খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি নূরুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।