বান্দরবানে সামাজিক ও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় চার দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
Published : 13 Apr 2024, 08:20 PM
নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, রং-বেরঙের বিভিন্ন ফেস্টুন হাতে নেচে-গেয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে বান্দরবানে মারমাদের বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাই পোয়ে: শুরু হয়েছে।
উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে শনিবার সকালে শহরে রাজার মাঠ থেকে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়।
শোভাযাত্রাটি শহরে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটে (কেএসআই) গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে আয়োজন করা হয় বয়স্ক পূজা।
এ অনুষ্ঠানে বয়োজ্যেষ্ঠদের মোমবাতি, নগদ অর্থ এবং নতুন পোষাক উপহার দেওয়া হয়। এ ছাড় পা ধুয়ে বয়স্ক পূজা করা হয়।
এর আগে শহরে রাজার মাঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর উশৈসিং বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন।
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে। আমরা প্রত্যেকে বিভিন্নভাবে নববর্ষ পালন করে থাকি- সাগ্রাই, বিঝু, বিষু, বৈসু এবং চাংক্রান নামে। আজ থেকে মারমাদের সাংগ্রাই শুরু হয়েছে।
“প্রার্থনা করি, আমাদের অতীতের ভুল-ভ্রান্তি, দুঃখ-কষ্ট বেদনা মুছে ভবিষ্যতে একটি সুন্দর সকাল পাব। সুন্দর একটি দিন পাব। পুরো বছরটা সারাদেশে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সুন্দর ও স্মার্ট বাংলাদেশ পাব।”
শোভাযাত্রায় বান্দবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং মারমা অংশ নেন।
শোভাযাত্রায় নিজেদের ঐতিবাহী পোষাক পরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন অংশ নেয়। প্রতিটি ব্যানারে যার যার মাতৃভাষায় নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সবার মঙ্গল কামনা করা হয়।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও সামাজিক ও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় চার দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মারমাদের সাংগ্রাই পোয়ে: উৎসব উদযাপন পরিষদ।
চার দিনের উৎসবের প্রথম দিন ছিল সকাল ৮টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা, সকাল ১০টায় ক্ষুদ্র সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটে অডিটোরিয়ামে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা।
১৪ এপ্রিল দুপুর ২টায় রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার হতে বুদ্ধ মূর্তি নিয়ে যাত্রা এবং উজানী পাড়ার খেয়া ঘাটে বুদ্ধ স্নান। রাত ৮টায় পাড়ার বিভিন্ন স্থানে পিঠা উৎসব।
১৫ ও ১৬ এপ্রিল দুপুর ২টা থেকে শহরে রাজার মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঐতিবাহী ক্রীড়ানুষ্ঠান ও মৈত্রী পানি বর্ষণ।
প্রতিবছর পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১১টি সম্প্রদায়ের মধ্যে বম, পাংখোয়া ও লুসাই তিনটি সম্প্রদায় ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজন ভিন্ন ভিন্ন নামে বর্ষবরণ উৎসব পালন করে থাকেন।
পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা বিঝু-বিষুকে একসঙ্গে ‘বৈসাবি’ বলা হয়।
এদিকে বর্মী পঞ্জিকা অনুসরণকারী চাক সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা সাংগ্রাই, ম্রোরা চাংক্রান, খিয়াংরা সাংলান ও খুমীরা সাংক্রাই নামে বর্ষবরণ উৎসব পালন করছে।
তারাও নানা রকমের ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলে ঘরদোর। নানান আনুষ্ঠানিকতায় বরণ করে নেয় নতুন বছরকে।
নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের বিঝু, তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু উৎসব এবং ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসব।
চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা ফুল ভাসানোর দিন পালন করেন ফুল বিঝু, দ্বিতীয় দিন পাল করে মুল বিঝু এবং শেষের দিন পালন করা হয় গইজ্যা পইজ্যা।
উৎসবের সময় তারা পাচন নামে এক ধরণের খাবার রান্না করেন; যেগুলোতে থাকে হরেক রকম মিশ্রিত সবজি। এ ছাড়া উৎসবের দিনে বেড়াতে আসা অতিথিদের পরিবেশন করা হয় এই খাবার।