নারায়ণগঞ্জে ‘জমির দখল নিতে’ গুলি, আহত ৪

ঘটনার সময় সেখানে পুলিশ ছিল বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2023, 02:36 PM
Updated : 16 March 2023, 02:36 PM

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে জমির দখল নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ চারজন আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে উপজেলার ফরাজিকান্দা এলাকায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর পাশে এ ঘটনা ঘটে বলে বন্দর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তসলিম উদ্দিন জানান।

ঘটনার সময় সেখানে পুলিশ ছিল বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মঈনুল হক পারভেজ (৪২) ফরাজিকান্দা এলাকার প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান রাইসুল হকের ছেলে।

আহত অন্যরা হলেন- পারভেজের স্ত্রী সোমা আক্তার (৩২), মা মাহফুজা হক (৬৫) এবং স্থানীয় বিল্লাল হোসেন (৪৫)। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আহতদের অভিযোগ, ৪০-৫০ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী এ হামলা চালিয়েছে। এ সময় তারা অন্তত ১৫-২০টি গুলি ছুড়ে।

গোলাগুলির পর এলাকাবাসী দু’টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। মোটরসাইকেল দু’টি হামলাকারীদের বলে জানান স্থানীয়রা।

তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর টোল সুপারভাইজার জহিরুল আলম বলেন, “পাশের মসজিদে জহুরের নামাজ পড়তে গেছিলাম। তখনই ঘটনা ঘটে। পাশের বাজারের জমি নিয়ে ঝামেলা হয়। ১৫-২০ রাউন্ড গুলির আওয়াজ পাইছি। প্রচুর হোন্ডা ছিল। কয়েকজনকে রাম দা, চাপাতি হাতে ঘোরাঘুরি করতেও দেখছি।”

গুলিবিদ্ধ পারভেজের ছোটভাই তানভীর আহমেদ বলেন, “একমাস আগে এলাকার প্রভাবশালী পক্ষটি ওই জমিতে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। পরে কে বা কারা সাইনবোর্ডটি খুলে ফেলে। দুদিন আগে রাত ১টা বাজে প্রভাবশালীদের বাহিনীটি আমাদের বাড়িতে এসে সাইনবোর্ড খোলার কারণ জানতে চেয়ে হুমকি-ধমকি দেয়। এ সময় তারা এক কোটি টাকা চাঁদাও দাবি করে।”

তানভীর আরও বলেন, “আজকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এসে একই বাহিনী বাজারে ওই জমির চারদিকে বাঁশের বেড়া দিকে থাকে। পরে আমার ভাই ৯৯৯ এ কল দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে আইসাও প্রভাবশালী পক্ষকে থামাতে পারেনি। পুলিশের সামনেই সোয়া ১টার দিকে তারা হামলা করে। গুলি লাগে আমার ভাইয়ের বাম পায়ে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন ভাবীসহ আরও কয়েকজন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।”

আহত পারভেজের চাচা আবু তালেব জানান, তার ভাই (প্রয়াত) রাইসুল হক ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। সেতুর উত্তর পাশের জমিতে এখন ফরাজিকান্দা বাজার। ওই জমির মালিক ছিলেন হাজী জহুরা বেগম নামের এক নারী। নিঃসন্তান জহুরা বেগম তার [আবু তালেব] দুই সন্তানের নামে জমিটি লিখে দেন। ৩০-৪০ বছর আগে তাদের কাছ থেকে জমিটি কেনেন ভাই রাইসুল হক।

তিনি বলেন, “এখন এই জমি ক্রয়সূত্রে মালিক বলে দাবি করছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান ও তার মেয়ে।”

কেনার সময় জমির পরিমাণ ৬৬ শতাংশ থাকলেও পরে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু ও সড়ক নির্মাণের জন্য সাড়ে ৯ শতাংশ অধিগ্রহণ করা হয়। বাকি সাড়ে ৫৭ শতাংশ জমি দীর্ঘবছর ধরে রাইসুল হকের পরিবার ভোগ-দখল করে আসছেন বলেও জানান আবু তালেব।

তিনি আরও বলেন, “জমির কাগজপত্র নিয়া বসুক। তারা যদি তাদের নামে কিছু দেখাইতে পারে তাইলে নিবে, আমরা দেখাইতে পারলে আমরা নিব। হিসাব তো এইখানে ক্লিয়ার। কিন্তু এইভাবে সন্ত্রাসীগিরি কইরা তো কোনো সমাধান হয় না।”

বন্দর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তসলিম উদ্দিন বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিরোধে দুপক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। সেখানে গোলাগুলির মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত একজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার তথ্য পেয়েছি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা রয়েছে।”

ঘটনাস্থলে পুলিশ ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “৯৯৯ এ দুপক্ষের ঝামেলার সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। প্রথমে অল্পসংখ্যক পুলিশ সেখানে ছিল, পরে আরও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে।”

এদিকে, জানতে চাইলে নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান বলেন, “বন্দরের ওই জমির ব্যাপারে আমি এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। আমাদের নামে আছে কিনা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। আর জমি নিয়ে কোনো মারামারি হয়েছে কিনা তাও জানি না।”