গাজীপুরে দ্বিতীয় দিনেও ‘ডার্ড কম্পোজিট’ শ্রমিকরা ধর্মঘটে

বিকালে কারখানার মালিকের সঙ্গে শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনা চলে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 02:47 PM
Updated : 14 May 2023, 02:47 PM

গাজীপুরের শ্রীপুরে ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসে্‌র শ্রমিকেরা দ্বিতীয় দিনের মতো কাজ বন্ধ রেখে ধর্মঘট করছে।

রোববার সকাল থেকেই কারখানার ভেতরে তারা অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও বিক্ষোভ করছে।

এদিকে, মালিক পক্ষ সকাল থেকে কারখানা ফটকে পুলিশ মোতায়েন করে রাখে। 

কারখানার ফিনিশিং সেকশনের নূর মোহাম্মদসহ তার সহকর্মীরা সাংবাদিকদের জানান, এপ্রিল মাসের বেতন ১২ তারিখের মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও কারখানা কর্র্তৃপক্ষ বেতন দিচ্ছে না। শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে আন্দোলনসহ বিক্ষোভ করতে পারে এমন খবর পেয়ে শনিবার (১৩ মে) সকালে কারখানার প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে তারা গেইটে এলে প্রত্যেককে নিরাপত্তা প্রহরীদের দিয়ে চেক করে কারখানায় প্রবেশের অনুমতি দেয়।

ওইদিন শ্রমিকেরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার ভেতরে খোলা জায়গায় (অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে) অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করতে থাকে। এক পর্যায়ে শ্রমিকেরা কারখানার বাইরে এসে রাজেন্দ্রপুর-কাপাসিয়া সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল-মামুনসহ গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও শ্রীপুর থানা পুলিশ কারখানায় এসে মালিকের সঙ্গে কথা বলেন।

পরে তারা শ্রমিকদের রোববার বেলা ১১টায় মালিক নিজে বসার আশ্বাস দিলে বিকাল ৪টায় তারা অবরোধ তুলে নেয় এবং ওই দিনের জন্য কারখানার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।

Also Read: গাজীপুরে বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ

কর্মীরা জানান, দিনের শিফটের শ্রমিকদের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও রাতের শিফটের কয়েকটি বিভাগের শ্রমিকদের কাজে যোগদান করতে বাধ্য করা হয়েছে।

কারখানার সুয়িং অপারেটর ও শ্রমিক প্রতিনিধি সেলিনা আক্তার, আকলিমাসহ শ্রমিকেরা সাংবাদিকদের জানান, বেলা ১১টায় কারখানায় মালিক আসার কথা থাকলেও তিনি বিকাল সোয়া ৪টায় পুলিশ প্রহরায় উপস্থিত হয়েছে।

শ্রমিকদের প্রধান দাবি, তাদের বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সকল বকেয়া পরিশোধ করা; প্রতি মাসের বেতন পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ; নাইট বিল, ওভারটাইম বিল, ইনসেনটিভ বিল, স্টাফদের আনুসাঙ্গিক ভাতা নিয়মিত পরিশোধ।

এ ছাড়া অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে- শ্রমিক না থাকার অজুহাতে একজন শ্রমিককে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানো যাবে না। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন এবং অর্জিত ছুটির পাওনা টাকা শ্রম আইন অনুযায়ী পরিশোধ করতে হবে। নিয়ম অনুয়ায়ী চাকরি ছেড়ে দিলে সার্ভিস বেনিফিট পরিশোধ করতে হবে। যখন-তখন নানা অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না।

শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও জোর করে শ্রমিকদের ডিউটি করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। কারখানার স্টাফদের তিন মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস পরিাশোধ এবং শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা না পর্যন্ত শ্রমিকেরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাবে। কারখানায় প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে।

কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম-প্রশাসন) ক্যাপ্টেন (অব.) মো. আরিফ ফোনে জানান, এসব বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। অসুস্থ থাকায় বাসায় আছেন।

ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসের প্রধান কার্যালয়ের মানব সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা বিদ্যুৎ ফোনে বলেন, “আমি ঢাকা অফিসে বসি। আমার কাছে আসা ম্যাসেজ অনুযায়ী, সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে ৩০ জন শ্রমিক প্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, শিল্প ও থানা পুলিশ সমন্বয়ে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কারখানায় মালিকের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”

গাজীপুর শিল্প পুলিশের শ্রীপুর জোনের ইনচার্জ হুমায়ুন কবির বলেন, “আমরা কারখানায় অবস্থান করতেছি।বেলা ১১টায় মালিক কারখানায় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বিকাল সোয়া ৪টায় তিনি উপস্থিত হয়েছেন। শ্রমিকেরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কারাখান ভেতরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছে।”

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল-মামুন জানান, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ ও অন্য দাবি নিয়ে শ্রমিক প্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, শিল্প ও থানা পুলিশ কারখানা অভ্যন্তরে মালিকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।