কুমিল্লার ‘ফুসফুস’ ঈদগাহ মাঠ

মাঠজুড়ে এত এত আয়োজন স্বত্তেও ব্যস্ত নগরীতে খোলা হাওয়ায় একটু খেলাধুলা আর শরীরচর্চা করতে পেরেই সবাই যেন তৃপ্ত।

আবদুর রহমানকুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2023, 10:19 AM
Updated : 18 Nov 2023, 10:19 AM

প্রকৃতিতে শীতের আগমনী হাওয়া। এমন সময়ে ব্যস্ত কুমিল্লা নগরী জেগে ওঠার আগেই মানুষ দলে দলে ছোটেন সেখানে; কারও হাতে ক্রিকেটের ব্যাট-বল-স্টাম্প, আবার কারও পায়ে ফুটবল। স্বাস্থ্য সচেতন লোকজনও যাচ্ছেন নির্মল বায়ুর প্রত্যাশায়।

প্রতিদিন ভোর বা সকালে কুমিল্লা নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে গেলে এমন দৃশ্য দেখে যে কারোই মনে হবে- ঈদগাহ যেন পরিণত হয়েছে খেলার মাঠে।

কুমিল্লা নগরবাসীর খেলাধুলা করার জন্য তেমন কোনো মাঠ নেই। একটি স্টেডিয়াম থাকলেও সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশের সুযোগ নেই। আর নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠও উন্মুক্ত নয়।

এসব কারণে নগরবাসীর খেলাধুলার প্রধান ঠিকানা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের চার এক আয়তনের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, হেমন্তের হালকা কুয়াশার মধ্যেই ভোর ৫টার পর থেকেই মানুষ আসছেন ঈদগাহ মাঠে। মাঠটিতে অন্তত ২০টি দল ক্রিকেট খেলছে। 

মাঠের মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে ছোট ছোট গোলপোস্ট। মাঠজুড়ে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে চলা ম্যাচে ফুটবল পায়ে গোলপোস্ট লক্ষ্য করে ছুটছিলেন খেলোয়াড়রা।

অন্যদিকে মাঠের চারদিকে হেঁটে বেড়াচ্ছেন অসংখ্য স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। কেউ করছেন জগিং বা কেউ হালকা ব্যায়াম।

এখানে আসা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু সকাল বা ভোর বেলাই নয়। বিকালেও এমন ব্যস্ততা থাকে ঈদগাহ মাঠে। আবার সন্ধ্যার পরও ঢল নামে মানুষের। তখন শত শত মানুষ এই ঈদগাহ মাঠে আসেন নিজেকে সতেজ রাখতে হাঁটার জন্য।

ঈদগাহ মাঠে ক্রিকেট খেলতে আসা মাসুদ কামাল বলেন, “কুমিল্লা নগরীর প্রায় প্রতিটি স্কুলেরই খেলার মাঠ রয়েছে। তবে সেগুলো তালাবদ্ধ করে রাখেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। আর নগরীতে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম থাকলেও সেখানে সবাই খেলতে যেতে পারে না। তাই সাধারণ মানুষের একমাত্র ঠিকানা এই ঈদগাহ মাঠ।” 

আরেক তরুণ জসিম উদ্দিন বলেন, “নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত খেলাধুলা করতে হয়। কিন্তু আমাদের নগরবাসীর খেলার জন্য কোনো মাঠ নেই। তাই প্রতিদিন এখানেই খেলতে আসি।”

মাহফুজ আলম নামের একজন বলেন, “এক সঙ্গে এত মানুষ খেলছে ঈদগাহ মাঠে। তারপরও কেউ কোনো ঝামেলা করছে না। এখানে খেলতে আসা সকলে একে অপরের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক। মনে হয় সবাই একই পরিবারের সদস্য।”

ঈদগাহ মাঠে ফুলবল খেলতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, “এখানে আসা বেশিরভাগ মানুষের উদ্দেশ্য হলো নিজেকে সুস্থ রাখা। তাই মিলেমিশে খেলাধুলা করে নিজেদের সতেজ রাখার চেষ্টা করেন সকলে।”

কুমিল্লা সদর উপজেলার টিক্কারচর-শুভপুর এলাকায় গোমতী নদীর তীরে ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা স্পোর্টস একাডেমি ও শেখ কামাল ক্রীড়া পল্লীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল।

১০ একর জায়গা নিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশাল খেলার মাঠ ও একাডেমি। তবে প্রায় তিন বছর হতে চললেও সেটি এখনো পুরোপুরি নির্মাণ করা হয়নি। মাঝেমধ্যে সেখানে কিছু খেলা হচ্ছে। কিন্তু একাডেমির কোনো অবকাঠামোই গড়ে ওঠেনি।

তবে ওই এলাকাটি কুমিল্লা নগরীর বাইরে এবং অবস্থান দূরে হওয়ায় ওই মাঠ নগরবাসীর তেমন উপকারে আসছে না। 

বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, “নগরবাসীর খেলাধুলার জন্য অন্য কোনো জায়গা নেই। যার কারণে মানুষ ঈদগাহ মাঠে ভিড় করে। শুধু খেলাধুলাই নয়, প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় কয়েক হাজার মানুষ এখানে হাঁটতে আসেন।

“বছরের পর বছর ধরে নগরবাসীর জীবন এভাবেই চলছে। নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠগুলোতে মানুষের খেলাধুলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।”

কুমিল্লা নগরীর সচেতন ব্যক্তিরা নগরীর মানুষের খেলাধুলার ব্যবস্থা আরও বাড়াতে সিটি করপোরেশন এবং জেলা প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে বলেছেন।

পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠগুলোতেও খেলাধুলার সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলেছেন তারা।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামছুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নগরবাসীর বিনোদন আর খেলাধূলার আর কোনো জায়গা না থাকায় ঈদগাহ মাঠটি মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।”

নগরবাসীর সুবিধার্থে মাঠটির উন্নয়নে ও সৌন্দর্যবন্ধনে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে বলেও জানান তিনি।