বাগানে কোথাও একটি-দুটো করে গাছ মরে গেছে, নতুন আসা কুঁড়িগুলো থমকে আছে, পাতা ঝিমিয়ে পড়ছে।
Published : 19 Apr 2023, 07:13 PM
চৈত্রের শেষ থেকে চলমান তাপপ্রবাহ জনজীবনে যে ভোগান্তি নিয়ে এসেছে, তার আঁচ লেগেছে মৌলভীবাজারের চা বাগানেও।
কয়েক দিন ধরে থার্মোমিটারে পারদ উঠতে থাকায় চা গাছের ‘কুঁড়ি বাড়ছে না’, কোথাও আবার পুরো গাছটিই পুড়ে গেছে। তাতে অন্য সময়ের তুলনায় চা পাতা আহরণও ‘অর্ধেকে’ নেমে আসার কথা বলছেন শ্রমিকরা।
বুধবার শ্রীমঙ্গলের ভুরভুরিয়া চা বাগানসহ কয়েকটি বাগান ঘুরে গেছে, বাগানের বিভিন্ন সেকশনে মাঝে মাঝে একটি-দুটি করে গাছ মরে গেছে। নতুন আসা কুঁড়িগুলো এক সপ্তাহ ধরে থমকে আছে, কোথাও ঈষৎ হলুদ বর্ণ ধারণ আবার পাতা ঝিমিয়ে পড়েছে।
ভুরভুরিয়া চা বাগানে কাজ করছিলেন শ্রীমতি রিকিয়াশন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এই সময়ে সারা দিনে যেখানে ২৫ থেকে ৩০ কেজি পাতা তোলার কথা, সেখানে পাতা উঠছে ১০ থেকে ১২ কেজি। ফলে দৈনিক ১৭০ টাকা হাজরির (মজুরি) জন্য যে ২৪ কেজি পাতা বাধ্যতামুলকভাবে তুলতে হয়, সেটিও পূরণ হচ্ছে না।
আরেক চা শ্রমিক বাসন্তী জানান, প্রচণ্ড রোদে সারাদিন কাজ করেও মেলাতে পারছেন না তাদের হাজরি।
মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিস্তৃত অঞ্চল দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
কয়েকদিন ধরেই মৌলভীবাজারে এই তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ থেকে সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। ফলে চা গাছের জন্য ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আদর্শ হলেও অতিরিক্ত তাপমাত্রায় চা গাছে নতুন কুড়ি বা পাতা বাড়ছে না, স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘বাঞ্জি দশা’।
বালাদেশ চা গবষণা কেন্দ্রর পরিচালক ইসমাইল হোসেন জানান, চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উত্তম। তবে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে। এর উপরে গেলে খরায় পড়বে চা। দেখা দেবে বাঞ্জি দশা।
“চা বাগানে প্রতি ২০ ফুট অন্তর শেড ট্রি থাকলে তাপমাত্রা ৩৫/৩৬ ডিগ্রি পর্যন্ত সহনীয়। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে গাছের পাতায় অবস্থিত ক্লোরফিলের মাধ্যমে গাছ যেভাবে খাদ্য আহরণ করে, তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি পার হলেই চা গাছ এই সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।”
চা গাছের বাঞ্জি দশাকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মনে করেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক রফিকুল হক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের এখন এরকম অবস্থা মোকাবেলা করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এর জন্য চা বাগানে সমন্বিত পদ্ধতি মেনে চলতে হবে।
“চলমান অবস্থায় তরুণ চা গাছের গোড়ায় কচুরিপানা ও লতাপাতা দিতে হবে। প্রত্যেক বাগানেই জলাধার তৈরি করতে হবে এবং সেচ পদ্ধতি চালু রাখতে হবে।”