Published : 22 Jan 2024, 08:33 PM
টাঙ্গাইল, মাদারীপুর ও নীলফমারিতে পুরোদমে জেঁকে বসেছে শীত। এতে ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জনজীবন।
তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় এসব জেলায় মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।
তীব্র শীতে জরুরি কাজ ছাড়া লোকজন বের হচ্ছে না। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। কাজে যেতে অপরিসীম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
সোমবার মাদারীপুরে তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে; যা চলতি শীত মৌসুমে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জানিয়েছেন জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষক আবদুর রহিম সান্টু।
তিনি বলেন, “কুয়াশার পরিমাণ কালকের চেয়ে কিছুটা কম ছিল; ভিজিবিলটি ২ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখা গেছে। আর বাতাসের আর্দ্রতা সর্বোচ্চ ৯৭ শতাংশ ছিল। তবে ঠান্ডার সঙ্গে হিমেল বাতাস থাকায় শীত কিছুটা বেশি অনুভূত হচ্ছে।”
মাদারীপুরে গত এক সপ্তাহ ধরে সন্ধ্যার পরই শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়; সেই সঙ্গে কুয়াশাও থাকছে। সোমবার ভোরে কুয়াশা আর তীব্র শীত মাথায় নিয়ে কৃষকদের বোরো ধানের চারা রোপন করতে দেখা গেছে। রাস্তাঘাটেও শ্রমজীবী মানুষের দেখা মিললেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম ছিল।
ডাসার উপজেলার শশিকর গ্রামের বাসিন্দা লিটন সরকার বলেন, “রোববার সন্ধ্যা থেকেই প্রচুর শীত পড়েছে; সবাইকে একেবারে কাবু করে ফেলেছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত তো কেউ বেরই হয় নাই। ৯টার পর সূর্য উঠলে অনেকে কৃষি কাজে নেমেছেন।”
প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেই মাঠে কাজ করতে দেখা গেল রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের দুর্জয় বাড়ৈকে। তিনি বলেন, “এখন ধান রোপনের সময়; কাজ না করে উপায় নেই। আমাদের বিল অঞ্চলের মানুষেরা শীত পড়লেও থেমে নেই। কষ্ট হলেও জমিতে কাজ করছে।
“আসলে কিছু করার নেই। কেউ তো আর এই বিলের মানুষদের জন্য একটা কম্বল নিয়ে আসবে না।”
মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নারগিস আক্তার জানান, তার এলাকার কম আয়ের মানুষদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ভাবে শীতের শুরু থেকেই গরম কাপড় বিতরণ করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে পাঁচ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় সরকারি নির্দেশ অনুয়ায়ী জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে বলে মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল জানান।
টাঙ্গাইলে সোমবার তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল বলে জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন।
জেলায় এক সপ্তাহ ধরে দিনের বেলায় কখনও কখনও সূর্যের দেখা মিলছে। বিকাল থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে; রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন শীতার্তরা। ঘনকুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও সড়কে গাড়ি চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। বেশির ভাগ সময়ই জনশূন্য থাকছে ব্যস্ততম সড়ক ও হাটবাজার।
সংসার চালাতে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে কাজের সন্ধানে ছুটছেন টাঙ্গাইল শহরের অটোচালক আমির হামজা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কনকনে শীতে হলেও কামাই করার জন্য তো বের হতেই হচ্ছে।”
জয়নাল নামের আরেক চালক বলেন, “যে হারে ঠান্ডা বাতাস বইছে তাতে সবার চলাচল করতে খুব সমস্যা হচ্ছে।”
এদিকে শীতজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বয়স্কদের ভিড় বাড়ছে। শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “শীত বাড়ায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে শিশুই বেশি।”
শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এসব রোগ থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় ব্যবহার এবং যতটা সম্ভব ঠান্ডা এড়িয়ে চলা জরুরি। শিশুদের ঠান্ডা ও ধুলাবালু থেকে যতটা সম্ভব দূরে এবং শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে তাদের ঘরে রাখতে হবে।”
টাঙ্গাইলে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান।
নীলফামারীতে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রের্কড করা হয়েছে সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান।
সোমবার জেলার উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার ও বুধবার তাপমাত্রা সামান্য বাড়বে। এরপর ২৫ তারিখের পর আবার কমবে বলে জানান তিনি।
শীতের দাপটে বিপাকে পড়েছে জেলার খেটে খাওয়া মানুষ। তাদেরই একজন সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের হাতিবান্দা গ্রামের কৃষি শ্রমিক নজরুল ইসলাম।
নজরুল বলেন, “আজি খুব ঠাণ্ডা লাগেছে বাহে। সকাল থাকি শিরশির বাতাস বহেছে, হাত-পা কোকড়া হইয়া যাইছে।”
জেলার নিম্ন আয়ের মানুষরা খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। তাদের অভিযোগ, সরকারি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে যে পরিমাণ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় ‘অপ্রতুল’।
তবে জেলায় সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ৪২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জানান।