ইছামতির দুই তীরে দুই বাংলার দুর্গা বিসর্জন

স্থানীয়রা জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকার মানুষ সারা বছর এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকে।

শরীফুল্লাহ কায়সার সুমনসাতক্ষীরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2022, 09:39 AM
Updated : 6 Oct 2022, 09:39 AM

বিজয়া দশমীতে বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা আর আনন্দ উল্লাসে প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও ভারতের দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে সাতক্ষীরার দেবহাটার ইছামতি নদীতে। প্রতিবছর এ দিনে ইছামতি পরিণত হয় দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলায়।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যবর্তী ইছামতি নদীর জিরো পয়েন্টে বুধবার দশমীর দিন ডিঙ্গি নৌকায় লাল পতাকা উড়িয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এরপর নিজ নিজ সীমারেখার মধ্যে থেকে দুই দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতিমা বিসর্জন করেন।

এ সময় দুই বাংলার মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হতে না পারলেও ঘাটতি ছিলো না তাদের পুরোনো রীতি-রেওয়াজে।

ইছামতিতে এ আনন্দ উপভোগ করতে আসা দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান জানান, দেশ বিভাগের অনেক আগে থেকেই সীমান্তের ইছামতি নদীর উভয় তীরে দুর্গা পূজার শেষদিন বিজয়া দশমীতে মেলা বসে। দেশ বিভাগের পরও সীমান্ত রেখা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও এ মেলা কখনও বন্ধ হয়নি। শুধু ইছামতি নদীর পাড়ের মানুষ নয়, বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকার মানুষ সারা বছর এ দিনটির জন্যে অপেক্ষায় থাকে।

বুধবার বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেবহাটার টাউন শ্রীপুর ও ভারতের টাকির মানুষ ইছামতির পাড়ে জড়ো হতে থাকে। একই সাথে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নিয়ে আসা হয় এ সীমান্ত নদীর পাড়ে। অপরদিকে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাসনাবাদ, টাকী ও হিঙ্গলগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার প্রতিমাও নিয়ে আসা হয়।

বিজয়া দশমী উপলক্ষে ইছামতির উভয় পাড়ে বসেছিলো নানা রকমের দোকান। দুপাড়ের লোকজন দিনভর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত এবং ভাব বিনিময় করেন। সন্ধ্যায় বিসর্জন শেষে ফিরে যান যে যার দেশে।

দেবহাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর খায়রুল আলম বলেন, বিগত বছরগুলোতে এই দিনে ইছামতি নদীর তীরে আন্তর্জাতিক সীমারেখাসহ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে মিলন মেলায় মিলিত হয় প্রতিবেশী দুদেশের হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে মিলন মেলা বন্ধ করে নেওয়া হয় কঠোর ব্যবস্থা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠিন সিদ্ধান্তে ঐতিহ্যবাহী এই মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি।

বিসর্জন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পাড়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী, দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ, দেবহাটা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বকুলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।