হার না মানা জ্যোতি হতে চান আবহাওয়াবিদ

যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভার অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল কাদের এবং রেক্সোনা হোসেন দম্পতির বড় মেয়ে জ্যোতির জন্ম ২০০২ সালে।

বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2022, 06:41 AM
Updated : 1 Nov 2022, 06:41 AM

পাঁচ বছর বয়সে দুর্ঘটনায় শরীর অবশ হয়ে যাওয়ার পর থেকে হুইল চেয়ারেই জীবন কাটছে যশোরের জ্যোতি হোসেনের। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে একটা সময় কোনো স্কুলও ভর্তি নিতে চায়নি। এরপর জীবন যুদ্ধে এগোতে এসেছে অনেকে বাধা; কিন্তু শরীরের অক্ষমতা দমাতে পারেনি তার মনের শক্তিকে।

আবহাওয়াবিদ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে জ্যোতি পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অর্জন করেছেন জিপিএ ফাইভ। মেধাবী এ শিক্ষার্থী এবার বসবেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়। যেহেতু তিনি লিখতে পারেন না, তাই 'শ্রুতি লেখক' হিসেবে ছোট বোন জেবা তার কথাগুলো খাতায় লিখে দেবেন।

ঝিকরগাছা শহীদ মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আগামী ৬ নভেম্বর এইচএসসি পরীক্ষায় বসার কথা রয়েছে ২০ বছর বয়সী এ তরুণীর।

শহীদ মশিউর রহমান কলেজের ইংরেজির প্রভাষক নাজমুল হাসান বলেন, “জ্যোতি অত্যান্ত মেধাবী মেয়ে। তার মুখস্থ করার ক্ষমতা খুব বেশি। তিনি শুধু মাত্র মুখ দিয়ে কথা বলতে পারেন। তাই 'শ্রুতি লেখক' হিসেবে তার ছোট বোন জেবা সেই কথাগুলো খাতায় লিখে দেওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

“এভাবেই পরীক্ষার অংশ নিয়ে জ্যোতি এর আগে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন। এবারও তার ফলাফল সন্তোষজনক হবে বলে আশা করছি।”

যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পারবাজারের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল কাদের এবং রেক্সোনা হোসেন দম্পতির বড় মেয়ে জ্যোতির জন্ম ২০০২ সালে। বাকি শিশুদের মতই তার জীবন স্বাভাবিকভাবে চললেও ওলট-পালট হয় ২০০৭ সালের একটি দুর্ঘটনায়।

আব্দুল কাদের জানান, জ্যোতির যখন পাঁচ বছর, একদিন নানাবাড়ি থেকে বাড়ি থেকে ফেরার পথে ভ্যানের চাকার সঙ্গে ওড়না জড়িয়ে গলায় ফাঁস লেগে যায়। এ সময় ভ্যান থেকে পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডের আঘাত পেলে পুরো শরীর অবশ হয়ে যায়। তখন থেকেই হুইল চেয়ারই মেয়ের ভরসা।

তিনি বলেন, “শত চেষ্টা করেও চিকিৎসকরা আমার মেয়েকে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। আমরা ঢাকা, কলকাতা, মাদ্রাজ ও ভেলোরের চিকিৎসকদের কাছেও গেছি। সবাই চেষ্টা করেছে, কিন্তু কেউ কোনো আশা দিতে পারেনি।"

জ্যোতির মা রেক্সোনা হোসেন বলেন, “আমার মেয়ে ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী। অসুস্থ হওয়ার পরও সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছে। তাই তাকে আমরা পারবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করি। ওই স্কুল থেকে ২০১৪ সালে প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পায় সে।

“এরপর ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির সময় আমরা বেকায়দায় পড়ে যাই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কোনো স্কুলে তাকে ভর্তি নিতে চায়নি। অবশেষে বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করি। প্রতিদিন হুইলচেয়ার ঠেলে তাকে আমি স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা করতাম।”

ওই স্কুল থেকে ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর জ্যোতি শহীদ মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয় বলে জানান রেক্সোনা।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে জ্যোতি বলেন, “একটি দুর্ঘটনা আমার জীবনের সকল সুখ কেড়ে নিয়েছে। তারপরও আমি সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চাইনি। আমি পড়াশোনা করে আবহাওয়াবিদ হতে চাই। এইচএসসি পাশ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আশা আছে।”