গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে তিন দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাবারুনীর স্নানোৎসব শুরু হয়েছে।
আয়োজকরা জানান, দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ স্নানোৎসবে রোববার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল পুণ্যার্থী অংশ নেন। উৎসবকে কেন্দ্র করে শনিবার থেকে মহাবারুনীর মেলা শুরু হয়।
পূর্ণব্রহ্ম শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২০৯তম জম্মতিথি উপলক্ষে শনিবার মধ্যরাতে গদীনশীল ঠাকুর ও মতুয়াচার্য সীমা ঠাকুর এবং পদ্মনাভ ঠাকুর কামনা সাগরে স্নান করে স্নানোৎসবের শুভ সূচনা করেন।
এরপর পাঁচ কুড়ির দল স্নানে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্নানোৎসবের পালা। রোববার দিনব্যাপী চলবে; স্নানোৎসব শেষ হবে সোমবার সকালে।
কাশিয়ানী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তর পুরুষ সুব্রত ঠাকুর হিল্টু জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও পাশের দেশ ভারত থেকে স্নানোৎসবে অংশগ্রহণ করেন পুণ্যার্থীরা।
বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা থেকে পুন্যার্থীরা দলে দলে ঢাক, ঢোল, শঙ্খ, কাঁশি বাজিয়ে লাল নিশান উড়িয়ে হরিবোল ধ্বনিতে এলাকা প্রকম্পিত করে স্নানোৎসবে অংশগ্রহণ করেন।
বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষসহ লাখ লাখ পুন্যার্থী পাপমুক্তি ও পাপ মোচনের আশায় এখানে স্নান করেন। স্নান সেরে ভক্তরা ঠাকুরের মন্দিরে প্রণাম করে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও ঠাকুরের কৃপা লাভের আশায় প্রার্থনা এবং গড়াগড়ি করেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি মহা তীর্থস্থান উল্লেখ করে শ্রীধাম ওড়াকান্দি বরুনীর স্নান ও মেলা কমিটির সদস্য অসিত বরণ রায় বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আছেন বলেই আমরা উৎসবের সঙ্গে স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছি। ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়েই ধর্মীয় উৎসব করতে পারছি।”
স্নানোৎসবে আগত ভক্তদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনায় প্রার্থনা করার আবহান জানান তিনি।
বাগেরহাটের হোগলাবুনিয়া গ্রাম থেকে আসা নির্মল ওঝা বলেন, “এটি বারুনী উৎসবের বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্নানোৎসব ও মেলা। এখানে পূণ্য লাভের আশায় স্নান করেছি। ওড়াকান্দিতে স্নান করলে পাপ মোচন হয়; এ বিশ্বাস আমাদের মধ্যে রয়েছে।”
নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে আধ্যাত্মিক পুরুষ পূর্ণব্রহ্ম শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর বাংলা ১২১৮ সালের ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথীর ব্রাহ্ম মুহূর্তে মহা বারুনীর দিনে কাশিয়ানী উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
৬৬ বছর বয়সে ১২৮৪ সালে জন্মের একই দিনে তার তিরোধান হয়। এই পরম পুরুষ হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মের জন্য সাফলীডাঙ্গা গ্রাম হয়ে ওঠে ধন্য। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী গ্রাম ওড়াকান্দি হরিচাঁদ ঠাকুরের অলৌকিকত্ব ও লীলার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে।