ভৈরব নদ খননের মেগা প্রকল্প থেকে যশোরবাসীর কোনো সুফল পায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অদূরদর্শিতা ও কাজের স্বচ্ছতার অভাবে এ অবস্থা বলে অভিযোগ করছেন, নদ খনন নিয়ে দীর্ঘ দিনে ধরে সোচ্চার ভৈরব বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা।
তাদের দাবি, এ মেগা প্রকল্পের কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আর এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড দায় এড়াতে পারে না। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিও করেছেন তারা।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভৈরব খননের সুফল পাওয়া শুরু হয়েছে। নদের উপর থেকে কয়েকটি ব্রিজ অপসারণ করে তা সঠিক মাপ অনুযায়ী পুনর্নির্মাণ করা হলে ভৈরব তার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভৈরব নদ বাঁচাও আন্দোলনের সংগঠকদের থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে ২৭২ কোটি টাকার ৯২ কিলোমিটার নদ খনন প্রকল্প গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয় পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’।
যশোর শহর অংশের চার কিলোমিটার এলাকায় নামমাত্র কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর উচ্ছেদ অভিযান নিয়েই খননের জটিলতা শুরু হয়। কয়েক দফা ঠিকাদার বদল ও কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির পর গত বছরের শেষের দিকে ভৈরব নদের যশোর অংশের খননের কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
ভৈরব নদ বাঁচাও আন্দোলন যশোরের উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, “ভৈরবের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অদূরদর্শিতা, স্বচ্ছতার অভাব দায়ী।”
এ জন্য সদ্য বিদায়ী নির্বাহী প্রকৌশলীর প্রতি আঙুল তোলেন তিনি।
জাহিদ বলেন, “আমরা যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে নিয়ে ভৈরব খননের জন্য আন্দোলন করে আসছি, সেটি হলো শতভাগ ‘নদী আইন’ অনুসরণ করে ভৈরব নদ খনন করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো কিছুই অনুসরণ করা হয়নি। বরং সম্পূর্ণ নদীতট উপেক্ষা করে অর্থ লুটপাটের টার্গেট নিয়ে খননের কাজ শেষ করা হয়েছে। প্রভাবশালীদের ক্ষমতা ও দুর্নীতি মিলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত এ মেগা প্রকল্পের টাকা নয়-ছয় করা হয়েছে।এ ছাড়া নদের উপরে থাকা অপরিকল্পিত ৫১টি ব্রিজ-কালভার্ট অপসারণ করা হয়নি।”
তিনি এসব অনিয়ম দুর্নীতির একটি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান।
ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের কর্মী তৌহিদ জামান বলেন, “খননের নামে ভৈরব নদকে আরও ছোট করে ফেলা হয়েছে। খননের মাটি দিয়ে নদের পাড় বাঁধানোর পর এর প্রশস্ততা কমে গেছে।”
তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, “নদের শহরাংশের দড়াটানা ব্রিজের পশ্চিম পাশের দুই পাড় বেঁধে নান্দনিকতার কাজ করা হচ্ছে। হয়তো আমরা এতে খুশি হচ্ছি। কিন্তু পূর্ব পাশে ভৈরবে ময়লা আবর্জনার স্তুপ দেখলে বোঝা যাচ্ছে, আসলে খননের পর কতটা সফলতা এসেছে। শহরের বিভিন্ন অফিস, বাসা-বাড়ি, বেসরকারি হাসপাতালের ময়লা আবর্জনা ও দূষিত পানি প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে ভৈরবে। এতে পরিবেশ আরও দূষণ করে তুলছে। ফলে এর দায়ভার পানি উন্নয়ন বোর্ড এড়াতে পারে না।”
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর।
সদ্য যোগ দেওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম মমিনুল হক বলেন, “প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনও ধরনের অনিয়ম হয়নি। নদে শহর ও আশপাশের যেসব এলাকায় ময়লা আর্বজনাযুক্ত পানি ফেলা হয়, সেগুলো চিহ্নিত করে সেই সব ড্রেন বা পাইপের মুখে নেট দেওয়া হয়েছে।
খননের পর নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য নদের উপরের কিছু ব্রিজ ও কালভার্ট অপসারণের কাজ চলছে। এগুলো সম্পন্ন হলেই ভৈরব তার পুরনো যৌবন ফিরে পাবে বলে দাবি তার।