পোগালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের অবস্থান তৃতীয় দিনে

দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত না এলে আমরন অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরতরা।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2023, 06:17 PM
Updated : 21 May 2023, 06:17 PM

চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় দিনের মত চলছে চুক্তিভিত্তিক ১৩৪ কর্মচারীর অবস্থান কর্মসূচি।

রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, উপাচার্যের দপ্তরের সামনের লবির মেঝেতে

 চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা অবস্থান করছেন। 

অনেকে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি সম্বলিত কাগজ ধরে বসে আছেন।

এ সময় তাদের দাবির বিষয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে দেখা গেছে।

আন্দোলনরত কর্মচারীরা বলছেন, তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত না এলে আমরন অনশনের কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরতরা ।

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে একইসঙ্গে এত পদ সৃষ্ট হয় না। তাছাড়া চাকরি বা নিয়োগের ব্যাপারে তাদের কোনো হাত নেই।

বিগত তিন নিয়োগে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের ১৫৪ জনের মধ্যে থেকে ১৮ জনকে চাকরি দিয়েছে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যরা। 

আন্দোলনরত দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী রিক্তা বেগম বলেন, “আমার স্বামী নেই, পাঁচটি সন্তান নিয়ে চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। ছয় বছর এখানে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে আছি, শুধুই আশ্বাস শুনে আসছি। উপাচার্য খন্দকার নাসির উদ্দিনের সময় টাকা দিয়ে চাকরিতে এসেছিলাম। এখন বাধ্য হয়ে আমরা এখানে বসেছি।  চাকরি না হলে এখান থেকে উঠব না। আমাদের ১৩৪ জন

তারা সবাই একটা আশা নিয়ে বসে আছেন; শুধুই চাকরি।”

চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী ও অবস্থান কর্মসূচি পালনকারী মোহাম্মাদ আলি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কেন নিরব ভূমিকা পালন করছে? তারাতো আমাদের ভাই। তাদের থেকে আমরা সহাযোগিতা কামনা করি। তারা কেন আমাদের সহযোগিতার করছে না।” 

তিনি আরও বলেন, “আমরা সাবেক উপাচার্য খন্দকার নাসির উদ্দিনের সময় আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক ওই উপাচার্য আমাদের নিয়োগের ব্যাপারে যথেষ্ট সোচ্চার ছিলেন। এরপর উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক শাহজান স্যার। তিনিও আমাদের নিয়ে কোনো কাজ করেননি। অথচ আমাদের যখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় তখন বলা হয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের স্থায়ী করা হবে।”

“ওই সময় আমরা যারা আসছি কেউ আসছি নেতা ধরে, কেউ আসছি টাকা দিয়ে। সবার একটা আশা ছিল, একটা চাকরি হলে অন্তত ছেলে-মেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবো।”

চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী ও অবস্থান কর্মসূচি পালনকারী নাজিমুজ্জামান বলেন, “আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সেই আশা নিয়েই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসি ও কাজ করছি। এবার আমাদের চাকরির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে হবে। তা নাহলে আমরা এখান থেকে উঠব না। হয় চাকরি দিবে, না হয় আমরা জীবন দেব।”

গত বুধবার (১৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরের সামনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা এ কর্মসূচি শুরু করেন।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একিউএম মাহবুব, প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন ও রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সদস্যরা ফটক ভেঙে উপাচার্যসহ কর্মকর্তাদের অবমুক্ত করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী কর্মচারী ও কর্মচারী সমিতির সদস্যরা ফটক ভাঙার বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয় চুক্তিভিত্তিক ও অবস্থান কর্মসূচি পালনকারী  কর্মচারীরা।

এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে কলাপসিবল গেট ভাঙলেন কর্মচারী সমিতির সদস্যরা ওই সময় পুলিশ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো ভূমিকা বা তৎপরতায় ছিল না বলে জানান আন্দোলনকারী দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীরা।

গত শনিবার সারা বাংলাদেশে গুচ্ছ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র থাকায় রোববার ৯টা পর্যন্ত তারা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত রাখেন।

রোববার সকাল ১০টা থেকে তারা পুনরায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে এত পদের সৃষ্টি হয় না। তাছাড়া ১৫৪ জনের মধ্যে ১৮ জনের চাকরি হয়েছে। নিয়ম-নীতি মেনেই নিয়োগ দেন রিজেক্ট বোর্ড। তাছাড়া জাতীয় ইস্যু ২০ মে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে উপাচার্যের দপ্তরে সভা চলছিল। ওই সময় তারা উপাচার্যের দপ্তরের প্রধান ফটকে তালা বন্ধ করে দিয়ে ঠিক কাজ করেনি।

“তারা অবস্থান কর্মসূচি পালনের বিষয়ে আগেই আমাদের নোটিস দেওয়া উচিত ছিল।”