প্রাথমিকের ছাত্রীকে ‘যৌন হয়রানি’, কোটালীপাড়ায় শিক্ষককে অব্যাহতি

প্রাথমিক তদন্তের পর তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়; বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2023, 03:49 PM
Updated : 17 May 2023, 03:49 PM

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার ৯৭ নম্বর কান্দি বানিয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চিন্ময় বসুর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হামিদ জানিয়েছেন। 

আব্দুল হামিদ জানান, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তিনি এই আদেশ দিয়েছেন এবং বিভাগীয় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছেন। 

এই শিক্ষকের ‘যৌন হয়রানির শিকার’ ৫ম শ্রেণির তিন ছাত্রী স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গত ১১ মে শিক্ষক চিন্ময় বসু তিন দিনের ছুটিতে যান। কিন্তু বুধবারও তিনি (১৭ মে) কর্মস্থলে ফেরেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী স্থানীয় সাংবাদিকদের বলে, এই শিক্ষক প্রতিদিন পাঠদানের সময় তাদের এক এক জনকে কাছে ডেকে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন।

“এ কারণে আমরা কয়েকজন ছাত্রী পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতাম। স্যার সেখানে গিয়েও আমাদের জড়িয়ে ধরতেন। স্যারের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমিসহ তিন ছাত্রী বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।”

নাম প্রকাশ না করে এক অভিভাবক বলেন, কয়েকদিন ধরে তার মেয়ে বিদ্যালয়ে যেতে অনীহা প্রকাশ করে। তার কাছে কারণ জানতে চইলে সে এই শিক্ষকের এ ধরনের আচরণের কথা জানায়।

“আমি বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিখা হালদারকে খুলে বলি। তিনি এই ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বরং শিক্ষক চিন্ময় বসুকে রক্ষা করতে তিনি ব্যস্ত। ওই শিক্ষকে বদলি না করা পর্যন্ত আমার মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাব না।”

এ বিষয়ে জানার জন্য শিক্ষক চিন্ময় বসুর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

প্রধান শিক্ষক শিখা হালদার বলেন, “বিষয়টি বিভিন্ন অভিভাবকের কাছে শোনার পর চিন্ময় বসুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম। চিন্ময় বসু ঘটনাগুলো সত্য নয় বলে আমাকে জানিয়েছেন। তিনি ছাত্রীদের আদর করে পড়া বুঝিয়ে দিতেন বলে আমাকে বলেছেন। তিনি আমার কাছে ছুটির আবেদন করলে গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) থেকে তাকে তিন দিনের ছুটি মঞ্জুর করি।”

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই বিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষক বলেন, “চিন্ময় বসু এখানে যোগদানের পর থেকেই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীদের গায়ে কারণে অকারণে হাত দিতেন। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা প্রধান শিক্ষক শিখা হালদারকে জানাই। তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। পক্ষান্তরে তাকে রক্ষার জন্য শিখা হালদার তাকে তিন দিনের ছুটি দিয়েছেন।”

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হামিদ জানিয়েছেন, বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে কোটালীপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বিদ্যালয় পরিদর্শন করে তাকে [জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা] বিষয়টি অবহিত করেন এবং তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

“এর প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার বিকালে (১৬ মে) এই শিক্ষকে বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।”