দুর্গা প্রতিমাকে ভিন্ন আদলে তুলে ধরার প্রয়াসে ধান ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূজামণ্ডপের সংগঠকরা।
Published : 18 Oct 2023, 12:02 PM
একমাসের বেশি সময় ধরে ফুলের মতো একটির পর একটি ধান গেঁথে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমার অবয়ব। সুগন্ধি ধানে গড়া সেই দুর্গা প্রতিমা যেন সোনা দিয়ে মোড়ানো।
এবার শারদ উৎসবে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ধানে গড়া এই দুর্গা প্রতিমার মৃন্ময় রূপের দ্যুতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকার পাতায়ও উঠে এসেছে প্রতিমাটির সৌন্দর্যের প্রশংসা।
কলারোয়া পৌরসদরের উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়া পূজামণ্ডপে চিনিকানি সুগন্ধি জাতের ধানে তৈরি এই প্রতিমা এখন পরিপূর্ণ রূপে দৃশ্যমান।
পূজামণ্ডপের অন্যতম সংগঠক ও শিক্ষক দিলীপ কুমার পাল বলেন, একমাসের বেশি সময় ধরে চেষ্টার ফসল হিসেবে ব্যতিক্রমী দুর্গা প্রতিমা বুধবার পূর্ণতার ছোঁয়া পেয়েছে। রং-তুলির মাধুরী মিশিয়ে প্রতিমার সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ এক ভিন্ন মাত্রা নিয়েছে।
“ধানে গড়া দুর্গা প্রতিমা যেন সোনার আলোয় বানানো এক চিরায়ত বাংলার মুখ। ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’- কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের এই শাশ্বত আহ্বান যেন ফুটে উঠেছে প্রতিমার গোটা অবয়ব জুড়ে!“
পালপাড়া পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, রং-তুলির সর্বশেষ প্রলেপ সম্পন্ন হওয়ার পর এখন গোটা প্রতিমা আবৃত রাখা হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার আগে থেকেই এক নজর প্রতিমা দর্শন করতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
পূজা মণ্ডপের অনিক পাল জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে নির্মিত প্রতিমাটির মাটির কাজ শেষ করতে প্রতিমাশিল্পী প্রহ্লাদ বিশ্বাসসহ চার জন প্রতিমাশিল্পী এক মাসের বেশি সময় লেগেছে। বিশেষভাবে ছোট ছোট ধান বসানো হয়েছে ফুলের মতো করে। যার কারুকার্জে নয়নাভিরাম রূপ পেয়েছে দুর্গাপ্রতিমা।
অনিক জানান, প্রতিমাকে ভিন্ন আদলে তুলে ধরার প্রয়াসে ধান ব্যবহার করা হয়েছে। যেন সোনালি আভা ফুটে ওঠে। এছাড়া ধান গ্রামবাংলার মানুষের কাছে সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্যের স্মারকও বটে।
তিনি আরও জানান, প্রতিমা তৈরিতে সুগন্ধি ধানের খরচ হয়েছে আনুমানিক এক লাখ টাকার মতো। ধান লেগেছে পঞ্চাশ কেজির মতো।
প্রতিমাশিল্পীরা জানান, এই মণ্ডপে দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুর, মহিষাসুরসহ ১৮টি প্রতিমা তৈরির জন্য প্রথমে কাঠ, বাঁশ, পাট ও বিচালির ফ্রেম বা কাঠামো তৈরি করা হয়। পরে তাতে মাটি দিয়ে প্রতিমার আকৃতি আনা হয়।
সেগুলো শুকিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে মাটি নরম থাকতে প্রতিমা জুড়ে ধান বসিয়ে দেয়া হয়েছে। ধান এমনভাবে বসানো হয়েছে যাতে দেখলে মনে হবে প্রতিমাগুলো সোনায় মোড়ানো। এগুলো শুকিয়ে যাওয়ার পর প্রতিমায় রং স্প্রে করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারই প্রথম এই অঞ্চলে ধান দিয়ে মোড়ানো প্রতিমা দৃশ্যমান হলো ব্যাপারটি তা নয়, এর আগে শ্যামনগর উপজেলার আড়পাঙাশিয়া পূজামণ্ডপে এধরনের ধানের তৈরি দুর্গা প্রতিমা গড়ে তোলা হয় কিন্তু তা এতো আলোচনায় আসেনি।
সোমবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা একটি পত্রিকায় ‘বিদেশের পুজো’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে পুজোর মধ্যে বিশেষ নজর কেড়েছে সাতক্ষীরার কলারোয়ার উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়ায় বিশেষ প্রজাতির সুগন্ধি চিনিকানি ধানের তৈরি দুর্গাপ্রতিমা। প্রতিবেদনে প্রতিমাটির ভূয়সী প্রশংসাও করা হয়।
কলারোয়া উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সন্দিপ রায় জানান, ‘আগামী শুক্রবার দেবী দুর্গার বোধন ও ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে।
এবার উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ৪৮টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদ্যাপিত হবে। সবচেয়ে বেশি মণ্ডপ রয়েছে উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নে। সেখানে নয়টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে। আর পৌরসভায় রয়েছে আটটি মণ্ডপ।
তিনি আরো জানান, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি সুসম্পন্ন হয়েছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ উৎসব মুখর পরিবেশে উপজেলাব্যাপী দুর্গাপূজা সম্পন্ন হবে বলে আশা করেন তিনি।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট সোমনাথ ব্যানার্জী জানান, এ বছর জেলা জুড়ে ৫০৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এবার গত বছরের তুলনায় নয়টি মণ্ডপ বেশি নির্মাণ করা হয়েছে।