কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভানারোবেন ওমেন বেনিফিট-ভিডব্লিউবি’র চাল বিতরণে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া ব্যব্সায়ীরা পরিষদের ভেতরেই কিনে নিচ্ছেন সুবিধাভোগীদের দেওয়া চাল।
মঙ্গলবার সরেজমিনে উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান করলে ধরা পড়ে এমন চিত্র।
টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে ওই ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা বলছেন, চালের বস্তার জন্য তিনি এ টাকা নিচ্ছেন।
সুবিধাভোগী রাহেনা বেগম জানান, তিনি ৩০ কেজি করে চাল পেয়েছেন। কিন্তু তাকে ৩০ টাকা দিতে হয়েছে।
চাল পাওয়া খালেদা ও ইয়েরন জানান, টাকা কেন নিচ্ছে তারা তা জানেন না। সবার কাছ থেকে নিচ্ছে তাই তারাও দিচ্ছেন।
সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাইদুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক বলেন, “চেয়ারম্যান ট্যাকা নিতে বলেছে, তাই লিতেছি। আপনারা চেয়ারম্যানের কাছ থেইকা জানেন।”
চিলমারী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদতপ্র থেকে জানা গেছে, এ উপজেলায় ভিডব্লিউবি আওতায় ৩ হাজার ২২৩ সুবিধাভোগীর মধ্যে এ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে ৫৬৮টি, নয়ারহাটে ৩৬০টি, থানাহাট ৭৬০টি, চিলমারী ইউনিয়নে ৩২৫টি, অষ্টমীরচর ৫১৫টি এবং রমনা মডেল ইউনিয়নে ৬৯৫টি কার্ড বিতরণ করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে উপজেলার থানাহাট ও রমনা মডেল ইউনিয়নে এক হাজার ৪৫৫ জনের মাঝে চাল বিতরণের উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রুকুনুজ্জামান শাহীন।
শুরুর দিনেই এমন অনিয়মের অভিযোগ উঠায় ভিডব্লিউবি প্রকল্পের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ওই ইউনিয়নের দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার ও কৃষি উপ সহকারী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি অফিসিয়াল কাজে বাইরে এসেছি এর মধ্যেই ইউপি চেয়ারম্যান আমার সঙ্গে কথা না বলে মালামাল বিতরণ শুরু করেছেন। আমি টাকা নেওয়ার বিষয়টি শুনেছি এবং চাল বিতরণ বন্ধ রাখতে ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি।”
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোছা. সোহেলী পারভীন বলেন, “বস্তার টাকা নেওয়া কোনো নিয়ম নেই। আপনার মুখে শোনার পর আমি লোক পাঠিয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, পরিষদে চাল বিতরণ স্থানের ঠিক সামনেই কয়েকজন ব্যবসায়ীকে চাল কিনতে দেখা গেছে। তারা ৩০ কেজি চালের বস্তা এক হাজার ৫০ থেকে ১১শ ৫০ টাকা দিয়ে ক্রয় করে নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুবিধাভোগী এক নারী বলেন, তিনি ৩০ কেজি চালের বস্তা ১১শ টাকায় বিক্রি করেছেন।
শুধু ওই নারীই নন, এমন আরও অনেকেই এভাবেই উন্মুক্তভাবে চাল বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এ প্রতিবেদকে দেখে ব্যবসায়ী ভেবে এক সুবিধাভোগী চাল বিক্রির দরদাম শুরু করেন।
চালের ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা কোনো মন্তব্য করেননি।
পরিষদের আঙ্গিনাতেই চাল কেনা-বেচা বন্ধের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম আশেক বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, চাল যেন কেউ বিক্রি না করেন। আজ যেহেতু প্রথম দিন। তবে এরপর থেকে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে চাল বিতরণ করা হবে, যাতে কোনো ব্যবসায়ী পরিষদের ভেতর থেকে চাল কিনতে না পারে।”