প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের প্রথম এই ছয় লেইনের সেতু উদ্বোধন করবেন।
Published : 09 Oct 2022, 10:23 PM
অবশেষে খুলছে গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের সীমান্তে নির্মিত দেশের প্রথম ছয় লেইনের মধুমতী সেতুর দুয়ার।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৬৯০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর উদ্বোধন করবেন।
এ উপলক্ষে ধনুকের মত বাঁকানো সেতু আর সংযোগ সড়কের দুই পাশে ইতোমধ্যে লাগানো হয়েছে রঙ বেরঙের পতাকা; নড়াইল, যশোর, বেনাপোলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ অপেক্ষা করছে সেই মুহূর্তের।
নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ২০০৮ সালে নড়াইলের সুলতান মঞ্চে নির্বাচনী জনসভায় কালনা ঘাটে এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনি ‘কালনা সেতু’ নামে এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
পরে কালনা সেতুর নাম পরিবর্তন করে নদীর নামে ‘মধুমতি সেতু’ নামকরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সেতু উদ্বোধনের আগের দিন রোববার তা পরিদর্শনে গিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শ্যামল ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা ইতোমধ্যেই দেখেছেন উদ্বোধনের জন্যে সেতুটি পুরোপুরি প্রস্তুত। আগামীকাল বেলা ১২টায় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করছেন, আর রাত ১২টায় জনসাধারণের চলাচলের জন্যে উন্মুক্ত করে দেব।”
নড়াইলের লোহাগড়ার উপজেলা এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত এই সেতু উদ্বোধন হলে নড়াইল যশোরসহ এ অঞ্চলের মানুষ সড়কপথে সরাসরি ঢাকা যাতায়াত করতে পারবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও এ সেতু ভূমিকা রাখবে বলে সরকার আশা করছে।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী ও কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান বলেন, ৯৬০ কোটি টাকায় নির্মিত মধুমতি সেতু দেশের প্রথম ছয় লেইনের সেতু, যার প্রস্থ ২৬ দশমিক ১ মিটার। সেতুর উভয় পাশে ৬ লেইনের সংযোগ সড়ক রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার।
সেতু উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে নড়াইলের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্থানীয়দের দীর্ধদিনের অপেক্ষার অবসান হবে।”
শ্যামল ভট্টাচার্য বলেন, “এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্পের আওতায় এই সেতুই প্রথম উদ্বোধন করছি। এই সেতু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সুফল ইতিমধ্যেই পেয়েছি, কিন্তু সেই সুফল পুরোপুরি পেতে নড়াইল, যশোর ও এই অঞ্চলের যেসব স্থলবন্দর রয়েছে বা অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর পুরোপুরি সুবিধা নেওয়ার জন্য এই মধুমতী সেতুর কানেকশন জরুরি ছিল।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। রোববার বিকাল থেকেই আশপাশের এলাকার মানুষ ভিড় করছে সেতুটি দেখতে। তবে উদ্বোধনের আগে সেতুতে ওঠার অনুমতি না মেলায় দূর থেকেই তাদের কৌতূহল মেটাতে হচ্ছে।
সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এর প্রকল্প পরিচালক শ্যামল ভট্টাচার্য বলেন, সোমবার উদ্বোধনের পর রাত ১২টা থেকে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। এ সেতুতে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। টোল প্লাজাগুলোও পুরোপুরি প্রস্তুত।
কালনা সেতু ঘাট এলাকায় রোববার দুপুরে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যশোরের কামরুল ইসলাম বলেন, “আজো ফেরি ঘাট এলাকায় অনেকক্ষণ বসে আছি। আমাদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সেতু চালু হলে আমাদেরকে আর এই রকম ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।”
সুজিত বোস নামের এক বাসযাত্রী বলেন, “আজও কষ্ট করে ফেরি পার হলাম। কাল থেকে আমাদের এই কষ্ট দুর হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন, “সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমাদের একটি স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। আমরা এই অঞ্চলের মানুষ খুব সহজে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নড়াইলসহ এ অঞ্চলের মানুষের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”
যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম মিলন সাংবাদিকদের বলেন, “সেতুটি এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙা করবে এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যাপকভাবে সহজ করবে। বেনাপোল স্থলবন্দর, মোংলা সমুদ্রবন্দর ও নওয়াপাড়া নদী বন্দরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।”
রোববার সেতু পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার, সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস উপস্থিত ছিলেন।
মধুমতি সেতু পারাপারের জন্য বড় ট্রেইলার ৫৬৫টাকা, তিন বা ততোধিক এক্সসেলের ট্রাক ৪৫০টাকা, দুই এক্সসেলের মাঝারি ট্রাক ২২৫ টাকা, ছোট ট্রাক ১৭০ টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫ টাকা, বড় বাস ২০৫ টাকা, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকাপ, রূপান্তরিত জিপ ও রেকার ৯০ টাকা, প্রাইভেট কার ৫৫ টাকা, অটো টেম্পো, অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিনচাকার যান ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা এবং রিক্সা, ভ্যান ও বাইসাইকেলে পাঁচ টাকা করে টোল দিতে হবে।