ভোটের পরিবেশ কেমন? কাছের মানুষদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
শনিবার পর্যন্ত ভালো ছিল। রোববার আমরা বুঝতে পারি নৌকার লোকজন আমাদের ওপর কিছুটা চাপ প্রয়োগ করছে। আমার এজেন্টরা এখন রীতিমতো ভয় পাচ্ছে। জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী যারা আমাদের পক্ষে যারা কাজ করবেন তারা তো বটেই সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভয় কাজ করছে। আমাদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি টঙ্গীতে কথা হয়েছে, সেখানে সমর্থকরা পুলিশের ভয় করছেন। নৌকার লোকজন বলছে, কাউন্সিলরের ব্যাপারে তারা হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু মেয়র পদের ক্ষেত্রে নৌকার বাইরে কাউকে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না। যেহেতু এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল স্পষ্ট হয়েছে। এজন্য আমি মনে করি, মানুষের আস্থাটা আমার হাতি মার্কার দিকেই ঝুঁকছে বেশি। আর সেজন্যই হয়ত নৌকার লোকজনের চাপ বাড়ছে। আমার বাবা-চাচা ও আত্মীয়-স্বজনরা আমার জন্য কাজ করছেন। তারা আমাকে পরামর্শ ও বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন।
বিএনপিতে আপনার পদ-পদবী নেই। তারপরও আপনি তো বিএনপি সমর্থক রাজনৈতিক বলয়ের মানুষ। দল নির্বাচনে গেল না, সেক্ষেত্রে আপনি কোন বিবেচনায় নির্বাচন করছেন?
কেন্দ্রীয় বিএনপি তো আমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে মানা করেনি। এটাও বলেছে, দলে যেহেতু তোমার পদ-পদবী নেই সেহেতু নির্বাচন করতে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। তাই আমি মনে করি এ নির্বাচনে আমার প্রতি কেন্দ্রের মৌন সমর্থন আছে। এ ছাড়া দলের তৃণমূলের শক্তি তো আমার সঙ্গে আছেই। গাজীপুর সিটিতে ৪০ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ভোটার প্রায় ১২ লাখ। আমি মনে করি, সিটি করপোরেশন রাজনীতির ঊর্ধ্বের একটি জায়গা। এখানে মানুষকে সেবা দেওয়াটাই মূল কথা। অন্যদিকে সংসদ নির্বাচনে গিয়ে আমরা রাজনীতিকে বেশি প্রাধান্য দিই।এখন সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নেই, ফলে সিটি করপোরেশনে এসেও যদি সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে তারা দাঁড়াবেন কোথায়?এটা ঠিক, দলে আমার কোনো পদ-পদবী নেই। দল নির্বাচনে না গেলেও আমি সাধারণ মানুষের কথা ভেবে তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মৌন সমর্থন ও পরামর্শ নিয়েই মাঠে নেমেছি।
আপনার পক্ষে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কতটা মাঠে নেমেছেন? তাদের সবার ভোট আপনার পক্ষে আসবে বলে মনে করেন কি?
বিএনপির স্থানীয় কর্মীদের সমর্থন আমার প্রতি রয়েছে। সেইসঙ্গে তৃণমূল বিএনপি, সমর্থক ও বিএনপিমনা মানুষ যারা জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী তারা সবাই আমার জন্য কাজ করছেন। তারা যদি কেন্দ্রে ভোট দিতে যেতে পারেন, ভোট দেওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে ‘নীরব বিপ্লব’ ঘটবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ মানুষ ১৭ বছর ধরে ভোট থেকে বঞ্চিত। এখন জাতীয়তাবাদী শক্তি তৃণমূলে আরও সংগঠিত হয়েছে। তারা অন্তত এমন কাউকে ভোট দেবেন না যে ভোটটা দুদিন পরে নৌকার হয়ে যাবে। সুতরাং তারা আমার বিকল্প কাউকে দেখছেন না।
আজমত উল্লা খান ও জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা দুভাগে বিভক্ত। এটি আপনার নির্বাচনে বিশেষ কোনো সুবিধা দেবে বলে মনে করেন?
আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদীর শক্তির ভোট কিন্তু বিভক্ত হচ্ছে না। সেই ভোটটাও কিন্তু আমার পক্ষেই আছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ বিরোধী শিবিরের যে ভোট, সেটিও আমার পক্ষেই। সাধারণ মানুষ যারা সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন চান, তারা মনে করেন ভোট নষ্ট করার চাইতে এমন কাউকে দেওয়া উচিত যেখানে দিলে কাজে লাগবে। সেক্ষেত্রেও তাদের প্রথম পছন্দ হবে হাতি মার্কা।
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার কারণে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিতে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করেন?
না, মোটেও না। কারণ বিএনপি বলেন আর জাতীয়তাবাদী শক্তির সমমনা দল বলেন, সবাই কিন্তু মানুষের জন্যই রাজনীতি করে। বিএনপি কিন্তু মানুষের বাইরে নয়। এই যে বিভিন্ন আন্দোলন, এগুলো কিন্তু তারা মানুষের জন্যই করছেন। আমি সেই মানুষের জন্যই ভোটে দাঁড়িয়েছি। বিএনপিতে আমার কোনো পদ নেই। বিএনপিও বলেছে যে, উনি নির্বাচন করলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। সেক্ষেত্রে সামনে নেতৃত্ব দিতে আমার কোনো সমস্যা হবে না বলেই প্রত্যাশা করি।
গাজীপুরে প্রার্থীদের মধ্যে আপনিই সবচেয়ে তরুণ। এক্ষেত্রে তরুণ ভোটারদের টানতে বিশেষ কোনো কৌশল নিয়েছেন কী? তাদের জন্য আপনার প্রতিশ্রুতি কী?
তরুণ ভোটারদের টানতে আমি কোনো কৌশল অবলম্বন করছি না। তবে আপনারা জানেন গাজীপুর সিটিতে এবার আড়াই লাখের মতো নতুন ভোটার আছেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা নতুন নেতৃত্ব পছন্দ করবেন। তারা চাইবেন এমন কেউ নেতৃত্বে আসুক যার সঙ্গে মতবিনিময় করা যায়, যিনি তাদের বুঝতে পারবেন। আশা করি, এজন্যই তারা আমাকে নেতৃত্বে চাইবেন বলে আমার বিশ্বাস।তরুণরা যখন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে যান তখন তারা হন্যে হয়ে কাজ খুঁজতে শুরু করেন। পছন্দমতো কাজ না পেয়ে তারা অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন। গাজীপুর একটি শিল্প অধ্যুষিত শহর। এখানে বিভিন্ন কারখানার মালিকরা আছেন। তাদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, নির্বাচিত হলে আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা করব। সিটি করপোরেশনের সব সুযোগ-সুবিধা তারা পাবেন। কিন্তু তাদের কাছে আমার মূল চাওয়া থাকবে, গাজীপুর নগরীর কেউ যেন বেকার না থাকে। যোগ্যতা অনুয়ায়ী যেন তাদের চাকরির ব্যবস্থা করেন শিল্প কারখানার মালিকরা।
ইভিএম-এ ভোট নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? ভোট সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন? ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন?
এর আগে দেখেছি ভোটের আগে ব্যালট বাক্সগুলো বিভিন্ন স্থানে যেমন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে রাখা হতো। আমি বলব, ওইসব স্থানে ইভিএম মেশিন না রেখে ডিসি অফিসের এমন সুরক্ষিত স্থানে রাখা হোক, যাতে সকালে খোলার আগে কেউ সেগুলো ধরতে না পারে। যেন কেউ ভোট টেম্পারিংয়ের চেষ্টা করতে না পারে। আশা করি, নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। ভোট সুষ্ঠু হবে কি-না, সেটা এখনও বুঝতে পারছি না। আমি নির্বাচন কমিশনের ওপর শেষ পর্যন্ত আস্থা রাখতে চাই। যেহেতু কমিশনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমার প্রত্যাশা, কমিশন যেন তার অবস্থানে অটল থাকে। নির্বাচনের যেহেতু আরও কয়েকদিন বাকি আছে, তাই ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন কি-না সেটা এখনও বলা সম্ভব না। ভোটের দিন পর্যন্ত যদি নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক রাখতে পারে তাহালে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার ভোটার উপস্থিতি বেশি হবে বলে মনে করি।
আপনার সমর্থকরা কোনো হুমকির মুখে পড়ছেন? সব কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে?
আমার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, নৌকার লোকজন হুমকি দিচ্ছে। তারা বলছে, ভোটকেন্দ্রে শুধু নৌকার এজেন্টরাই থাকবে। তারপরও আমি সব কেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়ার চেষ্টা করব। কতটুকু সফল হব, তার পুরোটাই নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের উপর।
নির্বাচনের ফলাফল যেটাই হোক না কেন, মেনে নেবেন?
যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, সেক্ষেত্রে আমি ফলাফল মেনে নেব।
নির্বাচিত হলে গাজীপুরবাসীর জন্য প্রথম কোন কাজটি করবেন?
গাজীপুর শহরটা খুবই নোংরা হয়ে গেছে। প্রথমেই আমি শহর পরিচ্ছন্ন করার বিষয়ে কাজ শুরু করব।