বিএনপির বিক্ষোভ, তিন জেলায় গ্রেপ্তার ৪৯

বিভিন্ন জেলায় বিএনপির বিক্ষোভ-মিছিল ও গ্রেপ্তারের সংবাদ জানিয়েছেন জেলা প্রতিনিধিরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2022, 04:46 PM
Updated : 8 Dec 2022, 04:46 PM

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে একজন নিহত ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধায়, সিলেট, ফেনীতে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ হয়।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশের অভিযানে অর্ধশত নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।

নিয়মিত মামলায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে দাবি পুলিশের।  

দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপির বিক্ষোভ-মিছিল ও গ্রেপ্তারের সংবাদ পাঠিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিরা।

কুড়িগ্রাম

ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত এবং দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ দুটি বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেছে জেলা বিএনপি।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে পৌর শহরের পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়া ও সরদাপাড়ায় তাদের দলীয় কার্যালয় থেকে দুটি মিছিল বের হয়। তবে মিছিল দুটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

পরে শহরের জাহাজঘর মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, যুগ্ম-সম্পাদক হাসিবুর রহমান হাসিব, জেলা বিএনপির সদস্য শাহীন শেখ রঞ্জু, জেলা বিএনপির সমবায় বিষয়ক শফিকুল ইসলাম শফি মুন্সিসহ অন্য নেতা-কর্মীরা।

শহরের সরদারপাড়ায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক আলতাফ হোসেন, যুগ্ম-সম্পাদক আশরাফুল হক রুবেল, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী মোসলেম উদ্দিন মোল্লা দুলাল, সদর থানা বিএনপি সম্পাদক মাহবুব হোসেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম লেবুসহ অন্য নেতা।

গাইবান্ধা

নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি হামলা, হত্যা ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের প্রতিবাদে গাইবান্ধায় জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এতে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুর মোর্শেদ বাবুর সভাপতিত্ব করেন।

জেলার প্রচার সম্পাদক মোস্তাক আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আলমগীর সাদুল্যা দুদু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান সেলিম, বিএনপি নেতা মো. শামসুল হাসান, মো. সাদেকুল ইসলাম নান্নু, জেলা যুবদল সভাপতি রাগিব হাসান চৌধুরীসহ অন্য নেতারা।

বক্তারা গ্রেপ্তার সব নেতা-কর্মীকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তির দাবি জানান।

সেইসঙ্গে নয়াপল্টনে মকবুল হোসেন নিহতের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি চান।

ফেনী

একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ফেনী জেলা বিএনপি।

বৃহস্পতিবার বিকালে মিছিলটি শহরের তাকিয়া রোড থেকে শুরু হয়ে ট্রাংক রোড প্রদক্ষিণ করে ইসলাম রোডের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে তারা সমাবেশে মিলিত হয়।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক এমএ খালেক, ইয়াকুব নবী ও আলাউদ্দিন গঠন।

মিছিল-সমাবেশে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছিলেন।

সিলেট

বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

নয়াপল্টনে পুলিশের বর্বরোচিত হামলা, নির্বিচার গুলি চালানোর প্রতিবাদে সিলেট মহানগর বিএনপি এ বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

এতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী সভাপতিত্ব করেন।

এছাড়া বিক্ষোভ মিছিল করেছে সিলেট জেলা বিএনপি।

মিছিলটি দক্ষিণ সুরমার রেল গেইট থেকে শুরু হয়ে ক্বীন ব্রিজের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী বক্তব্য দেন। 

জেলা বিএনপি নেতা আশিক উদ্দিন, মো. শাহাব উদ্দিন, ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, আবুল কাশেম, ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী সুফি, কোহিনুর আহমদ, জসিম উদ্দিন, একেএম তারেক কালাম, শহীদ আহমদ  চেয়ারম্যান, ফালাকুজ্জামান চৌধুরী জগলু, ইকবাল বাহার চৌধুরী, আব্দুল লতিফ খান, কামাল আহমদ, তাজরুল ইসলাম তাজুল, আনোয়ার হোসেন মানিক, ময়নুল হক, আবু তাহের, আল আসলাম মুমিন, রফিকুল ইসলাম শাহপরান, বাদশা আহমদ, আখতার হোসেন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সিনিয়র-যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির শাহীন, যুগ্ম-আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম, জিয়াউল গণি আরেফিন জিল্লুর, হাবিবুর রহমান, সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, এমদাদ হোসেন চৌধুরী, নজীবুর রহমান নজীব, সালেহ আহমদ খসরু, সদস্য আমির হোসেন, মুকুল আহমদ মুর্শেদ, সৈয়দ সাফেক মাহবুব, শামীম মজুমদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

তিন জেলায় গ্রেপ্তার ৪৯

কুমিল্লা

কুমিল্লা নগরীতে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে দুই যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নগরীর ধর্মসাগর পাড়ায় বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের প্রবেশপথ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার কান্দিরপাড় ফাঁড়ির পরিদর্শক তপন বাকচি জানান।

গ্রেপ্তররা হলেন- কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম ও সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম।

ওই কর্মসূচি পালনের জন্য বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ওয়াসিম ও জহিরুলসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা একত্র হওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। দলীয় কার্যালয়ের প্রবেশপথ থেকে তাদের আচমকা গাড়িতে উঠিয়ে ফেলে পুলিশ। জেলা যুবদল সভাপতিকে গ্রেপ্তারের পরপরই বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে বের হওয়া মিছিলটি নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।

মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তার আগেই আমাদের দুই নেতাকে পুলিশ আটক করে। পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।”

বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে কুমিল্লা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন বলেন, “আমরা তাদের (বিএনপিকে) ধাওয়া দিইনি। তারাই আমাদের দেখে পালিয়েছে। ওয়াসিম ও জহিরের নামে মামলা থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

তবে তারা কোন মামলার আসামি, সে বিষয়ে কিছু জানাননি এ পুলিশ কর্মকর্তা।

ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহে নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় বিএনপির ২৭ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত জেলার ৫টি উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান।

তিনি জানান, জেলার ডাকাবাংলা বাজারে আওয়ামী লীগ কার্যালয় পোড়ানোর মামলায় বিএনপির ১৬ জন স্থানীয় নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, উপজেলার বারোবাজার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় উপজেলা বিএনপির দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে কোটচাঁদপর থানার ওসি মঈন উদ্দিন জানান।

বিস্ফোরক আইনের মামলায় উপজেলা বিএনপির দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানান মহেশপুর থানার ওসি খোন্দকার শামীম উদ্দিন।

এ ছাড়া শৈলকুপা থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম জানান, নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বোমা রাখার মামলায় বিএনপির একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

গ্রেপ্তারদের বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।

মাগুরা

মাগুরার চার থানায় বিএনপির ২০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে শালিথা থানা পুলিশের হাতে ৯ জন, সদরে ৫ জন, শ্রীপুর ও মহম্মদপুরে ৩ জন করে বিএনপি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন জানিয়ে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, এরা সবাই নিয়মিত মামলার আসামি।