নিহতদের একজন টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার মোকছেদ আলীর ছেলে ও ৪১তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রুবেল পারভেজ।
Published : 07 Dec 2023, 01:26 PM
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুইজন।
বৃহস্পতিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের থানা বাসস্ট্যান্ড এবং সাভার হাইওয়ে থানার সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার মোকছেদ আলীর ছেলে ও ৪১তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রুবেল পারভেজ (৪০), মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার মমতাজ উদ্দিনের ছেলে মো. আব্দুল মান্নান। অপরজন হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার মধুপুর গ্রামের মোহাম্মদ খলিলের ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন (১৭)।
আহতদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার মধুপুর গ্রামের মোহাম্মদ খলিলের পরিচয় জানা গেলেও আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যে রুবেল পারভেজ স্ত্রী ফারজানা, মেয়ে ফারিহা আর মাকে নিয়ে ধামরাইয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি মানিকগঞ্জের ঝিটকা মার্কেন্টাইল ব্যাংকে এমটিও হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ আবু হাসান বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনজন। এ সময় সেলফি পরিবহনের দুই বাস রেষারেষি করে একে অপরকে ওভারটেক করার চেষ্টা করলে পথচারী তিনজনকেই চাপা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই পারভেজ ও মান্নান মারা যান। অপরজনকে উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুর রিফফাত আরা বলেন, “আমাদের হাসপাতালে দুইজনকে আনা হয়েছিল। একজনের বয়স ৪০, আরেকজনের ৪২। এদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। অপরজনকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।”
অপরদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার হাইওয়ে থানার সামনে মোটরসাইকেল নিয়ে ইউটার্ন নিচ্ছিলেন আব্দুল মালেক ও ছেলে ইসমাইল। এ সময় আরিচাগামী একটি কভার্ড ভ্যান তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ইসমাইল। আব্দুল মালেক গুরুতর আহত হলে তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাইওয়ে থানার পরিদর্শক বলেন, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেলফি পরিবহনের বাসটি রেখে পালিয়ে গেছে এর চালক ও সহযোগী। বাসটি জব্দ করা হয়েছে।
নিহতদের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রুবেলের মৃত্যুতে শোকার্ত সহকর্মী-সহপাঠীরা
ব্যাংক কর্মকর্তা রুবেল পারভেজের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার সহকর্মী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা।
রুবেলের সহকর্মী শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা একসঙ্গে ঝিটকা বাজারে চাকরি করেছি। আমি এখন মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড শাখায় কর্মরত। রুবেল পারভেজ এমটিও হিসেবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ঝিটকা বাজারে কর্মরত। তিনি ধামরাই থেকে এসে হরিরামপুরে অফিস করতেন। আজ সকালে বাসে উঠার জন্য ধামরাই বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পথে মৃত্যু হলো। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
রুবেলের বন্ধু তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “এসএসসি পাসের পর পরই ওর বাবা মারা যায়। কলেজ জীবন থেকেই ধামরাইয়ে ভাড়া বাসায় থাকত। ধামরাই সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে। অনেক সংগ্রাম করেছে সে।
“ব্যাংকে চাকরি করলেও ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিল। ওর পরিবার শেষ হয়ে গেল।”
রুবেলের সহপাঠী ও টাঙ্গাইল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শাকিল মাহমুদ শাওন বলেন, “অনেক সংগ্রাম করে রুবেল পরিবার গোছাচ্ছিল। বাবাহারা রুবেলও চলে গেল। দেড় বছর বয়সী মেয়ে ফারিহা বাবাহারা হল।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রনি হোসাইন বলেন, “রুবেল পারভেজ আমার ইমিডিয়েট জুনিয়র। ছাত্রজীবন থেকে অনেক সংগ্রাম করেছে। পরিবার গোছানোর সময়ে এমন মৃত্যু, মেনে নেওয়া যায় না।”
ঝিটকা বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হক বলেন, “রুবেল পারভেজ ভাই চমৎকার মানুষ ছিলেন। তার আচার-ব্যবহার ছিল মুগ্ধ হওয়ার মত। তার ব্যাংকিং সেবায় আমরা পঞ্চমুখ ছিলাম।”